কোলেস্টেরল টেস্ট। Cholesterol Test.
কোলেস্টেরল টেস্ট। Cholesterol Test.
হার্টের রোগ Heart Disease থেকে বাঁচতে হলে নিয়মিত হার্টের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা প্রয়োজন। রক্তের কোলেস্টেরল পরীক্ষা Blood for Cholesterol Test করে হার্টের স্বাস্থ্য সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা পাওয়া যেতে পারে। একজন সাধারণ ব্যক্তি হিসেবেও কোলেস্টেরল টেস্ট সম্পর্কে আমাদের অবশ্যই জানা প্রয়োজন। কারণ এর ফলে আমরা হার্টের রোগ রোধের দিকে আমরা বেশ কিছুটা এগিয়ে যেতে পারি।
কোলেস্টেরল কি? What is Cholesterol Test?
কোলেস্টেরল হলও তেল বা চর্বি জাতীয় পদার্থ যা আমাদের দেহের সকল কোষের মধ্যে উপস্থিত থাকে। সুস্থ থাকার জন্য আমাদের দেহের সকল অঙ্গে সকল কোষের কিছু পরিমাণ কোলেস্টেরল অবশ্যই প্রয়োজন। দেহকে সুস্থ রাখার জন্য প্রয়োজনীয় কোলেস্টেরল লিভার অর্থাৎ যকৃতে উৎপাদিত হয়। আমরা খাদ্য থেকে বিশেষ করে মাংস ডিম দুগ্ধজাত পদার্থ ইত্যাদি থেকে কোলেস্টেরল গ্রহণ করি। যে সকল খাদ্যে বেশি পরিমাণে চর্বি জাতীয় পদার্থ থাকে সেখান থেকেও আমাদের লিভার অর্থাৎ যকৃত কোলেস্টেরল উৎপাদন করে। আমাদের বৃদ্ধি বিকাশ প্রজনন ও হরমোন উৎপাদনের জন্য কোলেস্টেরল খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
কোলেস্টেরল প্রধানত দু ধরনের। এল ডি এল (LDL) কোলেস্টেরল অর্থাৎ লো ডেনসিটি লাইপো প্রোটিন এবং এইচ ডি এল (H D L) কোলেস্টেরল অর্থাৎ হাই ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন। এল ডি এল কে সাধারণত ব্যাড কোলেস্টেরল বা খারাপ কোলেস্টেরল বলা হয়। এইচডিএল কে সাধারণত গুড কোলেস্টেরল বা ভালো কোলেস্টেরল বলা হয়। কোলেস্টেরল পরীক্ষার মাধ্যমে এই দুই ধরনের কোলেস্টেরল, দেহের মধ্যে কতটা আছে, কি মাত্রায় আছে, সেটা দেখা হয়। দেহের মধ্যে উপস্থিত অন্যান্য ফ্যাট জাতীয় পদার্থ অর্থাৎ চর্বি জাতীয় পদার্থ সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা পাওয়া যায় এই পরীক্ষার সাহায্যে। রক্তে অতিরিক্ত এল ডি এল অর্থাৎ লো ডেনসিটি লাইপেপ্রোটিন উপস্থিত থাকলে হার্টের রোগের সম্ভাবনা অনেকটা বৃদ্ধি পায়। মাত্রা অতিরিক্ত এল ডি এল রক্তনালীর পথ সংকীর্ণ করে তোলে। এর ফলে হার্টের মধ্যে রক্ত প্রবাহ কমে গিয়ে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। মস্তিষ্কের মধ্যে রক্তের প্রবাহ বন্ধ হলে স্ট্রোক হতে পারে।
এইচ ডি এল কে ভালো কোলেস্টেরল বলা হয়, কারণ এটি রক্তনালীর কোমলতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। এল ডি এল অর্থাৎ লো ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিনকে কোন স্থানে জমা হতে বাধা দেয় এইচ ডি এল। ফলে রক্তের প্রবাহ স্বাভাবিক থাকে। কোলেস্টেরলের পরিমাণ সামান্য কম থাকা ভালো। তবে অতিরিক্ত কম থাকলেও স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হতে পারে। অতিরিক্ত কম কোলেস্টেরল, কী সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, সেটা নিয়ে এখনও গবেষণা চলছে। তবে মনে করা হয় যে, কম কোলেস্টেরল থাকলে ক্যানসার, রক্ত কণিকা নষ্ট হয়ে যাওয়া, স্ট্রোক, দুশ্চিন্তা, সময়ের আগে সন্তানের প্রসব হয়ে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। মনে রাখতে হবে স্বাভাবিক কোলেস্টেরলের মাত্রা আমাদেরকে স্বাস্থ্যবান ও সুন্দর করে তোলে।
কখন কোলেস্টেরল টেস্ট করা দরকার? When to get tested Cholesterol?
