রক্তের ডিফারেন্সিয়াল কাউন্ট D C Blood Test (Differential Blood Count)
রক্তের ডিফারেন্সিয়াল কাউন্ট Blood for D C Test (Differential Blood Count)
রক্তের ডিফারেন্সিয়াল কাউন্ট বলতে কী বোঝায়? What is Blood for Differential Blood Count Test?
এই পরীক্ষার সাহায্যে বিভিন্ন ধরনের শ্বেত রক্ত কণিকা, রক্তে কত শতাংশ উপস্থিত আছে, সেটা বোঝা যায়। এছাড়া, রক্তের মধ্যে কোন অ্যাবনরমাল অর্থাৎ অস্বাভাবিক অথবা অপরিণত রক্ত কণিকা আছে কিনা সেটাও জানা যায়। শ্বেত রক্তকণিকা (WBC) আমাদের শরীরের ইমিউনিটি অর্থাৎ রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলে এবং বাইরের জীবাণুর হাত থেকে আমাদের শরীরকে রক্ষা করে। ডিসি পরীক্ষার মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের শ্বেত রক্তকণিকা কত শতাংশ উপস্থিত আছে, সেটা জেনে কোন ধরনের রোগ আক্রমণ করেছে সেটা বোঝা সহজ হয়।
কেন এই পরীক্ষা করা হয়? Why Differential Blood Count Test Done?
আমাদের দেহের স্বাস্থ্য সম্পর্কে প্রাথমিক ধারনা পেতে এই টেস্ট করা প্রয়োজন তবে কোনও প্রদাহ অর্থাৎ ইনফেকশন, এলার্জিক রিয়াকশন, ব্যথা, যন্ত্রণা, ফুলে ওঠা, ইত্যাদি কিছু সাধারণ সমস্যার ক্ষেত্রেও এই টেস্ট করা প্রয়োজন। এছাড়া কিছু জটিল রোগ যেমন লিওকেমিয়া, ইত্যাদির ক্ষেত্রেও এই টেস্ট করা হয়। কোনও অসুস্থ রোগীর চিকিৎসা করার সময়, চিকিৎসায় রোগীর কতটা উন্নতি হয়েছে, সেটা বোঝার জন্য এই টেস্ট করার প্রয়োজন হয়।
রক্তে নমুনা সংগ্রহ Collection of Blood for D C Test.
সাধারণত হাতের শিরা থেকে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। বহুতে একটি রাবার ব্র্যান্ড বাঁধা হয় এবং সিরিঞ্জের সাহায্যে রক্ত সংগ্রহ করা হয়। তবে আঙুলের সূচি-বিদ্ধ করেও রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা যেতে পারে। এই পরীক্ষার জন্য মাত্র একফোঁটা রক্তই যথেষ্ট।
ডিসি পরীক্ষার আগে প্রস্তুতি।
সাধারণত খালি পেটে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। কিছু ওষুধ যেমন স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ, ঘুমের ওষুধ এবং অ্যান্টাসিড, এই পরীক্ষার ফলাফলকে প্রভাবিত করতে পারে। তাই রক্ত দেওয়ার আগে প্রায় দশ ঘণ্টা এই ওষুধগুলি না গ্রহণ করাই ভালো। জল ছাড়া অন্য কোন পানীয় গ্রহণ করা উচিত নয়।
পরীক্ষার ফলাফলের ব্যাখ্যা D C Test Report.
