চুল পড়া বন্ধ করে এমন দশটি খাবার: Losing Hair? Eat These 10 Foods to Prevent Hair Fall
চুল পড়া বন্ধ করে এমন দশটি খাবার: Losing Hair? Eat These 10 Foods to Prevent Hair Fall:
প্রতিদিন কিছু পরিমাণ চুল পড়া স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু দিনে 100 টির বেশি চুল পড়লে সেটা নিয়ে ভাবনা চিন্তা করা প্রয়োজন। বিভিন্ন কারণে চুল পড়তে পারে। হরমোনের সমস্যা, চুলের গোড়ায় ইনফেকশন, মানসিক চাপ, অটোইমিউন রোগ ইত্যাদি কারণে চুল পড়তে পারে। তবে পুষ্টির অভাব হলেও চুল পড়তে পারে। চুলের স্বাস্থ্য রক্ষায় খাদ্যের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রতিবেদনে চুল পড়া বন্ধ করে এমন দশটি খাবার নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
চুল পরা বন্ধ করার বিভিন্ন উপায় ও পদ্ধতি আছে। আর এগুলির মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হল পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ। আমরা যা খাই, তা সরাসরি আমাদের চুলের স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে। কিছু খাদ্য আছে, যা চুলের জন্য বেশি পুষ্টিকর। খাদ্যগুলি নিয়ে আলোচনা করা হল।
পালং শাক: Spinach:
চুল পড়া বন্ধ করতে এবং চুলের পূর্ণগঠনের জন্য পালং শাক খুব ভালো একটা খাবার। পালং শাকের মধ্যে আয়রন, ভিটামিন A, ভিটামিন C এবং প্রোটিন আছে। চুল পড়ার অন্যতম প্রধান কারণ হল আয়রনের অভাব। পালং শাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রনের থাকে যা সিবাম উৎপাদনে সাহায্য করে। মাথার ত্বকে থাকা সিবাম, চুলের প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসাবে কাজ করে। এছাড়া আছে ওমেগা 3 ফ্যাটি অ্যাসিড, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম ইত্যাদি। এগুলি ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এবং চুল উজ্জ্বল রাখতে সাহায্য করে।
ডিম: Egg:
ডিম প্রোটিন ও বায়োটিন নামক ভিটামিনের দারুণ উৎস। প্রোটিন ও বায়োটিন চুলের শক্তি বাড়ায়। চুলের কেরাটিন তৈরি করতে প্রোটিন ও বায়োটিনের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। একারণে ডিম খেলে চুলের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে। এছাড়া ডিমে রয়েছে আয়রন, যা দেহে হিমোগ্লোবিন উৎপাদনে সাহায্য করে। রক্তে উপস্থিত হিমোগ্লোবিন দেহের বিভিন্ন অংশে এবং চুলের গোরায় অক্সিজেন পরিবহন করে। ফলে চুলের গোড়া শক্ত হয় ও চুল পুষ্টি লাভ করে। ডিমে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন A, B, E এবং K আছে, যা চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। সব মিলিয়ে চুল পড়া রোধ করতে ডিম খুব উপকারী।
গাজর Carrot:
গাজরে আছে ভিটা ক্যারোটিন। এই বিটা ক্যারোটিন থেকে ভিটামিন A উৎপাদিত হয়। ভিটামিন A মাথার ত্বকে সিবাম উৎপাদনে সাহায্য করে যা আমাদের চুলের ফলিকলগুলিকে সুস্থ রাখে। ভিটামিন A চুলের ফলিকলের মধ্যে চুলের বৃদ্ধিতে উদ্দীপনা যোগায়, ফলে চুল ঘন ও পুষ্ট হয়। ভিটামিন A শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবে কাজ করে এবং প্রদাহ উপশম করতে সাহায্য করে। এছাড়া মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে ভিটামিন A। তাই চুল পড়া বন্ধ করতে খাদ্য তালিকায় গাজরকে স্থান দিতে হবে।
বাদাম ও বীজ: Nuts and Seeds:
