হেপাটাইটিস বি রক্ত পরীক্ষা: Hepatitis B Blood Test:
হেপাটাইটিস বি রক্ত পরীক্ষা: Hepatitis B Blood Test:
লিভার কোন জীবাণুর আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত হলে লিভারে হেপাটাইটিস হয়েছে এটা বলা হয়। লিভারকে যে সকল ভাইরাস আক্রমণ করে তাদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা ক্ষতিকর ভাইরাসটি হল হেপাটাইটিস বি ভাইরাস। সারা পৃথিবীতে এই ভাইরাসের আক্রমণ বেড়েই চলেছে। আমাদের শরীর নিজে নিজেই এই ভাইরাসের আক্রমণ প্রতিহত করে। কিন্তু কখনো কখনো এই ভাইরাসের আক্রমণ লিভারে, লিভার ক্যান্সারও হতে পারে।
আমাদের লিভার হেপাটাইটিস বি জীবাণুর দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে কিনা সেটা জানতে রক্ত পরীক্ষা করা হয়। এই রক্ত পরীক্ষার সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে এই প্রতিবেদনে।
কখন হেপাটাইটিস বি পরীক্ষা করা হয়? When to get tested Hepatitis B?
শরীরে হেপাটাইটিস রোগের লক্ষণ দেখা গেলে, হেপাটাইটিস হওয়ার কোন সম্ভাবনা থাকলে এই পরীক্ষা করতে হয়। এছাড়া রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে, এস জি পি টি বা এস জি ও টি বৃদ্ধি পেলে এই পরীক্ষা করা উচিত।
যে সকল ব্যক্তি হেপাটাইটিস বি বা হেপাটাইটিস সি ভাইরাসের চিকিৎসা করাচ্ছেন, তাদেরও এই পরীক্ষা করা প্রয়োজন। চিকিৎসা করার কারণে শারীরিক অবস্থার কতটা পরিবর্তন ঘটেছে সেটা বুঝে নিতে এই পরীক্ষা করা হয়।
যে সকল ব্যক্তিদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভালো নয় বা যাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দমন করে রাখা আছে তাদের এই টেস্ট করা দরকার। যারা মারাত্মক কিডনি রোগে ভুগছেন তাদেরও হেপাটাইটিস বি টেস্ট করা প্রয়োজন।
মহিলাদের ক্ষেত্রে গর্ভধারণ করার আগে ও পরে এই পরীক্ষা করা উচিত। যে সকল শিশুদের মা গর্ভাবস্থায় হেপাটাইটিস বি দ্বারা আক্রান্ত ছিলেন, সেই সেই সকল শিশুদের হেপাটাইটিস বি পরীক্ষা করা উচিত।
যে সকল ব্যক্তি রক্ত, প্লাজমা, টিসু, অঙ্গ ইত্যাদি দান করেছেন বা গ্রহণ করেছেন তাদের হেপাটাইটিস বি পরীক্ষা করা উচিত।
হেপাটাইটিস বি পরীক্ষার পদ্ধতি: Method of testing Hepatitis B:
বিভিন্ন প্রকার হেপাটাইটিস বি পরীক্ষা আছে। কোন প্রকার হেপাটাইটিস বি পরীক্ষা করা হবে সেটা আপনার ডাক্তার ঠিক করবেন। এক্ষেত্রে রোগের ইতিহাস জানা খুব প্রয়োজন।
হেপাটাইটিস বি সারফেস অ্যাণ্টিজেন পরীক্ষা করে এই মুহূর্তে রোগী হেপাটাইটিস রোগে আক্রান্ত কিনা সেটা জানা যায়। কোন ব্যক্তির দেহে কোন রোগ লক্ষণ ছাড়াই জীবণুটি বসবাস করছে কিনা অর্থাৎ বাহক অবস্থায় আছে কিনা সেটাও বোঝা যায়।
