অল্পতেই ঠাণ্ডা লাগে? বেশি ঠাণ্ডা লাগার কারণ: Cold vs Allergy: Symptoms and Treatment
অ্যালার্জি জনিত ঠাণ্ডা লাগা ও সাধারণ ঠাণ্ডা লাগার রোগ লক্ষণগুলি প্রায় এক। কিন্তু বারে বারে ঠাণ্ডা লাগলে সেটা সাধারণ ঠাণ্ডা লাগা নাও হতে পারে। অ্যালার্জির কারণে এই ধরনের সমস্যা হতে পারে। এই প্রতিবেদনে সাধারণ ঠাণ্ডা লাগা ও অ্যালার্জি জনিত ঠাণ্ডা লাগার, রোগ লক্ষণ ও চিকিৎসা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
সাধারণ ঠাণ্ডা লাগা এবং অ্যালার্জির কারণে ঠাণ্ডা লাগা, উভয়ের ক্ষেত্রে সর্দি, হাঁচি, কাশি, নাক বন্ধ হওয়া ইত্যাদি রোগ লক্ষণ দেখা যায়। কিন্তু এই দুই ধরনের ঠাণ্ডা লাগার কারণ আলাদা। ভাইরাসের সংক্রমণের ফলে সাধারণ ঠাণ্ডা লাগা দেখা যায়। আর অ্যালার্জেন অর্থাৎ পরাগ রেণু, ধুলো, প্রাণীর লোম, খুশকি ইত্যাদি থেকে অ্যালার্জি জনিত ঠাণ্ডা লাগে।
সাধারণ ঠাণ্ডা লাগা কী? What is Cold?
সর্দি বা সাধারণ ঠাণ্ডা লাগা হল একটি সংক্রামক ভাইরাস ঘটিত রোগ। এটি প্রধানত আমাদের শ্বাসযন্ত্র অর্থাৎ ফুসফুসকে প্রভাবিত করে। বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া সর্দি বা ঠাণ্ডা লাগার রোগ, সৃষ্টি করতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি বা কাশি থেকে বাতাসের মাধ্যমে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ে।
সাধারণ ঠাণ্ডা লাগার লক্ষণ: Symptoms of a Common Cold:
সাধারণ ঠাণ্ডা লাগার রোগীদের হাঁচি, কাশি, নাক দিয়ে সর্দি ঝরা, ইত্যাদি দেখা যায়। সংক্রমণের তীব্রতা বেশি হলে স্বল্প জর হতে পারে এবং গলা ব্যথা, শরীর ব্যথা ইত্যাদি হতে পারে।
সাধারণ ঠাণ্ডা লাগা জনিত জটিলতা: Complication from Common Cold:
এই সাধারণ ঠাণ্ডা লাগার সমস্যা অনেক সময় জটিলতার সৃষ্টি করতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে সংক্রমণ থাকলে, দীর্ঘমেয়াদি কাশি হতে পারে ও কফ নির্গত হতে পারে। কানের সংক্রমণ, সাইনোসাইটিস, ব্রংকাইটিস ইত্যাদি হতে পারে। এছাড়া হাঁপানি অর্থাৎ অ্যাসমার সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
অ্যালার্জি কী? What is Allergies?
