স্বাস্থ্য সচেতনতা

স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার গুরুত্ব।

   

দুধ পান করার সময় আমরা যে 6টি ভুল করি: দুধ পান করার সঠিক নিয়ম: 6 Common Mistake People Do While Drinking Milk and Their Solution:

দুধ হল ক্যালসিয়াম, ভিটামিন D এবং প্রোটিনের মত পুষ্টি উপাদানের দারুণ উৎস। দুধ আমাদের হাড় ও দাঁতের স্বাস্থ্য রক্ষা করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দুধ পানের ইতিহাস বেশ প্রাচীন। প্রায় 6000 বছর আগে মধ্য নিওলিথিক যুগ থেকে আমরা দুধ পান করে আসছি। তবে সবার ক্ষেত্রে গরুর দুধ আদর্শ নয়। বেশ কিছু ক্ষেত্রে দুধ পান করার ফলে হজমের সমস্যা, অ্যালার্জি ইত্যাদি জটিলতা দেখা যায়। এই সমস্যাগুলির প্রধান কারণ হল সঠিক নিয়ম মেনে দুধ না খাওয়া। দুধ পান করার সময় আমরা যে 6টি ভুল করি, সেগুলি নিয়ে আলোচনা করা হল এই প্রতিবেদনে। এছাড়া দুধ পান করার সঠিক নিয়ম নিয়েও আলোচনা করা হয়েছে। যাদের ল্যাক্টোজ ইনটলারেন্সের সমস্যা আছে, তারা কিভাবে এই সমস্যা থেকে রক্ষা পাবেন সেটাও জেনে নেব।

  

ফল খাওয়ার সঠিক সময় ও নিয়ম: The Right Way to Consume Fruits:

ফল হল প্রকৃতির অন্যতম সেরা উপহার। এটি ফাইবার এবং ক্যান্সার প্রতিরোধকারী অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ভাণ্ডার। ফল আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যের তালিকায় অবশ্যই থাকা উচিত। কিন্তু ফলগুলি সঠিক সময়ে সঠিক উপায়ে না খেলে এর থেকে সর্বাধিক পরিমাণ উপকার পাওয়া সম্ভব হয় না। প্রায় 90% মানুষের ফল খাওয়ার সঠিক নিয়ম ও উপায় সম্পর্কে তেমন কোন ধারণা নেই।

এই প্রতিবেদনে প্রথমে ফল খাওয়ার ছটি ভুল উপায় নিয়ে আলোচনা করা হল। সব শেষে আলোচনা করা হল ফল খাওয়ার সঠিক সময় ও নিয়ম সম্পর্কে।

ফল থেকে সর্বাধিক পরিমাণ পুষ্টি উপাদান পেতে হলে সঠিক নিয়মে ফল খাওয়া জরুরী। ভুল উপায়ে ফল গ্রহণ করলে বদহজম, ত্বকের অ্যালার্জি, চুল পড়া ইত্যাদি সমস্যার সূচনা হতে পারে। এছাড়া সঠিক নিয়মে ফল না খেলে দেহে ভিটামিন ও খনিজ উপাদানের অভাব হতে পারে।

   

ভিটামিন E সমৃদ্ধ খাবার এবং এর আশ্চর্যজনক উপকারিতা: Vitamin E Rich Food And It’s Amazing Benefits:

ভিটামিন E-র উপকারিতা: Benefits of Vitamin E:

ভিটামিন E হল ফ্যাটে দ্রবীভূত একপ্রকার ভিটামিন যা শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবে কাজ করে। ভিটামিন E শরীরকে ফ্রি র‍্যাডিকেলস এর হাত থেকে রক্ষা করে। পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন E গ্রহণ করলে আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এবং ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। এছাড়া হার্টের রোগের সম্ভাবনা কমায় ভিটামিন E। খাদ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন E থাকলে লিভারের স্বাস্থ্য ভাল থাকে ও ফ্যাটি লিভার রোগের সম্ভাবনা কমে।