স্বাস্থ্য সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা পাওয়ার জন্য কোলেস্টেরল টেস্ট করা হয়। যাদের হার্টের রোগের কোন সম্ভাবনা নাই, অর্থাৎ পরিবারের কারোও বংশগতভাবে হার্টের রোগ নাই, তাদের চার বছর অন্তর কোলেস্টেরল টেস্ট করা উচিত। যাদের হার্টের রোগের সম্ভাবনা আছে বা পরিবারে কারো হার্টের রোগ হয়েছে, তাদের প্রতি বছর এই টেস্ট করা উচিত। এছাড়া যারা ধূমপান করেন, যাদের ওজন বেশি, যারা অতিরিক্ত ফার্স্ট ফুড এবং জাঙ্ক ফুড খান, হাঁটাচলা ব্যায়াম ইত্যাদি যারা করেন না, তাদের মাঝে মাঝে কোলেস্টেরল টেস্ট করা উচিত।
45 বছর বয়সের বেশি বয়সের পুরুষদের, 55 বছরের বেশি বয়সের মহিলাদের কোলেস্টেরল টেস্ট করে স্বাস্থ্য সম্পর্কে জেনে নেওয়া উচিত। উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের অর্থাৎ হাই ব্লাড প্রেসার থাকা রোগীদের, ডায়াবেটিস আছে এমন রোগীদের যাদের একবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে বা হার্টের রোগের কোন লক্ষণ দেখা গিয়েছে তাদের, অতি অবশ্যই বছরে দুই থেকে তিনবার কোলেস্টেরল টেস্ট করা উচিত।
শিশু ও যুবকদের ক্ষেত্রেও কোলেস্টেরল টেস্ট গুরুত্বপূর্ণ। শিশু ও যুবকদের 9 থেকে 11 বছর বয়সের মধ্যে একবার ও 17 থেকে 21 বছর বয়সের মধ্যে একবার কোলেস্টেরল টেস্ট করা দরকার। যে সকল যুবকদের ওজন বেশি অর্থাৎ যারা একটু মোটা, যাদের বডি মাস ইনডেক্স 85 পারসেনটাইলের বেশি তাদের, প্রতি দুই বছর অন্তর অতি অবশ্যই কোলেস্টেরল টেস্ট করা উচিত।
যারা ওজন কমানোর জন্য চিকিৎসা করাচ্ছেন, যারা ব্যায়াম করে বা খাদ্য তালিকা নিয়ন্ত্রণ করে ওজন কমাচ্ছেন, তাদের ক্ষেত্রেও চিকিৎসা শুরু করার 4 থেকে 12 সপ্তাহ পর কোলেস্টেরল টেস্ট করা অবশ্য প্রয়োজন।
কোলেস্টেরল টেস্টের জন্য রক্তের নমুনা সংগ্রহ। Collection of Blood Sample for Cholesterol Test.
