রক্ত পরীক্ষা Blood Testল্যাব টেস্ট Lab Test

ডিহাইড্রোএপিঅ্যানড্রোস্টেরণ (DHEA) সালফেট টেস্ট: DHEA(Dehydroepiandrosterone) Sulfate Test:

ডিহাইড্রোএপিঅ্যানড্রোস্টেরণ সংক্ষেপে DHEA সালফেট হল, এমন একটি পুরুষ হরমোন যা পুরুষ ও মহিলা উভয়ের দেহে উপস্থিত থাকে। বয়:সন্ধিকালে পুরুষদের গৌণ যৌন বৈশিষ্ট্যগুলির বিকাশে এই হরমোনের ভূমিকা রয়েছে। এছাড়া ডিহাইড্রোএপিঅ্যানড্রোস্টেরণ (DHEA) সালফেট পরিবর্তিত হয়ে, পুরুষ হরমোন যেমন, টেস্টোস্টেরণ এবং মহিলা হরমোন যেমন ইস্ট্রোজেন ইত্যাদিতে পরিণত হতে পারে।

এই প্রতিবেদনে, ডিহাইড্রোএপিঅ্যানড্রোস্টেরণ সালফেট পরীক্ষার উদ্দেশ্য, পদ্ধতি ও ফলাফল নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

ডিহাইড্রোএপিঅ্যানড্রোস্টেরণ সালফেট হরমোন কিডনির উপর অবস্থিত অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি থেকে উৎপন্ন হয়। পুরুষের দেহে টেস্টোস্টেরণ হরমোন এবং মহিলাদের দেহে ইস্ট্রোজেন হরমোনের উৎপাদনে সাহায্য করে এই হরমোন। DHEA সালফেট টেস্ট করে অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি ভালোভাবে কাজ করছে কিনা সেটা বোঝা যায়। মহিলাদের দেহে অতিরিক্ত লোম দেখা গেলে বা পুরুষ সুলভ বৈশিষ্ট্য দেখা গেলে এই টেস্ট করা প্রয়োজন। শিশুদের মধ্যে কম বয়সে বয়ঃসন্ধি দেখা গেলে বা গৌণ যৌন বৈশিষ্ট্য গুলি প্রকাশ পেলে এই টেস্ট করা দরকার।

ডিহাইড্রোএপিঅ্যানড্রোস্টেরণ সালফেটের মাত্রা বেশি থাকলে, প্রাপ্তবয়স্কদের দেহে তেমন কোন লক্ষণ দেখা নাও যেতে পারে। কিন্তু বালকদের দেহে অকাল বয়:সন্ধি দেখা যেতে পারে। মহিলাদের দেহে অত্যধিক লোম দেখা যায়, চুল পড়া, তীব্র ব্রণ, বন্ধ্যত্ব ইত্যাদি দেখা যায়। এছাড়া মেনস্ট্রাল পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যেতে পারে এবং যৌন চাহিদা হ্রাস পায়।

ডিহাইড্রোএপিঅ্যানড্রোস্টেরণ সালফেটের মাত্রা কম থাকলে পুরুষ ও মহিলা উভয়ের ক্ষেত্রে যৌন চাহিদা কমে যায়। এছাড়া মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব, ওজন কমে যাওয়া, দেহে জলের অভাব ইত্যাদি সমস্যা দেখা যেতে পারে।

সাধারণত হাতের শিরা থেকে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। বাহুতে একটি রাবার ব্যান্ড বাধা হয়, ফলে হাতের শিরা ফুলে ওঠে। এবার অ্যান্টিসেপটিক লোশন দ্বারা সুচ-বিদ্ধ করার স্থানটি জীবাণুমুক্ত করা হয়। এরপর সূচ বিদ্ধ করে সিরিঞ্জের সাহায্যে অল্প পরিমাণ রক্ত সংগ্রহ করা হয়। রক্ত সংগ্রহ করার পর ক্ষতস্থানটি একটি ছোট ব্যান্ডেজ দ্বারা ঢেকে দেওয়া হয়।

ডিহাইড্রোএপিঅ্যানড্রোস্টেরণ সালফেট পরীক্ষার জন্য বিশেষ কোন প্রস্তুতির প্রয়োজন পড়ে না। খালি পেটে বা ভর্তি পেটে রক্তের নমুনা দেওয়া যেতে পারে। একজন নার্স বা ল্যাব টেকনিশিয়ান রক্ত সংগ্রহ করেন। রক্ত সংগ্রহের সময় তেমন কোন বিপদের সম্ভাবনা নেই। সূচ বিদ্ধ করা স্থানে সামান্য ব্যথা হতে পারে। কী কী ওষুধ সেবন করেছেন সেটা সম্পর্কে ল্যাবরেটরিতে ও আপনার ডাক্তারকে বিস্তারিত জানান। ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থাকলে সেটাও জানান। রক্তের নমুনা দেওয়ার আগে ধূমপান করা উচিত নয়।

DHEA সালফেট টেস্টের স্বাভাবিক মাত্রা বয়স ও লিঙ্গ অনুসারে পরিবর্তনশীল। ল্যাবরেটরিতে ব্যবহৃত পরীক্ষা পদ্ধতিতে অনুসারে পরীক্ষার ফলাফল সামান্য আলাদা হতে পারে। আর একারণে রিপোর্ট লেখা নরমাল লেভেল মেনে চলা সব থেকে ভাল। DHEA সালফেট টেস্টের নরমাল লেভেলের তালিকা, নীচে দেওয়া হল।

জন্মগত অ্যাড্রিনাল হাইপারপ্লাসিয়া নামক বংশগত রোগে, অ্যাড্রিনাল গ্রন্থিতে টিউমার বা ক্যান্সার হলেও  DHEA সালফেটের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। এছাড়া মহিলাদের ক্ষেত্রে পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম নামক রোগে DHEA সালফেটের মাত্রা বেশি হয়।

অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি রোগাক্রান্ত হলে বা অ্যাডিশনের রোগ হলেDHEA সালফেটের মাত্রা কম হয়। পিটুইটারি গ্রন্থি স্বাভাবিক কাজ না করলেও অ্যাড্রিনাল গ্রন্থির কার্যকারিতা হ্রাস পায় ও DHEA সালফেটের উৎপাদন কমে যায়। এছাড়া বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে, পুরুষ ও মহিলা উভয়ের ক্ষেত্রেই DHEA সালফেটের মাত্রা হ্রাস পায়।

গর্ভাবস্থায় রক্তে DHEA সালফেটের মাত্রা বেড়ে যায়; কারণ প্লাসেন্টা থেকেও DHEA সালফেট উৎপাদিত হয়। ভ্রূণের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার জন্য অনেক সময় অন্যান্য টেস্টের সাথে DHEA সালফেট টেস্ট করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক মাত্রা:

  • Negative Pregnancy Adult: 48 to 252* mg/dL or 1.3 to 6.8* µmol/L
  • Pregnancy Trimester One: 74 to 611 mg/dL or 2 to 16.5 µmol/L
  • Pregnancy Trimester Two: 33 to 289 mg/dL or 0.9 to 7.8 µmol/L
  • Pregnancy Trimester Three: 30 to 241 mg/dL or 0.8 to 6.5 µmol/L