ধুলো, মাইট, পোষ্য প্রাণীর লোম, ছত্রাক, পরাগ রেণু ইত্যাদির বিরুদ্ধে আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার অতি সক্রিয়তা হল অ্যালার্জি। অ্যালার্জি কোন সংক্রামক রোগ নয়। আমাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা, স্বাভাবিক কাজ করলে তেমন কোন সমস্যা হয় না। কিন্তু রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা অতি সক্রিয় হয়ে অতিরিক্ত হিস্টামিন জাতীয় পদার্থ ক্ষরণ করলে, দেহে অ্যালার্জির সমস্যা সৃষ্টি হয়।
অ্যালার্জির লক্ষণ: Symptoms of an Allergy:
অ্যালার্জির রোগ লক্ষণগুলি সাধারণ ঠাণ্ডা লাগা থেকে সামান্য আলাদা। অ্যালার্জি জনিত ঠাণ্ডা লাগার ক্ষেত্রে; নাক বন্ধ হয়ে যায়, হাঁচি, কাশি ইত্যাদি দেখা যায়। এছাড়া চোখ চুলকায়, চোখে জল চলে আসে এবং নাক দিয়ে জল ঝরে।
সাধারণ ঠাণ্ডা লাগা ও অ্যালার্জি জনিত ঠাণ্ডা লাগার পার্থক্য: Cold vs Allergies:
সাধারণ ঠাণ্ডা লাগা ও অ্যালার্জির জনিত ঠাণ্ডা লাগার লক্ষণ গুলি প্রায় এক। এক্ষেত্রে ঠাণ্ডা লাগা ও অ্যালার্জির মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করতে কয়েকটি বিষয়ের দিকে নজর দিতে হবে।
সাধারণ ঠাণ্ডা লাগা বা সর্দির চেয়ে অ্যালার্জির সমস্যা বেশি সময় ধরে থাকে। রোগ লক্ষণ গুলি দুই সপ্তাহের মধ্যে সেরে না গেলে এটা সাধারণ ঠাণ্ডা লাগা নয়, এটা অ্যালার্জি জনিত সমস্যা হতে পারে।
শ্লেষ্মার প্রকৃতি দেখেও কিছুটা ধারণা পাওয়া যায়। অ্যালার্জির কারণে শ্লেষ্মা নির্গত হলে সেটা পরিষ্কার হয়। এছাড়া সর্দিতে নাক বন্ধ হয়ে যায়, হাঁচি কাশির সাথে চুলকানিও দেখা যায়।
অন্যান্য বেশ কিছু উপসর্গ আছে যা কেবলমাত্র অ্যালার্জির ক্ষেত্রে দেখা যায় যেমন ত্বকে চুলকানি, ত্বকে জলযুক্ত ফুসকুড়ি ইত্যাদি একমাত্র অ্যালার্জি হলেই দেখা যায়।
সাধারণ ঠাণ্ডা লাগার বিশেষ লক্ষণ হল প্রচণ্ড জ্বর হওয়া। বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে এই উপসর্গ বেশি দেখা যায়। এছাড়া সর্দি-কাশির সাথে গলা ব্যথা হতে পারে সাধারণ ঠাণ্ডা লাগার ক্ষেত্রে।
সাধারণ ঠাণ্ডা লাগা চিকিৎসা: Treatment of Cold:
সাধারণ সর্দি কাশির তেমন কোন প্রতিকার নেই। ঠাণ্ডা লাগলে, সর্দি কাশি হলে প্রচুর পরিমাণ বিশ্রাম নিতে হবে এবং পর্যাপ্ত জল পান করতে হবে। ঘরোয়া চিকিৎসা হিসাবে মধু সেবন করা যেতে পারে। বন্ধ নাক খোলার জন্য নাকে স্যালাইন প্রয়োগ করতে হবে। শারীরের ব্যথা ও অস্বস্তি দূর করার জন্য আইবুপ্রোফেন বা অ্যাসিটামিনোফেন অর্থাৎ প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে। রোগের তীব্রতা বেশি হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করাতে হবে।
অ্যালার্জি জনিত ঠাণ্ডা লাগার চিকিৎসা: Treatment of an Allergy:
অ্যালার্জি থেকে সমস্যা হচ্ছে কিনা জানার জন্য অ্যালার্জি টেস্ট করতে হবে। বন্ধ নাক খোলার জন্য নাকে স্যালাইন প্রয়োগ করতে হবে বা নেজাল স্প্রে ব্যবহার করতে হবে। জীবনযাত্রার পরিবর্তন করা দরকার। অ্যালার্জেন অর্থাৎ অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী পদার্থ থেকে দূরে থাকতে হবে। ইমিউন সিস্টেম ভাল রাখতে সুষম খাদ্য, প্রোবায়োটিক ও মাছের তেল গ্রহণ করতে হবে।
রোগের তীব্রতা বেশি হলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। আণ্টিহিস্টামাইন জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করলে অ্যালার্জির সমস্যা কমে। এছাড়া স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ অ্যালার্জির জটিলতা কমাতে সাহায্য করে। দীর্ঘমেয়াদি অ্যালার্জির সমস্যা দূর করতে ইমিউনোথেরাপি নেওয়া ভাল। ইমিউনোথেরাপিতে বেশ ভাল ফল পাওয়া যায়।