সাধারণত হাতের শিরা থেকে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। আঙুলের সূচ বিদ্ধ করে, মাত্র এক ফোঁটা রক্ত দিয়েও, পোর্টেবল টেস্টিং যন্ত্রের সাহায্যে কোলেস্টেরল টেস্ট করা যেতে পারে। ল্যাবরেটরিতে টেস্ট করা বেশি ভালো। পোর্টেবল যন্ত্রে পরীক্ষার ফলাফলের মান সঠিক নাও হতে পারে। এই মান নির্ভরযোগ্য নয়। এই পরীক্ষা করার সময় রোগীর কোন বিপদের সম্ভাবনা নেই। সূচ-বিদ্ধ করা স্থানে সামান্য ব্যথা হতে পারে বা হেমাটোমা হতে পারে।
কোলেস্টেরল টেস্টের প্রস্তুতি। Preparation before testing Cholesterol.
রক্ত দেওয়ার আগে সাধারণত 9 থেকে 12 ঘণ্টা কোন খাদ্য গ্রহণ করা চলে না বা পানীয় গ্রহণ করা উচিত নয়। তবে জল পান স্বাভাবিক রাখতে হবে। কখনো কখনো আপনার ডাক্তার খাদ্য গ্রহণ করার পরও কোলেস্টেরল টেস্ট করার কথা বলতে পারেন। সেক্ষেত্রে সম্পূর্ণভাবে ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলুন।
পরীক্ষার ফলাফলের ব্যাখ্যা। Cholesterol Test Report.
কোলেস্টেরলের মাত্রা স্বাভাবিক থাকলে বলা যায় যে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের সম্ভাবনা কম। কোলেস্টেরল টেস্ট, লিপিড প্রোফাইল পরীক্ষার একটি অংশ। এই পরীক্ষার সাহায্যে, হার্টের স্বাস্থ্য, রক্তনালীর স্বাস্থ্য ও রোগ সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা পাওয়া যায়। রক্তে কোলেস্টেরলের স্বাভাবিক মাত্রা বয়স অনুসারে পরিবর্তনশীল। পূর্ণবয়স্ক মহিলা ও পুরুষদের ক্ষেত্রে সাধারণত তিনটি গ্রুপে বা শ্রেণীতে ভাগ করে পরীক্ষার ফলাফল বিচার করা হয়।
কাম্য অর্থাৎ বাঞ্ছনীয় মাত্রা। Normal Level of Cholesterol in Blood.
রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা 200 মিলিগ্রাম প্রতি ডেসিলিটার অর্থাৎ 5.18 মিলি-মোল প্রতি লিটার এর কম থাকা ভালো। এক্ষেত্রে হার্টের রোগ হওয়ার সম্ভাবনা কম বলে মনে করা হয়।
বর্ডার লাইন হাই। Border line high.
রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা 200 থেকে 239 মিলিগ্রাম প্রতি ডেসিলিটার অর্থাৎ 5.18 থেকে 6.18 মিলি-মোল প্রতি লিটার থাকলে, তুলনামূলক-ভাবে মাঝারি মানের শারীরিক অবস্থাকে বোঝায়। এক্ষেত্রে আরও কিছু টেস্ট করার প্রয়োজন পড়ে। তারপর সিদ্ধান্ত নিতে হয়। হার্টের রক্ত নালীর রোগ হওয়ার সম্ভাবনা কতটা আছে এবং চিকিৎসার প্রয়োজন আছে কিনা, সেটা আপনার ডাক্তার সব দিক বিচার করে সিদ্ধান্ত নেবেন। এক্ষেত্রে জীবনযাত্রার মান উন্নত করলে অর্থাৎ ব্যায়াম হাঁটাচলা ইত্যাদির সাহায্যে এই মাত্রাকে স্বাভাবিক করা যেতে পারে।
হাই রিস্ক উচ্চমাত্রা এবং বিপদজনক মাত্রা। High Risk Levels of Cholesterol
রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা 240 মিলিগ্রাম অর্থাত 6.22 মিলি-মোল প্রতি লিটারের বেশি হলে, রোগীর হার্টের রোগের সম্ভাবনা বেশি বলে মনে করা হয়। এক্ষেত্রে লিপিড প্রোফাইলের সব কটি টেস্ট করা প্রয়োজন। টেস্ট রিপোর্ট থেকে রোগী কতটা বিপদ জনক অবস্থায় অবস্থান করছেন, সেটা বোঝা যায়। কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধির কারণ জানা গেলে চিকিৎসা শুরু করতে হয়। জীবন যাত্রার পরিবর্তন এবং ওষুধ খাওয়া দুটোই শুরু করতে হয়।
শিশু ও কিশোরদের জন্য কোলেস্টেরলের স্বাভাবিক মাত্রা। Normal Cholesterol Levels for Children and Adolescents
170 মিলিগ্রাম প্রতি ডেসিলিটার অর্থাৎ 4.40 মিলে-মোল প্রতি লিটার এর কম হলে ভালো।
170 মিলিগ্রাম প্রতি ডেসিলিটার অর্থাৎ 4.40 মিলি-মাল প্রতি লিটারের থেকে 199 মিলিগ্রাম প্রতি ডেসিলিটার অর্থাৎ 5.16 মিলি-মোল প্রতি লিটারের মধ্যে হলে, বর্ডার লাইন বা মাঝারি বলে মনে করা হয়। 200 মিলিগ্রাম প্রতি ডেসি লিটার অর্থাৎ 5.17 মিলি-মোল প্রতি লিটারের থেকে বেশি হলে, কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি আছে বলে মনে করা হয়।
যুবকদের ক্ষেত্রে কোলেস্টেরলের স্বাভাবিক মাত্রা। Normal cholesterol levels in young adults.
190 মিলিগ্রাম প্রতি ডেসিলিটার অর্থাৎ 4.92 মিলি-মোল প্রতি লিটার থেকে কম হলে ভালো হয়। 190 মিলিগ্রাম প্রতি ডেসিলিটার অর্থাৎ 4.92 মিলি-মোল প্রতি লিটার থেকে 224 মিলিগ্রাম প্রতি ডেসিলিটার অর্থাৎ 5.80 মিলি-মোল প্রতি লিটার মধ্যে হলে, মাঝারি মানের কোলেস্টেরল উপস্থিত বলে মনে করা হয়। 225 মিলিগ্রাম অর্থাৎ 5.82 মিলি-মোল প্রতি লিটারের বেশি হলে, কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি আছে বলে মনে করা হয়।
মন্তব্য Remarks
সুস্থ থাকা অবস্থায় কোলেস্টেরল পরিমাপ করা উচিত। খুব অসুস্থ অবস্থায়, হার্ট অ্যাটাকের পর, কোন অপারেশন বা আঘাত পাওয়ার পর কোলেস্টেরল টেস্ট করা উচিত নয়। এক্ষেত্রে কম করে ছয় সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে এবং তারপর টেস্ট করতে হবে। রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা স্বাভাবিকের থেকে কম থাকলে, সেটা ভালো না খারাপ এটা বিতর্কের বিষয়। অপুষ্টি, লিভারের রোগ অর্থাৎ যকৃতের রোগ, ক্যানসার ইত্যাদিতে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা 100 মিলিগ্রাম প্রতি ডেস লিটার 2.59 মিলি-মোল প্রতি লিটারের কম হতে পারে। যদিও কোলেস্টেরল কম থাকার কারণে এই রোগ গুলি হয় না। গর্ভবতী মায়েদের কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি হয়। এ কারণে সন্তানের জন্ম দেওয়ার কম করে ছয় সপ্তাহ পর কোলেস্টেরল পরীক্ষা করা উচিত। কিছু ওষুধ আছে যেমন স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ, বিটা ব্লকার, এপিনেফরিন, জন্মনিয়ন্ত্রণের পিল এবং ভিটামিন ডি, ইত্যাদি সেবন করলে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পায়।