ডায়াবেটিসে যে পাঁচটি ফল খাওয়া বারণ: Fruits To Avoid In Diabetes
ডায়াবেটিসে যে পাঁচটি ফল খাওয়া বারণ: Fruits To Avoid In Diabetes
প্রচলিত ধারণা অনুসারে ডায়াবেটিসের রোগীদের ফল না খাওয়ার কথা বলা হয়। কিন্তু ফলের মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার, ভিটামিন, খনিজ উপাদান ও অ্যাণ্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের খাদ্য তালিকায় অবশ্যই ফল অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। তবে যেকোনো ধরনের ফল বা ফলজাত খাদ্য খাওয়া চলবে না। বেশ কিছু ফল বা ফলজাত পণ্য, রক্তে সুগারের মাত্রা বৃদ্ধি করতে পারে। ডায়াবেটিসে, যে ফলগুলি খাওয়া বারণ, সেগুলি নিয়ে আলোচনা করা হল এই প্রতিবেদনে।
বেশি মিষ্টি ফল: Fruits high in Sugar:
সব ফল একই রকম চিনি বা সুগার থাকে না। কোন কোন ফলে সুগারের পরিমাণ বেশি থাকে। যে সকল ফলে চিনির পরিমাণ বেশি থাকে, সেইসব ফল না খাওয়া ভালো। উচ্চ চিনিযুক্ত ফলগুলি হল গুলি হল:-
তরমুজ: Watermelon:
তরমুজের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক সুগার থাকে। ডায়াবেটিসের রোগীরা অল্প পরিমাণে তরমুজ খেতে পারেন। তবে মাত্রা অতিরিক্ত তরমুজ খাওয়া একেবারেই উচিত নয়। তরমুজের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স বেশি অর্থাৎ তরমুজ খাওয়ার অল্প সময়ের মধ্যে রক্তে সুগারের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। ডায়াবেটিসের রোগীরা এক টুকরো তরমুজ অবশ্যই খেতে পারেন, কিন্তু তরমুজের জুস একেবারেই চলবে না।
অত্যধিক পাকা কলা: Overly ripe banana:
ডায়াবেটিসের রোগীদের পাকা কলা না খাওয়াই উচিত। পাকা কলার মধ্যে উচ্চমাত্রায় কার্বোহাইড্রেট ও সুগার থাকে। একটি কলায় প্রায় 27 গ্রাম চিনি থাকে যা একটি ক্যান্ডিতে থাকা চিনির থেকেও বেশি। একারণে ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য সবচেয়ে খারাপ ফল গুলির মধ্যে একটি হল পাকা কলা। গবেষণা দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে, কলা, টাইপ II ডায়াবেটিসের সমস্যা বাড়িয়ে দেয়। এছাড়া কলা বেশি খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে, যা ডায়াবেটিসের রোগীদের অন্যতম আর একটি সমস্যা।
আনারস: Pineapple:
আনারস রসের মধ্যে চিনি ও কার্বোহাইড্রেট এর মাত্রা বেশি থাকে। একটি আনারসে প্রায় 46 গ্রাম চিনি এবং 96 গ্রাম কার্বোহাইড্রেট থাকে। কোল্ড ড্রিংকসে থাকা চিনির থেকেও বেশি চিনি থাকে আনারসে। একারণে ডায়াবেটিসের সমস্যা থাকলে আনারস খাওয়া উচিত নয়। আনারসের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স বেশি হওয়ার কারণে এটি খুব তাড়াতাড়ি রক্তে সুগারের মাত্রা বৃদ্ধি করে।
লিচু: Lychees:
ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য লিচু অন্যতম খারাপ একটি ফল। লিচুর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে শর্করা আছে এবং লিচুর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স বেশি। অর্থাৎ লিচু খুব তাড়াতাড়ি রক্তে সুগারের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ডায়াবেটিসের রোগীদের লিচু থেকে দূরে থাকা উচিত।
উচ্চ কার্বোহাইড্রেট যুক্ত ফল: Fruits high in Carbohydrates:
কার্বোহাইড্রেট একটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান যা আমাদের সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাদ্য রক্তে শর্করার মাত্রার উপর প্রভাব ফেলে। ফলের মধ্যে প্রয়োজনে ভিটামিন, খনিজ উপাদান ও ফাইবার থাকে। তাই ফল অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু ফল গ্রহণ করার সময়, ফলে কার্বোহাইড্রেটের মাত্রার দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। উচ্চ কার্বোহাইড্রেট যুক্ত যেসকল ফল কম গ্রহণ করতে হবে সেগুলি হল:-
আম: Mango:
ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য সবচেয়ে খারাপ ফল গুলির একটি হল আম। আমে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট ও শর্করা থাকে। আম ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য বিপদজনক হয়ে উঠতে পারে; কারণ আমে প্রায় 36 গ্রাম চিনি থাকে। এছাড়া আমি রয়েছে প্রায় 60 গ্রাম কার্বোহাইড্রেট। ফলের মধ্যে যে চিনি লুকিয়ে থাকতে পারে, এটা আমরা ভাবতেই পারিনা। একারণে ডায়াবেটিসের রোগীদের আম খাওয়া উচিত নয়।
আঙ্গুর: Grapes:
আঙ্গুরের মধ্যে মাঝারি মাত্রা কার্বোহাইড্রেট ও মাঝারি মাত্রায় চিনি থাকে। এ কারণে আঙ্গুর রক্তে সুগারের মাত্রা বৃদ্ধি করতে পারে। যেহেতু আঙ্গুরের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স মাঝারি অর্থাৎ রক্তের সুগারের মাত্রা বৃদ্ধি করে ধীরে ধীরে, তাই অল্প পরিমাণ আঙ্গুর খাওয়া যেতে পারে। তবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকলে আঙ্গুর খাওয়া উচিত নয়।
ফলের রস: Fruit juice:
গবেষণা দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে ফলের রস পান করলে খুব দ্রুত রক্তে সুগারের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। গোটা ফল খেলে এরকম সমস্যা হয় না, কারণ গোটা ফলে ফাইবার থাকে। ফলের রস হল শর্করার সহজলভ্য উৎস, যা দ্রুত রক্তে সুগারের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, গোটা ফল ডায়াবেটিসের সম্ভাবনা কমায়। এমনকি হার্টের রোগের সম্ভাবনাও কমায়। অতএব ডায়াবেটিসের রোগীদের ফলের রস থেকে দূরে থাকা উচিত।
শুকনো ফল: Dried fruits:
ডায়াবেটিসের রোগীরা শুকনো ফল অবশ্যই খেতে পারেন, কারণ শুকনো ফলে যথেষ্ট পরিমাণ পুষ্টি উপাদান থাকে। বাদাম জাতীয় শুকনো ফলে, ফ্যাট, ফাইবার ও প্রোটিন থাকে যা ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। কিন্তু সমস্যা হল, বেশ কিছু শুকনো ফলে চিনির ঘনত্ব বেশি থাকে। কিসমিস, খেজুর ইত্যাদি ফলে অতিরিক্ত মাত্রায় চিনি থাকার কারণে, এইসব শুকনো ফল খাওয়া উচিত নয়।
মন্তব্য: Remarks:
ফল আমাদের স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বেশিরভাগ তাজা গোটা ফলে অতিরিক্ত সুগার থাকে না, ফলে তেমন কোন জটিল সমস্যার সৃষ্টি হয় না। ফলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে যা অন্ত্রে চিনির শোষণে বাধা দেয়। তাই খাদ্য তালিকায় নির্বাচিত কিছু ফল অবশ্যই রাখতে হবে।