চোখের প্রধান দুটি রোগ ছানি পরা এবং ম্যাককুলার ডিজেনারেশন (Macular Degeneration)। ভিটামিন E, চোখের রোগ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, ম্যাকুলার ট্রেস কমায় এবং চোখে ছানি পড়তে বাধা দেয়। আমাদের ভাবনা চিন্তার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ভিটামিন E। এছাড়া এই ভিটামিন মানসিক কার্যকলাপ ও মনে রাখার ক্ষমতা বৃদ্ধি করতেও বেশ উপকারী।

ভিটামিন E-র আর একটি উল্লেখযোগ্য কাজ হল ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষা করা। সূর্যের আলট্রা-ভায়োলেট আলো আমাদের ত্বকের ক্ষতি করে। এই ধরনের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পেতে ভিটামিন E যুক্ত সানস্ক্রিন লোশন ব্যবহার করা হয়। ত্বকের ক্ষত সারাতে ও ব্যথা উপশম করতে এই ভিটামিনের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।

   

চুল পড়া বন্ধ করে এমন দশটি খাবার: Losing Hair? Eat These 10 Foods to Prevent Hair Fall

চুল পড়া বন্ধ করে এমন দশটি খাবার: Losing Hair? Eat These 10 Foods to Prevent Hair Fall:

প্রতিদিন কিছু পরিমাণ চুল পড়া স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু দিনে 100 টির বেশি চুল পড়লে সেটা নিয়ে ভাবনা চিন্তা করা প্রয়োজন। বিভিন্ন কারণে চুল পড়তে পারে। হরমোনের সমস্যা, চুলের গোড়ায় ইনফেকশন, মানসিক চাপ, অটোইমিউন রোগ ইত্যাদি কারণে চুল পড়তে পারে। তবে পুষ্টির অভাব হলেও চুল পড়তে পারে। চুলের স্বাস্থ্য রক্ষায় খাদ্যের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রতিবেদনে চুল পড়া বন্ধ করে এমন দশটি খাবার নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

চুল পরা বন্ধ করার বিভিন্ন উপায় ও পদ্ধতি আছে। আর এগুলির মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হল পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ। আমরা যা খাই, তা সরাসরি আমাদের চুলের স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে। কিছু খাদ্য আছে, যা চুলের জন্য বেশি পুষ্টিকর। খাদ্যগুলি নিয়ে আলোচনা করা হল।

   

সিরাম আয়রন টেস্ট: Serum Iron Test:

রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়ার প্রধান কারণ হল দেহে আয়রন অর্থাৎ লোহার অভাব। শরীরে আয়রনের পরিমাণ স্বাভাবিক মাত্রা অপেক্ষা বেশি বা কম হলে জটিল সমস্যার সৃষ্টি হয়। আরও জানতে প্রতিবেদনটি পড়তে দেখতে থাকুন।

রক্তের প্রধান উপাদান হল রক্তরস এবং রক্তকণিকা। রক্তের মধ্যে থাকা রক্তকণিকা গুলি জমাট বাঁধলে যে হলদে তরল অবশিষ্ট থাকে তাকে সিরাম বলা হয়।

সিরাম আয়রন টেস্টের সাহায্যে; দেহের মধ্যে আয়রনের পরিমাণ কেমন আছে সেটা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। আয়রন একটি অত্যাবশ্যকীয় খনিজ উপাদান যা আমরা খাদ্যের মাধ্যমে গ্রহণ করি। লোহিত রক্ত কণিকায় উপস্থিত হিমোগ্লোবিন আমাদের দেহে অক্সিজেন পরিবহন করে। এই হিমোগ্লোবিনের প্রধান উপাদান হল আয়রন বা লোহা।

   

রক্তের ভিটামিন ডি পরীক্ষা ও স্বাভাবিক মাত্রা: Vitamin D Blood Test & Normal Range

