গনোরিয়া রোগ নির্ণয়: ব্যাকটেরিয়া কালচার, গ্রাম স্টেন এবং NAAT Gonorrhoea Diagnosis: Bacterial Culture, Gram Stain & NAAT
গনোরিয়া রোগ নির্ণয়: ব্যাকটেরিয়া কালচার, গ্রাম স্টেন এবং NAAT | Gonorrhoea Diagnosis: Bacterial Culture, Gram Stain & NAAT
গনোরিয়া হল অতি পরিচিত একটি যৌন রোগ। গনোরিয়া রোগ নির্ণয় করার জন্য বেশ কিছু পরীক্ষা পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। এই প্রতিবেদনে গনোরিয়া রোগ নির্ণয় করার প্রচলিত কয়েকটি পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা হল।
ব্যাকটেরিয়া কালচার: Bacterial Culture
যৌনাঙ্গ, মলদ্বার, চোখ বা গলার গনোরিয়া নির্ণয় করার জন্য ব্যাকটেরিয়া কালচার অত্যন্ত কার্যকরী একটি পদ্ধতি। আক্রান্ত স্থানের পুঁজ বা রস একটি কটন সোয়াবের সাহায্যে সংগ্রহ করে ল্যাবরেটরিতে ব্যাকটেরিয়া কালচার করা হয়। ব্যাকটেরিয়া কালচার পদ্ধতি ব্যবহার করে কৃত্রিম পরিবেশে ব্যাকটেরিয়ার পালন করা হয় এবং ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে ব্যাকটেরিয়া গুলি শনাক্ত করা হয়। কালচারে নাইজেরিয়া গনোরিয়া নামক ব্যাকটেরিয়া উপস্থিত থাকলে গনোরিয়া রোগ হয়েছে বলে এটা নিশ্চিতভাবে বলা যায়।
ব্যাকটেরিয়া কালচার পরীক্ষার সাহায্যে চিকিৎসা সংক্রান্ত আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়। কোন ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ ব্যবহার করলে গনোরিয়া রোগ সেরে যাবে এবং কোন ধরনের অ্যান্টিবায়োটিকে রোগ সারবে না সেটা বোঝা যায় ব্যাকটেরিয়া কালচার করলে। চিকিৎসা করার পরও গনোরিয়া না সারলে, কালচার পদ্ধতিতে সঠিক ওষুধের সন্ধান পাওয়া যায় এবং গনোরিয়ার সংক্রমণ দূর করা সম্ভব হয়।
ব্যাকটেরিয়া কালচার পদ্ধতিতে নিশ্চিতভাবে রোগ শনাক্ত করা সম্ভব তবে পুঁজ বা রসের নমুনা সঠিকভাবে সংগ্রহ করা জরুরী। এছাড়া নমুনাটির প্রক্রিয়াকরণ করার সময়ও যথেষ্ট যত্নশীল হতে হয়।
গ্রাম স্টেন: Gram Staining:
প্রধানত পুরুষদের মধ্যে গনোরিয়ার সংক্রমণ নির্ণয় করার জন্য এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। সাধারণত মূত্রনালি থেকে কটন সোয়াব দিয়ে নমুনা অর্থাৎ অর্থাৎ পুঁজ বা রস সংগ্রহ করা হয় এবং সকালে প্রথম ত্যাগ করা প্রস্রাব সংগ্রহ করা হয়। শুধুমাত্র প্রথম 20 থেকে 30 মিলি লিটার প্রস্রাব সংগ্রহ করা হয়। সকালে প্রথম প্রস্রাব সংগ্রহ করা সম্ভব না হলে কম করে এক ঘণ্টা প্রস্রাব বন্ধ রাখতে হয় এবং তারপর প্রস্রাব সংগ্রহ করা যেতে পারে।
সংগ্রহ করা নমুনাগুলিতে বিশেষ ধরনের রঞ্জক যোগ করা হয় ও মাইক্রোস্কোপের নিচে পর্যবেক্ষণ করা হয়। গ্রাম স্টেন হল এমন একটি পদ্ধতি যার সাহায্যে জীবাণুকে রং করে শনাক্ত করা হয়।
পরীক্ষার ফলাফল পজিটিভ বা নেগেটিভ হিসাবে প্রকাশ করা হয়। গনোরিয়া রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণু উপস্থিত থাকলে গ্রাম স্টেন রিপোর্ট পজিটিভ বলা হয়। রিপোর্ট নেগেটিভ হলে গনোরিয়া নেই এটা নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব নয়; কারণ অনেক সময় সঠিকভাবে নমুনা সংগ্রহ করা সম্ভব হয় না। এক্ষেত্রে অন্য কোন পরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে।
নিউক্লিক অ্যাসিড আম্প্লিফিকেশন টেস্ট: Nucleic Acid Amplification Test:
এই পরীক্ষা করার জন্য মূত্রনালি, যোনি বা জরায়ু থেকে একটি কটন সোয়াবের সাহায্যে ক্ষত স্থানের নমুনা অর্থাৎ পুঁজ বা রস সংগ্রহ করা হয়। এ ছাড়া মূত্রের নমুনাও ব্যবহার করা যেতে পারে। এবার নমুনার মধ্যে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়ার জেনেটিক উপাদানের অর্থাৎ DNA এর সংখ্যার বৃদ্ধি ঘটানো হয়। এর ফলে সহজেই জীবাণুটি শনাক্ত করা সম্ভব হয়। অতি অল্প পরিমাণ জীবাণু উপস্থিত থাকলেও এই পদ্ধতিতে রোগ সনাক্ত করা সম্ভব।
নিউক্লিক অ্যাসিড অ্যাম্প্লিফিকেশন টেস্ট প্রায় নির্ভুল রিপোর্ট দিতে পারে। তাই এই পদ্ধতি ব্যবহার করে গলা ও মলদ্বারের গনোরিয়া সনাক্ত করা হয়।
গনোরিয়া টেস্টের প্রস্তুতি: Preparation of Gonorrhoea Test:
গনোরিয়া পরীক্ষা করার আগে কোন অ্যাণ্টিবায়োটিক গ্রহণ করলে সেটা আপনার ডাক্তার ও ল্যাবরেটরিতে জানান। প্রস্রাবের নমুনা সংগ্রহ করার আগে কম করে এক থেকে দু ঘণ্টা প্রস্রাব বন্ধ রাখতে হবে। মহিলাদের ক্ষেত্রে আর একটু সতর্ক হতে হবে। নমুনা সংগ্রহ করার আগে যোনিতে কোন ক্রিম বা লোশন ব্যবহার করা চলবে না।
গনোরিয়া টেস্ট রিপোর্ট পজিটিভ হলে কী করা দরকার? What to do, if you test positive?
গনোরিয়া পরীক্ষার ফলাফল পজিটিভ হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে ও চিকিৎসা শুরু করতে হবে। এছাড়া সিফিলিস, HIV ও ক্ল্যামাইডিয়ার টেস্ট করতে হবে, কারণ একই সাথে একাধিক যৌন রোগ হতে পারে। যৌন মিলন বন্ধন রেখে, যৌন সঙ্গীরও গনোরিয়া টেস্ট করতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শ মেনে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করতে হবে ও চিকিৎসা সম্পূর্ণ করতে হবে। মাঝপথে চিকিৎসা বন্ধ করা চলবে না। তিন মাস পর আবার গনোরিয়া টেস্ট করা দরকার।