বাদাম এবং বীজের মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন B, E এবং জিঙ্ক, সেলেনিয়াম ইত্যাদি খনিজ উপাদান থাকে। এছাড়া দেহের জন্য প্রয়োজনীয় ফ্যাটি অ্যাসিডগুলি পাওয়া যায় বাদাম ও বীজের মধ্যে। এই সকল উপাদানগুলি চুলের পুষ্টি যোগায় এবং চুলকে মজবুত ও দীর্ঘ করে তোলে। চুল ঝরে যাওয়া ভেঙে যাওয়া রোধ করে এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। বাদামে ফাইটোস্টেরল (Phytosterol) নামক জৈব যৌগ থাকে, যা ডিহাইড্রোটেস্টোস্টেরণ (Dihydrotestosterone) নামক হরমোনের ক্ষরণে বাধা দিয়ে, পুরুষদের টাকের বিরুদ্ধে লড়াই করে। আখরোট এবং অন্যান্য কিছু বাদামে থাকা তেল, চুলে ইলাস্টিনের পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে। ইলাস্টিন চুলকে নমনীয় করে তোলে।
সামুদ্রিক মাছ: Sea Fish:
সাধারণত সামুদ্রিক মাছে বেশি পরিমাণে ওমেগা 3 ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। এই ওমেগা 3 ফাটি অ্যাসিড চুলের ফলিকলগুলির স্বাস্থ্য ভাল রাখে এবং চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। সামুদ্রিক মাছে উপস্থিত ফ্যাটি অ্যাসিড মাথা ত্বকের প্রদাহ দূর করতেও সাহায্য করে। এছাড়া সামুদ্রিক মাছে ভিটামিন ডি থাকে, যা চুলের ফলিকল কে উদ্দীপিত করে চুলের বৃদ্ধি ঘটায়।
দুগ্ধজাত পণ্য: Dairy Products:
চুলের বৃদ্ধির জন্য ক্যালসিয়াম অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি খনিজ উপাদান। দুগ্ধজাত পণ্যের মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। এছাড়া দুগ্ধজাত পণ্যের মধ্যে থাকে প্রোটিন, ওমেগা 3 ফ্যাট অ্যাসিড, জিঙ্ক ইত্যাদি। এগুলি চুলের বৃদ্ধির জন্য ও চুল পড়া বন্ধ করতে খুবই উপকারী।
মাংস: Meat:
প্রোটিনের সবথেকে ভাল উৎস হল মাংস। মাংসের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে। রেডমিটের মধ্যে আয়রনের পরিমাণ যথেষ্ট বেশি থাকে। শরীর পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রনের পেলে, হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় যা অক্সিজেন পরিবহনের সাহায্য করে। চুলের গোড়ায় অক্সিজেনের সরবরাহ বৃদ্ধি পেলে চুল পরা বন্ধ হয় এবং নতুন চুল গজাতে শুরু করে।
মিষ্টি আলু: Sweet Potato:
মিষ্টি আলু ভিটামিন A সমৃদ্ধ, যা চুলের বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভিটামিন A চুলের ঘনত্ব বৃদ্ধি করে ও চুলকে শক্তপোক্ত করে, ফলে চুল সহজে ঝরে যায় না বা ভেঙ্গে যায় না। এছাড়া মাথার ত্বকে সিবাম উৎপাদনে উদ্দিপনা দেয় করে ভিটামিন A। সিবাম চুলের প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজারের কাজ করে। মিষ্টি আলুতে থাকা ভিটামিন, আইরন, প্রোটিন ইত্যাদি ত্বকের মধ্যে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে প্রদাহ কমায় এবং চুলকে পুষ্টি যোগায়।
রাজমা: Rajma:
রাজমা হল প্রোটিন ও ফলটের খুব ভালো উৎস। প্রোটিন ও ফলেট চুলের বৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য। এছাড়া রাজমার মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। যাদের চুল পাতলা হয়ে গিয়েছে, তাদের জন্য রাজমা একটি সুপার ফুড। কারণ রাজমা চুলের ঘনত্ব বৃদ্ধি করে। একারণে খাদ্য তালিকা রাজমাকে স্থান দেওয়া প্রয়োজন।
ওটস: Oats:
ওটস এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ফাইবারের সাথে সাথে আয়রন, জিঙ্ক, ওমেগা 6 ফ্যাটি অ্যাসিড ইত্যাদি পুষ্টিকর উপাদান রয়েছে। ওটস এর মধ্যে থাকা পলি আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড, ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ। সকালের জলখাবারে মাঝেমধ্যে ওটস খাওয়া যেতে পারে। এটি চুলের প্রয়োজনীয় পুষ্টিতে সাহায্য করে ।
চুল পড়া একটি অতি সাধারণ ও কষ্টদায়ক সমস্যা। এটি আমাদের শরীর ও মনকে সামগ্রিকভাবে প্রভাবিত করে। একারণে প্রাথমিক পর্যায়ে চুল পড়ার সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। অস্বাভাবিক রকমের চুল পড়া লক্ষ্য করলে সঠিক রোগ নির্ণয় করার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। বেশ কিছু পরীক্ষানিরীক্ষা করার প্রয়োজন হতে পারে।