স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার গুরুত্ব।
ভূমিকা:
আমরা প্রায় সকলেেই অর্থের পিছনে ছুটে বেড়ায়, কারণ অর্থ আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আমরা প্রকৃতঅর্থে মূল্যবান স্বাস্থ্যের কথা ভুলে যায়। স্বাস্থ্যই হল প্রকৃত সম্পদ। প্রতিদিনের ব্যাস্ত কর্ম সূচির মধ্যে স্বাস্থ্য অর্থাৎ হেলথ কে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
কেন স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা প্রয়োজন?
স্বাস্থ্যকর জীবনধারা বজায় রাখতে পারলে আমাদের শরীর ও ম সুস্থ থাকে এবং সমাজের সাথে, পরিবেশের সাথে সঠিক মেলবন্ধন রাখতে পারি। স্বাস্থ্যকর জীবন, আমাদের প্রতিদিনের জীবনযাত্রার বিভিন্ন দিককে অন্তর্ভুক্ত করে। এর মধ্যে আছে আমাদের খাদ্য, শারীরিক কার্যকলাপ, ঘুম, স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ। এছাড়া খারাপ অভ্যাস দূর করতেও এটা গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সুখ ও পরিপূর্ণ জীবনযাপনের মূল সুত্র লুকিয়ে আছে, স্বাস্থ্য রক্ষায় আমরা কতটা নজর দিচ্ছি তার উপর। তাই স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রাকে সর্বাপেক্ষা বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।
স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার সবচেয়ে বড় সুবিধা হল, দীর্ঘস্থায়ী রোগ প্রতিরোধ। নিয়মিত ব্যায়াম করলে এবং সুষম খাদ্য গ্রহণ করলে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, স্থূলতা এবং নির্দিষ্ট ধরণের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে ফেলতে পারি। শারীরিক কসরত আমাদের কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমকে শক্তিশালী করে তোলে, রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং দেহের ওজন স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। আমাদের খাদ্য তালিকায় ফল, শাকসবজি, শস্য এবং চর্বিহীন প্রোটিন অন্তর্ভুক্ত করলে প্রয়োজনীয় পুষ্টি, ভিটামিন এবং খনিজ মৌল চাহিদা মেটে। ফলে ইমিউন সিস্টেমকে ভাল থাকে এবং দেহের সব অঙ্গ ভালভাবে কাজ করে।
মন ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা।
জীবনযাত্রা স্বাস্থ্যকর হলে আমাদের মানসিক সুস্থতার উপরও ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। নিয়মিত ব্যায়াম, হাঁটা, ছোটা, সাঁতার, প্রানায়ম ইত্যাদি করলে আমাদের মস্তিষ্কে এন্ডোরফিন নিঃসরণ হয়। এই এণ্ডোরফিনকে “ফিল-গুড” হরমোন অর্থাৎ ভাল লাগার অনুভূতিকারী হরমোন বলা হয়। এই হরমোন মানসিক, চাপ, উদ্বেগ এবং বিষণ্নতার লক্ষণগুলি কমাতে সাহায্য করে। যোগব্যায়াম, ধ্যান ইত্যাদি মানসিক চিন্তাভাবনাকে স্বচ্ছ করে তোলে। মনোযোগ বাড়ায় এবং অভ্যন্তরীণ শান্তির অনুভূতিকে জাগিয়ে তোলে। নিয়মিত পর্যাপ্ত ও সামঞ্জস্যপূর্ণ ঘুম শরীরকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম দেয় এবং আমাদের শরীর ও মনকে পুনরুজ্জীবিত হয়। ফলে আমাদে সকল ঈন্দ্রীয় ভালভাবে কাজ করে যা উন্নত চিন্তাভাবনার জন্ম দেয় এবং মানসিক স্থিতি বজায় রাখে।
মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ:
স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ, স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্ররা আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। দীর্ঘস্থায়ী স্ট্রেস আমাদের শারীর ও মানের ক্ষতি করে। এর ফলে উচ্চ রক্তচাপ, দুর্বল ইমিউন সিস্টেম এবং বদমেজাজের মতো রোগের সৃষ্টি হয়। আমাদের দৈনন্দিন রুটিনে স্ট্রেস-কম করার কৌশলগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। শখে বজায় রাখতে হবে, প্রিয়জনের সাথে সময় কাটাতে হবে, হালকা ব্যায়ামে করতে হবে। এভাবে আমরা কার্যকরভাবে মানসিকচাপের মাত্রা হ্রাস করতে পারি এবং আমাদের সামগ্রিক জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে পারি।
দীর্ঘায়ু লাভ:
দীর্ঘায়ু লাভ করা স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার গুরুত্বপূর্ণ দিক। বয়স বাড়ার সাথে সাথে স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার অভ্যাস অবশ্যই বাড়াতে হবে। স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গ্রহণ করে, আমরা বার্ধক্য জনিত রোগের সূচনাকে বিলম্বিত করতে পারি এবং দীর্ঘ সময়ের ধরে শারীরিক সক্ষমতা বজায় রাখতে পারি। নিয়মিত শারীরিক ক্রিয়াকলাপে যুক্ত থাকে, স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখে এবং পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করে আমরা বেশ ভাল থাকতে পারি। হাড়ের ঘনত্ব, পেশীর শক্তি এবং জয়েন্টের নমনীয়তা রক্ষা করতে পারি, যা আমাদের পরবর্তী বছরগুলিতে আরও বেশি ভাল থাকতে সাহায্য করে।
উপসংহারে:
স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা বলতে কয়েক দিন ভাল থাকা নয়, সারাজীবন ভাল থাকা বোঝায়। কেবল মাত্র স্থায়ীভাবে জীবনযাত্রার মান উন্নত করে ভাল থাকার ও সুস্থ থাকার আজীবন প্রক্রিয়া। এটি একটি সামগ্রিক পদ্ধতি যার মধ্যে আমাদের শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক স্বাস্থ্য অন্তর্ভুক্ত। নিয়মিত ব্যায়াম, সুষম খাদ্য গ্রহণ, পর্যাপ্ত বিশ্রাম, স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট এবং ক্ষতিকারক অভ্যাস থেকে দূরে থেকে, আমরা উন্নত শারীরিক সুস্থতা, মানসিক স্থিতিস্থাপকতা এবং দীর্ঘায়ু পেতে পারি। তাই আসুন আমরা আজ সকলে সচেতন হই যা একটি স্বাস্থ্যকর ও সুখী ভবিষ্যতের পথ প্রশস্ত করবে।