Healthy Lifestyle স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রাখাদ্য ও পানীয় Food & Drinksরোগ ও ব্যাধি Health Condition

হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা কমায় এই খাবার গুলি: 12 Food that reduce your Heart Attack risk:

হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা কমায় এই খাবার গুলি: 12 Food that reduce your Heart Attack risk:

বর্তমানে হার্ট অ্যাটাক ও হার্টের রোগ, দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। করোনারি হার্ট ডিজিজ হল এমন একটি সমস্যা যেখানে, হার্টে রক্ত সরবরাহকারী ধমনীর ভিতরে চর্বি জমে যায়। এর ফলে রক্ত প্রবাহ বাধা পায় ও হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। হার্টের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে উচ্চ রক্তচাপ, রক্তের উচ্চ কোলেস্টেরল ও রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণের সাথে সাথে, স্বাস্থ্যকর খাদ্য তালিকা অনুসরণ করা দরকার।

এই প্রতিবেদনে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা কমায় এমন খাদ্য নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

এখানে পরপর 12টি খাদ্য নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। গবেষণার দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে, এই খাদ্য গুলি হার্টের জন্য উপকারী। এখানে উল্লেখ করা কিছু খাদ্য সরাসরি হার্টের উপকার করে। আবার কিছু খাদ্য, পরোক্ষভাবে কোলেস্টেরল কম করে বা হার্টের রোগের অন্য কোন কারণ হ্রাস করে, হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।

ডার্ক চকলেটের অন্যতম উপাদান হল ফ্লেভনল। ফ্লেভনল হল শক্তিশালী আণ্টি ইনফ্লামেটরি ও অ্যাণ্টি অক্সিডেণ্ট। দেহে নাইট্রিক অক্সাইড এর মাত্রা বৃদ্ধি করে ফ্লেভনল। এর ফলে রক্তনালী গুলি প্রসারিত হয় ও রক্তচাপ কমে। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, কোকো; কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখতে এবং হৃদরোগের সম্ভাবনা কমাতে সাহায্য করে। সপ্তাহে প্রায় 45 গ্রাম ডার্ক চকলেট গ্রহণ করলে, হৃদরোগের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্য ভাবে হ্রাস পায়।

টমেটো, হৃদরোগ প্রতিরোধ যথেষ্ট সাহায্য করতে পারে। টমেটোতে থাকে লাইকোপিন যা একটি শক্তিশালী অ্যাণ্টি অক্সিডেন্ট। লাইকোপিন কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া রক্ত জমাট বাঁধতে বাধা দেয় লাইকোপিন। গবেষণা দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে, টমেটো LDH অর্থাৎ খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া টমেটো, রক্তে নাইট্রেটের মাত্রা বৃদ্ধি করে রক্তনালী গুলিকে সচল করে তোলে।

অত্যধিক অ্যালকোহল পান স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। তবে অল্প পরিমাণ রেড ওয়াইন, হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। রেড ওয়াইনে থাকে রেসভেরাট্রল এবং ক্যাটেকিনস নামক অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। একারণে রেড ওয়াইন, ধমনীর দেয়াল রক্ষা করতে এবং HDL অর্থাৎ ভাল কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে। দিনে এক পেগ রেড ওয়াইন পান করা হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।

গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, বেদানা রক্তচাপ কমায় এবং কোলেস্টেরলের মাত্রাও কমায়। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, বেদানা খারাপ কলেস্টেরলে LDL এর মাত্রা কমায় কিন্তু HDL অর্থাৎ ভাল কোলেস্টেরলের মাত্রা একই থাকে।  সিস্টোলিক রক্তচাপ কমাতেও সাহায্য করে বেদনা। তবে কম করে এক কাপ বেদানা রস পান করলে এই উপকার পাওয়া যায়। অবশ্য ডায়াবেটিসের রোগীদের বেদানার রস পান করা উচিত নয়, কারণ এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে চিনি থাকে।

