রক্ত পরীক্ষা Blood Testসংবাদ News

ASO Titer Test এ এস ও টাইটার টেস্ট।

এ এস ও টাইটার টেস্ট ASO Titer Test

স্টেপটোকক্কাস Streptococcus নামক ব্যাকটেরিয়া দেহে কোনও ইনফেকশন সৃষ্টি করেছে কিনা সেটা জানতে এএসও টাইটার ASO Titer অর্থাৎ অ্যাণ্টি স্টেপটোলাইসিন ও ( Antistreptolysin O) পরীক্ষা করা হয়। বিভিন্ন ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার আমাদের আক্রমণ করতে পারে। ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করলে আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং রোগজীবাণু ধ্বংস করার জন্য অ্যান্টিবডি সৃষ্টি করে। এই অ্যাণ্টিবডি জীবাণুকে ধ্বংস করে রোগের হাত থেকে শরীরকে রক্ষা করে।

স্টেপটোকক্কাস জাতীয় ব্যাকটেরিয়া স্টেপটোলাইসিন ও (Streptolysin O ) নামক টক্সিন (Toxin) অর্থাৎ বিষ উৎপন্ন করে। আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা এই বিষকে ধ্বংস করতে অ্যান্টিস্টেপটোলাইসিন ও Antistreptolysin O নামক এন্টিবডি উৎপাদন করে।

স্টেপটোকক্কাস ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ ঘটলে কিছু লক্ষণ দেখা যায়। যেমন গলায় স্টেপটোকক্কাস ব্যাকটেরিয়ার ইনফেকশন হলে গলা-ব্যথা, জ্বর ও কাশি ইত্যাদি লক্ষণ দেখা যায়। অ্যান্টিবায়োটিক জাতীয় ওষুধ খেলে এই সমস্যা ভাল হয়ে যায়। কিন্তু অনেক সময় স্টেপটোকক্কাস ইনফেকশন হওয়া সত্ত্বেও তেমন কোনও লক্ষণ দেখা যায় না। ফলে চিকিৎসা করা হয় না। এক্ষেত্রে কখনো কখনো ইনফেকশনটি জটিল সমস্যা সৃষ্টি করে। একে বলা হয় পোস্ট স্ট্রেপটোকক্কাল কম্প্লিকেশন।(Post Streptococcal Complications) এ এস ও টাইটার পরীক্ষা করে স্টেপটোকক্কাস ইনফেকশনটি কী পর্যায়ে আছে সেটা জানা যায়। ইনফেকশনের সুপ্ত অবস্থায় আছে কিনা সেটাও বোঝা। স্টেপটোকক্কাস ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে সৃষ্টি হওয়া জটিল রোগ যেমন রিউমাটিক ফিভার(Rheumatic Fever), গ্লোমারুলোনেফ্রাইটিস(Glomerulonephritis) নামক কিডনির রোগ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।

কখন পরীক্ষা করা হয়? When to test ASO Titer?

যদি আপনার দেহে স্ট্রেপটোকক্কাস ইনফেকশনের কোনও লক্ষণ দেখা যায় যেমন, জ্বর, কাশি, গলা ব্যথা ইত্যাদি, সেক্ষেত্রে এ এস ও টাইটার পরীক্ষা করা হয়। আপনার ডাক্তার যদি মনে করেন যে, আপনার বর্তমান সমস্যার কারণ হল, পূর্বে ঘটা কোন স্ট্রেপটোকক্কাস ইনফেকশন; অর্থাৎ বর্তমান সমস্যা স্টেপটোকক্কাস ব্যাকটেরিয়ার ইনফেকশনের জটিলতার কারণে ঘটেছে, সে ক্ষেত্রে এ এস ও চাইটার, পরীক্ষা করার প্রয়োজন।

রিউমাটিক ফিভারের কোন লক্ষণ দেখা গেলে, যেমন জ্বর ,জয়েণ্ট অর্থাৎ অস্থিসন্ধি ফুলে ওঠা ও ব্যথা হওয়া, বিশেষ করে হাঁটুতে, কুনুইয়ে, কবজিতে ব্যথা ও ফোলা, ত্বকের নিচে ব্যথা ছোট ছোট গোলাকার নোড(Node) সৃষ্টি হওয়া, শরীরে খিচুনি হওয়া, ত্বকে রাস বের হওয়া ইত্যাদি হলও রিউমেটিক ফিভারের লক্ষণ। রিউমেটিক ফিভার দ্বারা হার্টও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বুকে ব্যথা, বুক ধড়ফড় করা, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি লক্ষণও দেখা যেতে পারে। রিমোটিক ফিভার শনাক্ত করতে এ এস ও অবশ্যই পরীক্ষা করা হয়।

এ এস ওপরীক্ষার আগের প্রস্তুতি Preparation before A S O Testing.

