রোগ ও ব্যাধি Health Conditionল্যাব টেস্ট Lab Test

মাণ্টু টেস্ট | টিউবারকিউলিন টেস্ট | পি পি ডি টেস্ট | Mantoux Test | PPD Test | Tuberculin Skin Test

যক্ষ্মা বা টিউবারকিউলোসিস হল ব্যাকটেরিয়া ঘটিত একটি রোগ। হাঁচি কাশি ইত্যাদির মাধ্যমে এই ব্যাকটেরিয়া বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে এবং অন্য ব্যক্তির দেহে সংক্রমণ ঘটায়। যক্ষ্মা বা টিউবারকিউলোসিসের জীবাণু প্রাথমিকভাবে ফুসফুসে আক্রমণ করে। তবে দেহের যেকোন অঙ্গ যেমন মস্তিষ্ক, কিডনি, মেরুদণ্ড, হাড়, গ্ল্যাণ্ড ইত্যাদিতে টিউবারকিউলোসিসের সংক্রমণ হতে পারে। প্রাথমিক পর্যায়ে টিউবারকিউলোসিসের সংক্রমণ সনাক্ত করার জন্য বেশ কিছু টেস্ট করা হয়। এই প্রতিবেদনে মাণ্টু টেস্ট অর্থাৎ টিউবারকিউলিন স্কিন টেস্ট নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

কোন ব্যক্তির দেহে টিউবারকিউলোসিসের জীবাণুর সংক্রমণ ঘটেছে কিনা জানতে এই টেস্ট করা হয়। এক্ষেত্রে টি বি রোগের জীবাণুর নিষ্ক্রিয় নির্যাস, রোগীর দেহে প্রবেশ করানো হয়। রোগীর রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে সেটা দেখে টিউবারকিউলোসিসের সংক্রমণ ঘটেছে কিনা, সেটা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। আমাদের দেহে যক্ষ্মা রোগের জীবাণুর সংক্রমণ হলে, আমাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা জীবাণুকে ধ্বংস করে। কিন্তু অনেক সময় আমাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা এই জীবাণুর বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনা, ফলে টিউবারকিউলোসিস রোগ সৃষ্টি হয়। টিউবারকিউলোসিস রোগ অনেক সময় নিষ্ক্রিয় অবস্থায় থাকতে পারে। মাণ্টু টেস্ট করে নিষ্ক্রিয় ও সক্রিয় উভয় প্রকার যক্ষ্মা রোগ সনাক্ত করা যায়। তবে সক্রিয় যক্ষ্মা রোগ সনাক্ত করতে অবশ্যই কফ পরীক্ষা করতে হবে। সাধারণত 5 বছরের কম বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে মাণ্টু টেস্ট বা টিউবারকিউলিন টেস্ট করার প্রয়োজন হয়।

টিবি বা যক্ষ্মা রোগের কোন লক্ষণ দেখা গেলে, যেমন তিন সপ্তাহের বেশি কাশি হলে, কাশির সাথে রক্ত উঠলে, ঘুসঘুসে অর্থাৎ হালকা জ্বর হলে, যক্ষ্মা পরীক্ষা করা উচিত। এছাড়া ক্ষুধামন্দা, ক্লান্তি, কোন কারণ ছাড়া ওজন কমে যাওয়া, ইত্যাদি রোগ লক্ষণ দেখা গেলেও টিউবারকিউলোসিস পরীক্ষা করা দরকার। যে সকল ব্যক্তিদের টিবি হওয়ার ঝুঁকি বেশি যেমন স্বাস্থ্য কর্মী, চিকিৎসা, নার্স, ইত্যাদি ব্যক্তিদের মাঝে মাঝে এই পরীক্ষা করা উচিত। যারা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস করেন বা টিবি সংক্রমণের হার বেশি এমন স্থানে বাস করেন, তাদের যক্ষ্মা পরীক্ষা করা দরকার। সক্রিয় টিবি আছে এমন ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে বা একসাথে বসবাস করলে এই টেস্ট করা উচিত। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হলেও টিউবারকিউলোসিস টেস্ট করা প্রয়োজন।