আগে হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের আক্রমণ ঘটেছিল কিন্তু বর্তমানে জীবাণুটি ক্ষতিকর অবস্থায় নেই, এটা বোঝা যায় হেপাটাইটিস বি সারফেস অ্যাণ্টিবডি পরীক্ষা করে। ভ্যাকসিন নেওয়ার প্রয়োজন আছে কি নেই, সেটা জানতেও এই পরীক্ষা করা হয়।
টোটাল অ্যাণ্টি হেপাটাইটিস বি কোর পরীক্ষা করলে বর্তমান ইনফেকশন আছে কিনা সেটা জানা যায় এবং ইনফেকশনটি অনেকদিন আগে থেকে হয়েছে কিনা সেটা বোঝা যায়।
আণ্টি হেপাটাইটিস বি কোর পরীক্ষা পদ্ধতিতে এই মুহূর্তে হেপাটাইটিস বি হয়েছে কিনা এবং তার মাত্রা কতটা মারাত্মক সেটা বোঝা যায়।
পরীক্ষা করার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিন এবং ডাক্তারবাবুর নির্দেশ মেনে সঠিক পদ্ধতিতে পরীক্ষা করুন।
যে সকল ব্যক্তিরা হেপাটাইটিস বি জীবাণুর দ্বারা আক্রান্ত হয়েছেন এবং বর্তমানে চিকিৎসা করাচ্ছেন তাদের চিকিৎসার অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে কিছু বিশেষ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার প্রয়োজন পড়ে। পরীক্ষাগুলি হল-
হেপাটাইটিস বি ই অ্যাণ্টিজেন, হেপাটাইটিস বি ই অ্যান্টিবডি, হেপাটাইটিস বি ভাইরাল ডিএনএ এবং হেপাটাইটিস বি ভাইরাস মিউটেশন।
হেপাটাইটিস বি পরীক্ষার ফলাফলের ব্যাখ্যা: What does the Hepatis B test result mean?
সাধারণত সে কোন এক ধরনের পরীক্ষা করা হয়। প্রয়োজনে আপনার ডাক্তার দুই বা তার অধিক প্রকার হেপাটাইটিস বি পরীক্ষা করতে দিতে পারেন। একাধিক পরীক্ষা করলে রোগের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা পাওয়া সম্ভব হয়।
হেপাটাইটিস বি সারফেস অ্যাণ্টিজেন (HBs Ag) |
হেপাটাইটিস বি সারফেস অ্যাণ্টিবডি (Anti HBs) |
হেপাটাইটিস বি কোর অ্যাণ্টিবডি টোটাল (Anti HBc Ig G+Ig M ) |
হেপাটাইটিস বি কোর অ্যাণ্টিবডি (Anti HBc Ig M) |
পরীক্ষার ফলাফল |
---|---|---|---|---|
নেগেটিভ | নেগেটিভ | নেগেটিভ | নেগেটিভ | বর্তমানে ইনফেকশন নেই, আগেও ইনফেকশন ছিল না। |
নেগেটিভ | পজিটিভ | নেগেটিভ | – | ভ্যাকসিন নেওয়ার ফলে হেপাটাইটিস বি এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। |
নেগেটিভ | পজিটিভ | পজিটিভ | – | হেপাটাইটিস বি এর জীবাণু ধ্বংশ হয়েছে, কিন্তু প্রতিরোধ ক্ষমতা কমলে আবার আক্রমণ করতে পারে। |
পজিটিভ | নেগেটিভ | পজিটিভ বা নেগেটিভ |
পজিটিভ | চরম পর্যায়ে জীবাণু আক্রমণ করেছে। |
নেগেটিভ | নেগেটিভ | পজিটিভ | পজিটিভ | জীবাণু ধীরে ধীরে ধ্বংশ হচ্ছে। |
পজিটিভ | নেগেটিভ | পজিটিভ | নেগেটিভ | দীর্ঘদিন ধরে জীবাণুর দ্বারা আক্রান্ত। |
মন্তব্য: Remarks:
আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের কল্যাণে হেপাটাইটিস বি এর চিকিৎসা করে ভালো ফল পাওয়া যায়। হেপাটাইটিস বি এর সংক্রমণ হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে এবং নিজেও সচেতন হতে হবে। জীবনযাত্রার পরিবর্তন ও সচেতনতা, এই রোগের হত থেকে রক্ষা পেতে সাহায্য করে।