Healthy Lifestyle স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রারোগ ও ব্যাধি Health Conditionল্যাব টেস্ট Lab Test

HPV ভাইরাস থেকে সাবধান: ক্যান্সার হতে পারে। HPV [Human Papilloma Virus] and Cancer:

প্রায় সব ধরনের জরায়ুর ক্যান্সার হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে হয়। এছাড়া এই ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে পুরুষ ও মহিলাদের দেহে বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার সৃষ্টি হতে পারে। পায়ু, গলা, পেনিস, যোনি, ভালভা ইত্যাদি স্থানে ক্যান্সার সৃষ্টি করে এই ভাইরাস। এই প্রতিবেদনে হিউম্যান পাপিলোমা ভাইরাস ও ক্যান্সার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।

হিউম্যান পাপিলোমা ভাইরাস খুব ছোঁয়াচে একটি ভাইরাস। এই ভাইরাস খুব সহজে ত্বকের সঙ্গে ত্বকের স্পর্শে ছড়িয়ে পড়ে। 100 বা তার বেশি প্রকার হিউম্যান পাপিলোমা ভাইরাস আছে, যার মধ্যে মধ্যে প্রায় 40 ধরনের ভাইরাস বিভিন্ন প্রকার রোগ সৃষ্টি করে। সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন-এর মতে এই HPV অর্থাৎ হিউম্যান পাপিলোমা ভাইরাস হল সবচেয়ে প্রচলিত যৌন সংক্রমণ। যৌনাঙ্গে HPV-এর সংক্রমণ হলে তেমন কোন রোগ লক্ষণ নাও দেখা যেতে পারে। তবে বেশ কিছু ক্ষেত্রে এই ভাইরাস যৌনাঙ্গে, হাতে, পায়ে, মুখে, মলদ্বারে আঁচিল সৃষ্টি করে; এমন কি ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে। সার্ভিক্যাল ক্যান্সারের অন্যতম প্রধান কারণ হল HPV সংক্রমণ।

HPV ভাইরাস আক্রান্ত কোন ব্যক্তির সাথে সহবাস করলে এই সংক্রমণ হতে পারে। ওরাল সেক্স বা অ্যানাল সেক্সের সময়ও এই সংক্রমণ হতে পারে। এমনকি ত্বকের সাথে ত্বক স্পর্শ করে ঘনিষ্ঠ হলেও HPV-এর সংক্রমণ হতে পারে।

সাধারণত মহিলাদের এই সংক্রমণের সম্ভাবনা বেশি থাকে। সন্তান জন্ম দেওয়ার সময় লেবার রুমে কর্মরত ব্যক্তিদের এই সংক্রমণ ঘটতে পারে। মহিলাদের দেহে সংক্রমণ হলে জরায়ুতে ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে এই ভাইরাস।

পুরুষদের ক্ষেত্রে এই সংক্রমণের ঝুঁকি একটু কম থাকে। পুরুষদের দেহে সংক্রমণ হলে অনেক সময় নিজে নিজেই সেরে যায়। তবে কিছু ক্ষেত্রে HPV সংক্রমণের কারণে লিঙ্গ, মলদ্বার, মাথা ও ঘাড়ে ক্যান্সার হতে পারে।

প্রায়শই HPV সংক্রমণের তেমন কোন লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা যায় না। আসলে HPV সংক্রমণ দু বছরের মধ্যে নিজে নিজেই সেরে যায়। যেক্ষেত্রে নিজে নিজে সংক্রমণ দূর হয় না, সেক্ষেত্রে এই ভাইরাস জটিল সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। যৌনাঙ্গে, গলায়, আঁচিল সৃষ্টি করতে পারে এবং সার্ভিক্যাল ক্যান্সার, যৌনাঙ্গ, ঘাড়, মাথা, গলা ইত্যাদি স্থানের ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। সমস্যা হল, ক্যান্সার সৃষ্টির আগে তেমন কোন উপসর্গ দেখা যায় না। ক্যান্সারের তীব্রতা বৃদ্ধি পেলে তবে রোগ লক্ষণ দেখা যায়। একারণে নিয়মিত HPV স্ক্রিনিং করা প্রয়োজন। তবে যৌনাঙ্গে আঁচিল হয়েছে মানেই ক্যান্সার, এটা ভাবা একদমই ঠিক নয়।

HPV পরীক্ষা, পুরুষ ও মহিলাদের ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা হয়। 21 থেকে 29 বছর বয়সী মহিলাদের প্রতি তিন বছরে এক বার অবশ্যই প্যাপ টেস্ট করা উচিত। 30 থেকে 65 বছর বয়স পর্যন্ত প্রতি তিন বছরে একবার প্যাপ টেস্ট ও প্রতি পাঁচ বছরে একবার HPV-DNA টেস্ট করা দরকার। HPV-র প্রায় 14 টি স্ট্রেন আছে সেগুলি থেকে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এই ধরনের ভাইরাস স্ট্রেন থাকলে আরও ঘন ঘন পরীক্ষা করার প্রয়োজন হতে পারে। প্যাপ টেস্টের ফলাফল দেখার পর প্রয়োজনে কল্পোস্কপি করা হয়।

পুরুষদের ক্ষেত্রে নিয়মিত HPV পরীক্ষা করার কথা বলা হয় না। HPV-DNA টেস্ট কেবলমাত্র মহিলাদের জন্য উপলব্ধ, পুরুষদের জন্য উপলব্ধ তেমন কোন পরীক্ষা নেই। তবে পায়ু-দ্বারে ক্যান্সার হওয়ার কোন সম্ভাবনা থাকলে প্যাপ টেস্ট করা যেতে পারে।

HPV-র সংক্রমণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিজে নিজেই সেরে যায়। এই সংক্রমণের তেমন কোন চিকিৎসা নেই। যৌনাঙ্গে আঁচিল হলে কিছু ওষুধ ব্যবহার করে দূর করা যেতে পারে। আবার বিদ্যুৎ বা তরল নাইট্রোজেন দিয়ে চিকিৎসা করে আঁচিল দূর করা যায়। কিন্তু, দেহে ভাইরাসের সংক্রমণ থাকলে আবারও আঁচিল হতে পারে। HPV থেকে ক্যান্সার হলে কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি বা অপারেশন করার দরকার হয়। এক বা একাধিক পদ্ধতি ব্যবহার করে চিকিৎসা করা হয়। সার্ভিক্যাল ক্যান্সারের জন্য নিয়মিত HPV স্ক্রিনিং করা জরুরি।

অসুরক্ষিত যৌন মিলন থেকে দূরে থাকা ও যৌন স্বাস্থ্য বজায় রাখা প্রাথমিক কর্তব্য। এছাড়া এই ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে HPV ভ্যাকসিন নিতে হবে। 11 থেকে12 বছর বয়সী ছেলেমেয়েদের HPV ভ্যাকসিন নিতে হবে। ছয় মাসের ব্যবধানে এই ভ্যাকসিনের দুটি ডোজ নিতে হবে। 15 থেকে 26 বছর বয়সী পুরুষ ও মহিলাদের তিন ডোজের টিকা নিতে হবে। 27 থেকে 45 বছর বয়সী ব্যক্তি, যাদের আগের টিকা দেওয়া হয়নি তারাও এই টিকা নিতে পারেন। এছাড়া HPV সংক্রমণের জটিলতা থেকে বাঁচতে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা ও প্যাপ টেস্ট করা দরকার।

National Cancer Institute, Mayo Clinic, World Health Organization, https://www.nfid.org/infectious-disease/hpv/ National Foundation for Infectious Diseases, American Cancer Society,