সাধারণত পরীক্ষার আগের ছয় থেকে আট ঘণ্টা কোনও কিছু খাওয়া উচিত নয়। অবশ্য জল খাওয়া যেতে পারে। আপনার ডাক্তার আপনাকে স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ এবং অ্যান্টিবায়োটিক জাতীয় ওষুধ খেতে বারণ করতে পারেন। পরীক্ষার আগে এই সকল ওষুধ বন্ধ করা ভালো। কি কি ওষুধ বর্তমানে সেবন করছেন, সেটা আপনার ডাক্তারকে জানান। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন ঔষধ বন্ধ বা শুরু করবেন না।

এ এস ও পরীক্ষার জন্য কিভাবে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়? How is the blood sample collected for A S O Testing?

সাধারণত হাতের শিরা থেকে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। আঙ্গুল সূচ-বিদ্ধ করে রক্ত সংগ্রহ করা উচিত নয়। শিশুদের ক্ষেত্রে প্রয়োজনে হলে বিশেষ ধরনের বাটার-ফ্লাই নিডিল ব্যবহার করে রক্ত সংগ্রহ করা যেতে পারে।
রক্ত সংগ্রহ করার সময়, তেমন কোন বিপদের সম্ভাবনা নেই। শিরা ঠিক মত পাওয়া না গেলে, দুই-তিনবার সূচ-বিদ্ধ করা হতে পারে। রক্ত দেখে মাথা ঘুরতে পারে, চামড়ার নিচে রক্ত জমাট বেঁধে, হেমাটোমা হতে পারে। সূচ-বিদ্ধ করার আগে জীবাণুনাশক দিয়ে সূচ-বিদ্ধ করা স্থানটি, জীবাণুমুক্ত করা হয় এবং সকল সময় নতুন সিরিঞ্জ ব্যবহার করা উচিত।

এ এস ও পরীক্ষার ফলাফল এর ব্যাখ্যা Interpretation of A S O test results

প্রথমে আলোচনা করব নর্মাল লেভেল নিয়ে। পূর্ণ বয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এ এস ও টাইটারের মাত্রা 200 এর কম হলে স্বাভাবিক বলে মনে করা হয়। শিশুদের ক্ষেত্রে, এ এস ও টাইটারের মাত্রা 100 কম হলে স্বাভাবিক বলে মনে করা হয়।
স্টেপটোকক্কাস ইনফেকশনের এক সপ্তাহ থেকে এক মাসের মধ্যে রক্তে অ্যান্টিবডি উৎপন্ন হয়। সাধারণত তিন থেকে পাঁচ সপ্তাহের মধ্যে সর্বোচ্চ পরিমাণ অ্যান্টিবডি উৎপন্ন হয়। ইনফেকশন সেরে যাওয়ার পরও, বহুদিন পর্যন্ত রক্তে এই অ্যাণ্টিবডি পাওয়া যায়।

এ এস ও টাইটারের মাত্রা স্বাভাবিক অপেক্ষা বেশি হলে বা টাইটারের পরিমাণ বাড়তে থাকলে বুঝতে হবে যে, রোগীর দেহে স্ট্রেপটোকক্কাস ইনফেকশন Streptococcus Infection হয়েছে। এ এস ও চাইটারের পরিমাণ প্রথমে বৃদ্ধি পেয়ে ধীরে ধীরে কমতে থাকলে বুঝতে হবে যে, স্টেপটোকক্কাস ব্যাকটেরিয়ার ইনফেকশন হয়েছিল কিন্তু বর্তমানে রোগী ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছে।
এএসও টাইটার A S O Titer নেগেটিভ হলে অর্থাৎ নর্মাল লেভেল এর মধ্যে থাকলে; রোগীর দেহে স্টেপটোকক্কাস ইনফেকশন হয়নি বলে মনে করা হয়। সম্ভাব্য ইনফেকশনের 10 থেকে 14 দিন পর এ এস ও টাইচার টেস্ট করলে রেজাল্ট যদি নেগেটিভ আসে এবং অ্যান্টি ডি এন এজ (anti DNAse test) টেস্ট ও নেগেটিভ হয়, সেক্ষেত্রে নিশ্চিত ভাবে বলা যায় যে রোগীর দেহে ইনফেকশন নেই।

মন্তব্য Remarks

এ এস ও বেশি মানেই, ইনফেকশনের কারণ স্টেপটোকক্কাস ব্যাকটেরিয়া, এটা নিশ্চিতভাবে বলা যায় না। এমন কি ইনফেকশন কোন পর্যায়ে আছে,সেটাও নিশ্চিত ভাবে বলা সম্ভব হয়না। তবে রিউমাটিক ফিবার বা গ্লোমারুলোনেফ্রাইটিসের লক্ষণ উপস্থিতি থাকলে, এবং এ এস ও টাইটার বেশি হলে, রোগ সনাক্ত করতে সুবিধা হয়।