অ্যাণ্টি অক্সিডেণ্ট হল এমন একটি জৈব রাসায়নিক পদার্থ যা কোষের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান গুলির ক্ষতি রোধ করে। আখরোটে পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যাণ্টি অক্সিডেণ্ট থাকে যা হার্টের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়। নিয়মিত আখরোট খেলে দেহে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমে।

সামুদ্রিক মাছ যেমন ইলিশ, ভোলা, ভেটকি, পমফ্রেট, টুনা ইত্যাদির মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে ওমেগা 3 ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। এই ধরনের পলি আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট, রক্তচাপ কমায় এবং ধমনীর দেয়ালে অতিরিক্ত চর্বি জমতে বাধা দেয়। এছাড়া ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কমিয়ে হার্ট সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। ওমেগা 3 ফ্যাটি অ্যাসিড, অনিয়মিত হৃৎস্পন্দনের সমস্যা কমিয়ে আনে। হৃৎপিণ্ড সুস্থ রাখতে সপ্তাহে কয়েকবার সামুদ্রিক মাছ খাওয়া উচিত।

সাধারণ আলুর বদলে মিষ্টি আলু খাওয়া বেশি ভাল। মিষ্টি আলুর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম অর্থাৎ মিষ্টি আলু রক্তের সুগারের মাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি করে না। এছাড়া মিষ্টি আলুতে ফাইবার, ভিটামিন এবং লাইকোপিন থাকে যা হার্টের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে সাহায্য করে।

সকালের জলখাবারে কমলা লেবুর রস খাওয়া হার্টের জন্য বেশ ভাল। কমলা লেবুতে থাকে ফ্লেভনয়েড, যা ভাল কোলেস্টেরল HDL এর মাত্রা বৃদ্ধি করে এবং LDL অর্থাৎ খারাপ কলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, কমলালেবুর রস রক্তচাপ কমিয়ে দিতে পারে। এছাড়া কমলা লেবুতে থাকে অপরিহার্য তেল ও পেকটিন, যা আমাদের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।

বেরি জাতীয় ফল যেমন জাম, আমলকী, কুল, আঙ্গুর, স্ট্রবেরি ইত্যাদি ফল হার্টের জন্য খুব উপকারী। বেরিতে উপস্থিত অ্যান্থোসায়ানিন নামক জৈব রাসায়নিক পদার্থ, হার্টের স্বাস্থ্য ভাল রাখে। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, সপ্তাহে তিন দিন, আধ কাপ, বেরি জাতীয় ফল খেলে, হৃদ রোগের সম্ভাবনা কমে।

প্রতিদিন নিয়মিত দুই থেকে তিন চামচ করে তিসি বীজের গুঁড়ো খেলে হার্ট ভাল থাকে। তিসি বীজের মধ্যে থাকে ওমেগা 3 ফ্যাটি অ্যাসিড, যা দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ কমায় ও হার্ট সুস্থ রাখে। তিসি বীজ, কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে এবং  রক্তচাপ কমাতে খুবই কার্যকরী। এছাড়া তিসি বীজ দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

ওটসকে দীর্ঘদিন ধরে হার্টের স্বাস্থ্য রক্ষাকারী খাবার বলে বিবেচনা করা হয়। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, ওটসের মধ্যে বিটা গ্লুকান নামক একটি যৌগ আছে, যা HDL অর্থাৎ ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি করে। বিটা গ্লুকান, হার্টের ধমনীতে চর্বি জমতে দেয় না, ফলে রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক থাকে। এছাড়া প্রতিদিন ওটস গ্রহণ করলে LDL অর্থাৎ খারাপ কলেস্টেরলের মাত্রা কমে।

দই এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে প্রোবায়োটিক অর্থাৎ উপকারী ব্যাকটেরিয়া থাকে। প্রোবায়োটিক আমাদের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রোবায়োটিক হজমে সাহায্য করার পাশাপাশি এমন অ্যাসিড তৈরি করে, যা কোলেস্টেরল উৎপাদনে বাধা দেয়। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, প্রতিদিন দই গ্রহণ করলে কোলেস্টেরলের মাত্রা উল্লেখযোগ্য মাত্রায় হ্রাস পায়, ফলে হৃদ রোগের সম্ভাবনা কমে।