এই টেস্ট করার জন্য দুই থেকে তিন দিন সময় লাগে। একজন ল্যাবোরেটরি টেকনোলজিস্ট এই কাজটি সম্পাদন করেন। প্রথম দিন রোগীর নিচের বাহুর ত্বকে সুচ-বিদ্ধ করে সিরিঞ্জের সাহায্যে অল্প পরিমাণ টিউবারকিউলিন অর্থাৎ পিউরিফায়েড প্রোটিন ডেরিভেটিভ প্রবেশ করানো হয়। এই তরলটি প্রবেশ করানোর আগে ত্বক জীবাণু মুক্ত করা হয়। যে স্থানে টিউবারকিউলিন প্রবেশ করানো হয়েছে সেই স্থানটি কলম দিয়ে গোল করে চিহ্নিত করা হয়। এর ফলে পরের দিন মূল্যায়ন করার সময়, সহজেই স্থানটি খুঁজে পাওয়া যায়। যে স্থানে টিউবারকিউলিন প্রবেশ করানো হয় সেই স্থানটি সামান্য ফুলে যায়। এই ফোলাটি সাধারণত কয়েক ঘণ্টার মধ্যে চলে যাওয়া উচিত। পরীক্ষা করার স্থানটিতে সাবান বা কোন প্রকার ক্রিম লাগানো নিষেধ।

48 থেকে 72 ঘণ্টার মধ্যে পরীক্ষার মূল্যায়ন করা হয়। ত্বকে কী ধরনের প্রতিক্রিয়া হয়েছে সেটা পর্যবেক্ষণ করা হয়। টিউবারকিউলিন প্রয়োগ করার স্থানটি লাল হয়ে ফুলে থাকলে টিউবারকিউলোসিসের সংক্রমণ নির্দেশ করতে পারে। এক্ষেত্রে স্থানটির লাল ফোলা ভাব স্কেলের সাহায্যে পরিমাপ করে পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নিতে হয়।

যে স্থানে ইনজেকশনটি দেওয়া হয়েছিল সেই স্থানটিতে কোন ফোলা না থাকলে বা অতি সামান্য ফোলা থাকলে রিপোর্ট নেগেটিভ বলা যায়। রিপোর্ট নেগেটিভ মানে সম্ভবত দেহে যক্ষ্মা রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হয়নি।

পরীক্ষার স্থানে 5 থেকে 9 মিলিমিটার ফোলা থাকলে, ফলাফলটিকে Induration অর্থাৎ ছোট প্রতিক্রিয়া বলা হয়। এটা হওয়ার বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। স্টেরয়েড গ্রহণ করলে, এইচ আই ভি – এর সংক্রমণ থাকলে, রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল হলে এমন ফলাফল দেখা যেতে পারে। এছাড়া যারা যক্ষ্মা রোগীর নিকট বাস করেন বা যাদের আগে টিবি হয়েছিল এমন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও এমন ফলাফল দেখা যেতে পারে।

10 মিলিমিটার বা তার বেশি ফোলা থাকলে পরীক্ষার ফলাফল পজিটিভ বলা হয়। তবে পজিটিভ মানে টিউবারকিউলোসিস হয়েছে এটা নিশ্চিতভাবে বলা যাবে না। নিশ্চিত হওয়ার জন্য আরও বেশ কিছু টেস্ট করা প্রয়োজন। বিশেষ করে Sputum for AFB অর্থাৎ কফ পরীক্ষা করা প্রয়োজন। স্বাস্থ্য কর্মী, ডায়াবেটিসের রোগী ও কিডনির রোগীদের এবং 4 বছরের কম বয়সী শিশুদের এইরকম ফলাফল দেখা যেতে পারে।

15 মিলিমিটার বা তার বেশি ফোলা থাকলে রিপোর্ট পজিটিভ বলা হয়। টিউবারকিউলোসিস রো হলে এত বড় মাত্রায় ফুলতে পারে। তবে এক্ষেত্রেও, রোগ নিশ্চিতভাবে শনাক্ত করতে অবশ্যই অন্যান্য বেশ কিছু পরীক্ষা করার প্রয়োজন।

মাণ্টু টেস্ট পজিটিভ হলে সাধারণত চিকিৎসকেরা আরও কয়েকটি পরীক্ষা করার পরামর্শ দেন। বিশেষ করে টিউবারকিউলোসিস রোগ সুপ্ত অবস্থায় আছে, নাকি সক্রিয় অবস্থায় আছে, জানার জন্য বুকের এক্সরে ও কফ পরীক্ষা করতে হবে। X Ray করার পরিবর্তে C T Scan করার দরকার হতে পারে। ফুসফুসের সংক্রমণ সনাক্ত করার জন্য কফ পরীক্ষা Sputum for AFB টেস্ট করতে হবে। এছাড়া সার্বিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে ধারণা পেতে রক্তের CBC, ESR ইত্যাদি টেস্ট করতে হবে।