প্রধানত 5 ধরনের শ্বেত রক্ত কণিকার সংখ্যা বা শতাংশ এই পরীক্ষার মাধ্যমে বোঝা যায়।
মনোসাইট:
মনোসাইটের স্বাভাবিক মাত্রা হলও দুই থেকে দশ শতাংশ। মনোসাইটের সংখ্যা বৃদ্ধিকে মনোসাইটোসিস বলা হয়। প্রদাহ যুক্ত কোলাইটিস, অটোইমিউন রোগ, লিউপাস, ব্যাকটেরিয়ার ইনফেকশন, ভাইরাল ইনফেকশন, প্যারাসাইট অর্থাৎ কৃমি, ম্যালেরিয়া রোগের জীবাণু, ইত্যাদির আক্রমণে মনোসাইটের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। এছাড়া বেশ কিছু ধরনের ব্লাড ক্যান্সার রোগে মনোসাইটের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।
লিম্ফোসাইট:
লিম্ফোসাইটের স্বাভাবিক মাত্রা বা নরমাল রেঞ্জ হল 20 থেকে 45 শতাংশ। লিম্ফোসাইটের সংখ্যা বৃদ্ধিকে লিম্ফোসাইটোসিস বলা হয়। লিম্ফোসাইটোসিস হতে পারে, ভাইরাল ইনফেকশন হল, এলার্জিক রিয়াকশন হলে, জন্ডিস হলে,ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ হলে এবং কিছু ধরনের ব্লাড ক্যান্সারে।
নিউট্রোফিল:
নিউট্রোফিলের স্বাভাবিক মাত্রা হল 40 থেকে 75 শতাংশ। নিট্রোফিলের সংখ্যা বৃদ্ধিকে, নিউট্রোফিলিয়া বলা হয়। দেহে জীবাণুর আক্রমণে হলে, কোন আঘাত লাগলে, কিছু ধরনের ব্লাড ক্যান্সারে, দীর্ঘ সময় ধরে কোন স্থান ফুলে থাকলে যেমন আর্থাইটিস হলে অর্থাৎ বাত হলে, কিছু ওষুধ যেমন স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ, ইনহেলার, লিথিয়াম ইত্যাদি সেবন করলে নিউট্রোফিলের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। এছাড়া ধূমপান করলে, মানসিক চিন্তা থাকলে, শারীরিকভাবে বেশি পরিশ্রম করলে, আঘাত লাগলে,এছাড়া কোন অপারেশন করলে অর্থাৎ সার্জিক্যাল অপারেশন এর কারনেও নিউট্রোফিলের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।
ইয়োসিনোফিল:
ইয়োসিনোফিলের নরমাল রেঞ্জ হল, 01 থেকে 06 শতাংশ। ইয়োসিনোফিলের সংখ্যা বৃদ্ধিকে ইয়োসিনাফিলিয়া বলা হয়। পরজীবী অর্থাৎ কৃমির আক্রমণে ইয়োসিনোফিলের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। আবার এলার্জি হলেও ইয়োসিনোফিলের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। এছাড়া ত্বকের ইনফেকশন এবং কিছু ধরনের ক্যান্সারেও ইয়েসিনোফিলের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।
বেসোফিল:
বেসোফিলের স্বাভাবিক মাত্রা বা নরমাল রেঞ্জ হল 01 শতাংশ বা তার কম। বেসোফিলের সংখ্যা বৃদ্ধিকে বেসোফিলিয়া বলে। শরীরে ইনফেকশন হলে, এলার্জিক রিয়াকশন হলে, বেসেফিলের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। কিছু বিশেষ ধরনের ক্যান্সারেও বেসোফিলের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।
এছাড়া ডিসি পরীক্ষায় রক্তে উপস্থিত অস্বাভাবিক শ্বেত রক্তকণিকা এবং লোহিত রক্ত কণিকা সম্পর্কেও তথ্য দেওয়া থাকে। কোন পরজীবী উপস্থিত থাকলেও উল্লেখ করা থাকে।
মন্তব্য Remarks
পরীক্ষার ফলাফল বিচার করার সময় মনে রাখতে হবে যে, ডিসি পরীক্ষাতে শতাংশের হারে শ্বেত রক্ত কণিকার সংখ্যা বলা থাকে। অর্থাৎ সকল শ্বেত রক্ত কণিকার মোট পরিমাণ কে একশ শতাংশ ধরা হয়। কোন একটি শ্বেত রক্ত কণিকার সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে অন্য শ্বেত রক্ত কণিকার সংখ্যা কম বলে মনে হয়। এছাড়া খেয়াল রাখতে হবে যে, পরীক্ষায় প্রাপ্ত ফলাফল 100% সঠিক হয় না। কারণ, পরীক্ষা করার সময় কিছু যান্ত্রিক ত্রুটি থাকে।
বিভিন্ন রোগে শ্বেত রক্তকণিকার সংখ্যা শুধু বৃদ্ধি পায় এমন নয়। কিছু ক্ষেত্রে শ্বেত রক্ত কণিকার সংখ্যা কমে যেতে পারে। যেমন লিভারের রোগ, মজ্জার রোগ, অটোইমিউন রোড ইত্যাদি। আবার বিশেষ ধরনের কিছু ওষুধ গ্রহণ করলে, কেমোথেরাপি করলে, অথবা রেডিয়েশন থেরাপি নিলে এবং ভিটামিনের অভাব হলে শ্বেত রক্ত কণিকার সংখ্যা কমে যেতে পারে ।