আমাদের দাঁত ও হাড়ের সঠিক বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য ভিটামিন ডি একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। রক্তের মধ্যে প্রধানত দুটি রূপে ভিটামিন ডি পেতে পারি। ভিটামিন ডি এর কার্যকরী রূপের নাম 1, 25 ডিহাইড্রোক্সিভিটামিন ডি (1, 25 dihydroxyvitamin D)। এটি নিষ্ক্রিয় 25 হাইড্রোক্সিভিটামিন ডি (hydroxyvitamin D) থেকে উৎপন্ন হয়। শরীরে কতটা ভিটামিন ডি আছে, সেটা সম্পর্কে ধারনা পেতে, নিষ্ক্রিয় অবস্থায় থাকা ভিটামিন ডি, 25 হাইড্রোক্সিভিটামিন ডি পরিমাপ করা হয়।

আমাদের ত্বক সূর্যালোকের সাহায্যে ভিটামিন ডি উৎপন্ন করে। এছাড়া চর্বিযুক্ত মাছ, মাংস ও দুধ থেকে এবং বাঁধাকপি জাতীয় সবজি থেকে ভিটামিন ডি আমাদের শরীরে প্রবেশ করে।

স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার গুরুত্ব।

ভূমিকা:

আমরা প্রায় সকলেেই অর্থের পিছনে ছুটে বেড়ায়, কারণ অর্থ আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আমরা প্রকৃতঅর্থে মূল্যবান স্বাস্থ্যের কথা ভুলে যায়। স্বাস্থ্যই হল প্রকৃত সম্পদ। প্রতিদিনের ব্যাস্ত কর্ম সূচির মধ্যে স্বাস্থ্য অর্থাৎ হেলথ কে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

কেন স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা প্রয়োজন?

স্বাস্থ্যকর জীবনধারা বজায় রাখতে পারলে আমাদের শরীর ও ম সুস্থ থাকে এবং সমাজের সাথে, পরিবেশের সাথে সঠিক মেলবন্ধন রাখতে পারি। স্বাস্থ্যকর জীবন, আমাদের প্রতিদিনের জীবনযাত্রার বিভিন্ন দিককে অন্তর্ভুক্ত করে। এর মধ্যে আছে আমাদের খাদ্য, শারীরিক কার্যকলাপ, ঘুম, স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ। এছাড়া খারাপ অভ্যাস দূর করতেও এটা গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সুখ ও পরিপূর্ণ জীবনযাপনের মূল সুত্র লুকিয়ে আছে, স্বাস্থ্য রক্ষায় আমরা কতটা নজর দিচ্ছি তার উপর। তাই স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রাকে সর্বাপেক্ষা বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।

স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার সবচেয়ে বড় সুবিধা হল,  দীর্ঘস্থায়ী রোগ প্রতিরোধ। নিয়মিত ব্যায়াম করলে এবং সুষম খাদ্য গ্রহণ করলে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, স্থূলতা এবং নির্দিষ্ট ধরণের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে ফেলতে পারি। শারীরিক কসরত আমাদের কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমকে শক্তিশালী করে তোলে, রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়  এবং দেহের ওজন স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। আমাদের খাদ্য তালিকায় ফল, শাকসবজি, শস্য এবং চর্বিহীন প্রোটিন অন্তর্ভুক্ত করলে প্রয়োজনীয় পুষ্টি, ভিটামিন এবং খনিজ মৌল চাহিদা মেটে। ফলে ইমিউন সিস্টেমকে ভাল থাকে এবং দেহের সব অঙ্গ ভালভাবে কাজ করে।

