Healthy Lifestyle স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রারোগ ও ব্যাধি Health Condition

হাই ব্লাড সুগারের লক্ষণ: Sign of High Blood Sugar

হাই ব্লাড সুগারের লক্ষণ: Sign of High Blood Sugar:

আমরা যারা নিজেদের সুস্থ সবল ভেবে থাকি, তাদের মধ্যে অনেকেরই ব্লাড সুগার স্বাভাবিক অপেক্ষা বেশি আছে। ডায়াবেটিস বা উচ্চ ব্লাড সুগারের প্রাথমিক লক্ষণ গুলি না জানার কারণে, আমরা জানতে পারি না যে, আমাদের ডায়াবেটিস হয়েছে বা হতে চলেছে। আমাদের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলি ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, কিন্তু আমরা জানতে পারি না। এই কারণে ডায়াবেটিস কে সাইলেন্ট কিলার বা গুপ্ত ঘাতক বলা হয়।

আমাদের ব্লাড সুগারের মাত্রা স্বাভাবিক অপেক্ষা সামান্য বেশি হলে, তাকে প্রি ডায়াবেটিস বলা হয়। ডায়াবেটিস আছে এমন ব্যক্তিদের মধ্যে 25 শতাংশ ব্যক্তি তাদের রোগ সম্পর্কে কিছুই বুঝতে পারে না। ফলে ডায়াবেটিস যাতে না হয় তার জন্য কোন পদক্ষেপ নিতে পারেন না।

উচ্চ রক্ত শর্করার লক্ষণ: High Blood Sugar Symptoms:

আমাদের খাদ্যের মধ্যে থাকা কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাদ্য থেকে আমদের রক্তে সুগার অর্থাৎ গ্লুকোজ উপস্থিত হয়। সঠিক পরিমাণ ইনসুলিন নামক হরমোন, রক্তের এই সুগারকে কোষের মধ্যে পৌঁছে দেয়। দেহ কোষ এই সুগার ব্যবহার করে শক্তি উৎপাদন করে এবং অতিরিক্ত সুগারকে সঞ্চিত রাখে।

ডায়াবেটিস দুই প্রকার। টাইপ 1 ডায়াবেটিসের লক্ষণ গুলি হটাত করে দেখা যায় এবং উচ্চমাত্রায় দেখা যায়। টাইপ 2 ডায়াবেটিসের লক্ষণ গুলি ধীরে ধীরে প্রকাশ পায় এবং লক্ষণগুলির মাত্রা কম হয় হওয়ার কারণে সহজে বোঝা যায় না।

ডায়াবেটিসের লক্ষণ গুলি হল:-

ক্লান্তি: Fatigue:

সহজেই ক্লান্ত হয়ে পড়া উচ্চ রক্ত-শর্করার একটি সাধারণ লক্ষণ। প্রি ডায়াবেটিসের রোগীরা বেশি পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট বা মিষ্টি জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করার পর ক্লান্ত হয়ে পড়ে। বারে বারে এই ঘটনা লক্ষ্য করলে, ব্লাড সুগার পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন।

তৃষ্ণা ও বারে বারে মূত্র ত্যাগ: Increased Thirst and Frequent Urination:

আমাদের রক্তের মধ্যে সুগারের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে আমাদের বৃক্ক অর্থাৎ কিডনি অতিরিক্ত সুগারকে মূত্রের মাধ্যমে শরীর থেকে নিষ্কাশন করে। একই সাথে জল ও দেহ থেকে বাইরে নির্গত হয়। একারণে হাই ব্লাড সুগারের রোগীদের বেশি জল পিপাসা পায় ও বারে বারে মূত্র ত্যাগ করতে হয়।

অতিরিক্ত খিদে Increased Hunger:

ডায়াবেটিস হলে রক্ত থেকে দেহ কোষের মধ্যে গ্লুকোজ অর্থাৎ সুগার প্রবেশ করতে পারে না। ফলে দেহকোষগুলি ক্ষুধার্ত অবস্থায় থাকে। কোষগুলি মস্তিষ্কে খাদ্য গ্রহণ করার সংকেত পাঠাতেই থাকে ফলে আমাদের খিদে বেশি পায়।

স্নায়ুর ব্যথা বা অসার অবস্থা Nerve Pain or Numbness:

হাত, আঙুল, পায়ের পাতায়, গোড়ালিতে ব্যথা হয় ও কখনও কখনও অসার হয়ে যায়। স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে এটা হয়। এই লক্ষণ গুলি ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়। একে ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি বলে।

ক্ষত সারতে সময় লাগে: Slow Healing Wounds:

রক্তে ব্লাড সুগারের মাত্রা বেশি থাকলে, ক্ষত সারতে সময় লাগে। রক্তের সুগার বেশি থাকলে রক্তনালী গুলি সংকীর্ণ হয়ে যায়, ফলে রক্ত সঞ্চালন বাধা প্রাপ্ত হয় এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টি পদার্থ ও অক্সিজেনের অভাবে ক্ষত সারতে সময় লাগে। এছাড়া ব্লাড সুগারের উচ্চমাত্রা, ইমিউন সিস্টেম অর্থাৎ রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার ক্ষতি করে।

অস্পষ্ট দৃষ্টি: Blurred Vision:

একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে এই লক্ষণ দেখা যেতে পারে। হটাত করে রক্তের মধ্যে সুগারের পরিমাণ বেড়ে গেলে, চোখের মধ্যে থাকা সরু সরু রক্তনালী থেকে সুগার মিশ্রিত রক্তরস রক্তনালীর বাইরে নির্গত হয়ে চোখের লেন্সের উপর পড়ে। ফলে সাময়িক ঝাপসা দৃষ্টির সৃষ্টি হতে পারে। এই সমস্যা নিজে নিজেই ঠিক হয়ে যায়। এই সমস্যাটি সুগার জনিত ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি নামক অন্ধত্ব থেকে আলাদা।

ত্বকের মধ্যে কালচে ছোপ ছোপ দাগ হওয়া: Dark Skin Patches:

শরীরের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে বগলে, ঘাড়ে, কালচে ছোপ ছোপ দাগ সৃষ্টি হওয়া টাইপ II ডায়াবেটিসের প্রাথমিক একটি লক্ষণ। দাগ সৃষ্টি হওয়ার স্থানের ত্বক কিছুটা ভেলভেটের মতো উঁচু মোটা হয়। শরীরে অতিরিক্ত ইনসুলিন উৎপাদনের কারণে এটা হয়।

ওজন কমে যাওয়া: Weight Loss:

খাদ্যের অভ্যাসের কোন পরিবর্তন না হওয়া সত্ত্বেও ওজন কমে যেতে পারে। রক্তে সুগারের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করা কার্বোহাইড্রেট কোষের মধ্যে প্রবেশ করতে পারে না। শর্করা মূত্রের মাধ্যমে দেহের বাইরে নির্গত হয়। তাই দেহের কোষগুলি শক্তি উৎপাদন করার জন্য কোষের মধ্যে থাকা প্রোটিন ও ফ্যাট জাতীয় পদার্থকে ব্যবহার করে। এরফলে দেহের ওজন কমে যায়।

বমি বমি ভাব এবং বমি হওয়া: Nausea and Vomiting:

হাই ব্লাড সুগারের রোগীদের দেহকোষ ফ্যাট অর্থাৎ চর্বি জাতীয় পদার্থ ব্যবহার করে শক্তি উৎপাদন করলে কিটোন নামক ক্ষতিকর পদার্থ উৎপন্ন হয়। কিটোনের পরিমাণ বেশি হলে প্রাণহানিকর ডায়াবেটিক কিটো অ্যাসিডোসিস নামক অবস্থা হতে পারে। অতিরিক্ত কিটোন উৎপাদিত হলে বমি হয় এবং বমি বমি ভাব দেখা যায়।

ইস্ট নামক ছত্রাকের আক্রমণ: Yeast Infection:

উচ্চ ব্লাড সুগার থাকলে শরীর থেকে নির্গত তরলের মধ্যে এবং মূত্রের মধ্যে গ্লুকোজের মাত্রা বেশি থাকে। এর ফলে মূত্রাশয়ে, যৌনাঙ্গের মধ্যে বা চারিপাশে, হাত ও পায়ের আঙ্গুলের ফাঁকে, স্তনের নীচে, ইত্যাদি স্থানে ইস্ট নামক ছত্রাকের আক্রমণ দেখা যায়।

মন্তব্য: Remarks:

রক্ত শর্করা বৃদ্ধির কোন লক্ষণ দেখা গেলে অবশ্যই রক্তের সুগার পরীক্ষা করতে হবে। সুগার টেস্ট দুই ধরনের। খালি পেটে রক্ত শর্করা পরীক্ষা করাকে ফাসটিং ব্লাড সুগার টেস্ট এবং দুপুরের ভারি খাবার খাওয়ার দু-ঘণ্টা পর সুগার টেস্টকে পোস্ট প্যারেনডিয়াল ব্লাড সুগার টেস্ট বলা হয়। রক্ত শর্করার মাত্রা স্বাভাবিক অপেক্ষা বেশি হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে হবে।