মন ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা।

জীবনযাত্রা স্বাস্থ্যকর হলে আমাদের মানসিক সুস্থতার উপরও ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। নিয়মিত ব্যায়াম, হাঁটা, ছোটা, সাঁতার, প্রানায়ম ইত্যাদি করলে আমাদের মস্তিষ্কে এন্ডোরফিন নিঃসরণ হয়। এই এণ্ডোরফিনকে “ফিল-গুড” হরমোন অর্থাৎ ভাল লাগার অনুভূতিকারী হরমোন বলা হয়। এই হরমোন মানসিক, চাপ, উদ্বেগ এবং বিষণ্নতার লক্ষণগুলি কমাতে সাহায্য করে। যোগব্যায়াম, ধ্যান ইত্যাদি  মানসিক চিন্তাভাবনাকে স্বচ্ছ করে তোলে। মনোযোগ বাড়ায় এবং অভ্যন্তরীণ শান্তির অনুভূতিকে জাগিয়ে তোলে। নিয়মিত পর্যাপ্ত ও সামঞ্জস্যপূর্ণ ঘুম শরীরকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম দেয় এবং আমাদের শরীর ও মনকে পুনরুজ্জীবিত হয়। ফলে আমাদে সকল ঈন্দ্রীয় ভালভাবে কাজ করে যা উন্নত চিন্তাভাবনার জন্ম দেয় এবং মানসিক স্থিতি বজায় রাখে।

মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ:

স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ, স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্ররা আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। দীর্ঘস্থায়ী স্ট্রেস আমাদের শারীর ও মানের ক্ষতি করে। এর ফলে উচ্চ রক্তচাপ, দুর্বল ইমিউন সিস্টেম এবং বদমেজাজের মতো রোগের সৃষ্টি হয়। আমাদের দৈনন্দিন রুটিনে স্ট্রেস-কম করার কৌশলগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। শখে বজায় রাখতে হবে,  প্রিয়জনের সাথে সময় কাটাতে হবে, হালকা ব্যায়ামে করতে হবে। এভাবে আমরা কার্যকরভাবে মানসিকচাপের মাত্রা হ্রাস করতে পারি এবং আমাদের সামগ্রিক জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে পারি।

দীর্ঘায়ু লাভ:

দীর্ঘায়ু লাভ করা স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার গুরুত্বপূর্ণ দিক। বয়স বাড়ার সাথে সাথে স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার অভ্যাস অবশ্যই বাড়াতে হবে। স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গ্রহণ করে, আমরা বার্ধক্য জনিত রোগের সূচনাকে বিলম্বিত করতে পারি এবং দীর্ঘ সময়ের ধরে শারীরিক সক্ষমতা বজায় রাখতে পারি। নিয়মিত শারীরিক ক্রিয়াকলাপে যুক্ত থাকে, স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখে এবং পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করে আমরা বেশ ভাল থাকতে পারি। হাড়ের ঘনত্ব, পেশীর শক্তি এবং জয়েন্টের নমনীয়তা রক্ষা করতে পারি, যা আমাদের পরবর্তী বছরগুলিতে আরও বেশি ভাল থাকতে সাহায্য করে।

উপসংহারে:

স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা বলতে কয়েক দিন ভাল থাকা নয়, সারাজীবন ভাল থাকা বোঝায়। কেবল মাত্র স্থায়ীভাবে জীবনযাত্রার মান উন্নত করে ভাল থাকার ও সুস্থ থাকার আজীবন প্রক্রিয়া। এটি একটি সামগ্রিক পদ্ধতি যার মধ্যে আমাদের শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক স্বাস্থ্য অন্তর্ভুক্ত। নিয়মিত ব্যায়াম, সুষম খাদ্য গ্রহণ, পর্যাপ্ত বিশ্রাম, স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট এবং ক্ষতিকারক অভ্যাস থেকে দূরে থেকে, আমরা উন্নত শারীরিক সুস্থতা, মানসিক স্থিতিস্থাপকতা এবং দীর্ঘায়ু  পেতে পারি। তাই আসুন আমরা আজ সকলে সচেতন হই  যা একটি স্বাস্থ্যকর ও সুখী ভবিষ্যতের পথ প্রশস্ত করবে।

Healthy Food স্বাস্থ্যকর খাদ্য

Trending Tropics আগ্রহের বিষয়