রক্তের পটাশিয়াম পরীক্ষা এবং নরমাল লেভেল: Potassium Test and Normal Range:
রক্তের পটাশিয়াম পরীক্ষা এবং নরমাল লেভেল: Potassium Test and Normal Range:
পটাশিয়াম হল এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ ইলেকট্রোলাইট, যা আমাদের স্নায়ুতন্ত্র ও মাংসপেশির কাজ স্বাভাবিক রাখে। শরীরে পটাশিয়ামের মাত্রা সামান্য কমবেশি হলে মারাত্মক জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে। কী কী সমস্যা দেখা দিলে পটাশিয়াম পরীক্ষা করা প্রয়োজন এবং পরীক্ষার আগে কী কী নিয়ম মেনে চলা দরকার, সেটা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে এই প্রতিবেদনে।
কখন পটাশিয়াম টেস্ট করা হয়? Why is a Potassium Test performed?
সাধারণ স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার সময় এই টেস্ট করা হয়। এই পরীক্ষাটি ইলেকট্রোলাইট প্যানেলে এবং মেটাবলিক প্যান্ডেলের অন্তর্গত একটি পরীক্ষা।
শরীরের মধ্যে ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য কেমন আছে দেখার জন্য পটাশিয়াম পরীক্ষা করা হয়। হার্টের রোগীদের এবং ব্লাড প্রেশারের রোগীদের এই পরীক্ষা করা হয়; কারণ হার্টের রোগী ও ব্লাড প্রেশারে রোগীদের এমন কিছু ওষুধ দেওয়া হয় যার কারণে পটাশিয়ামের মাত্রার পরিবর্তন ঘটতে পারে।
কিডনি অর্থাৎ বৃক্কের রোগ সনাক্ত করতে পটাশিয়াম পরীক্ষা করা হয়। ডায়াবেটিস কে সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে দেহে অতিরিক্ত অ্যাসিড উৎপাদন হয়। একে মেটাবলিক অ্যাসিডোসিস বলে। কিডনিতে সমস্যা থাকলে এই অ্যাসিড দেহের বাইরে নির্গত হতে পারে না। পটাশিয়াম টেস্ট করে মেটাবলিক অ্যাসিডোসিস সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
শরীরের মধ্যে ক্ষারের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকলে পটাশিয়াম টেস্ট করা হয়। এছাড়া স্ট্রোক হলে এবং প্যারালিসিসের কারণ অনুসন্ধান করতে পটাশিয়াম পরীক্ষা করা প্রয়োজন হয়। যারা ক্যানসারে ভুগছেন তাদেরও মাঝে মাঝে পটাশিয়াম পরীক্ষা করা দরকার।
কিভাবে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়? How is the sample collected for testing Potassium?
সাধারণত হাতের শিরা থেকে রক্ত সংগ্রহ করা হয়। বাহুতে একটি বাঁধন দেয়া হয় এবং সিরিঞ্জের সাহায্যে শিরা থেকে রক্ত সংগ্রহ করা হয়। রক্ত সংগ্রহ করার সময় অ্যান্টিসেপটিক লোশন দিয়ে সংশ্লিষ্ট স্থানটি জীবাণুমুক্ত করা হয়। সকল সময় নতুন সিরিজ ব্যবহার করা উচিত।
রক্ত সংগ্রহ করার সময় তেমন কোন বিপদের সম্ভাবনা নেই। সুচ বিদ্ধ করা স্থানে সামান্য ব্যথা হতে পারে, রক্ত জমাট বেঁধে হেমাটোমা হতে পারে।
ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করার সময় সাধারণত আঙুলের সূচ বিদ্ধ করে রক্ত সংগ্রহ করা হয়না। শিশুদের ক্ষেত্রে পায়ের গোড়ালিতে সূচ বিদ্ধ করে রক্ত সংগ্রহ করা যেতে পারে। কিছু পোর্টেবল যন্ত্র আছে যার সাহায্যে বাড়িতে পটাশিয়ামের মাত্রা পরীক্ষা করা যায়। তবে ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করা সব থেকে ভালো।
রক্তে পটাশিয়ামের নরমাল লেভেল বা স্বাভাবিক মাত্রা: Normal level of potassium in the blood:
পটাশিয়ামের নরমাল লেভেল হল:-
3.6 মিলি মোল/লিটার থেকে 5.2 মিলি মোল/লিটার।
দেহের কাজ স্বাভাবিক রাখার জন্য পটাশিয়াম প্রয়োজন। রক্ত পরীক্ষা রিপোর্টে লেখা নরমাল লেভেল মেনে চলুন, কারণ আপনার রক্ত পরীক্ষা যে পদ্ধতিতে করা হয়েছে সেই পদ্ধতি অনুসারে নরমাল লেভেল লেখা থাকে। একারণে ল্যাবরেটরি অনুসারে নরমাল লেভেল সামান্য পরিবর্তনশীল।
পটাশিয়াম পরীক্ষার ফলাফলের ব্যাখ্যা: What do the result of Potassium Test mean?
পটাশিয়ামের স্বল্প মাত্রা বা হাইপোক্যালেমিয়া:
পটাশিয়ামের মাত্রা কম হলে তাকে হাইপোক্যালেমিয়া বলা হয়। পটাশিয়ামের মাত্রা কম হতে পারে খাদ্যে পটাশিয়াম কম গ্রহণ করলে, পৌষ্টিকতন্ত্রে কোন সমস্যা থাকলে, ডায়রিয়া বমি ইত্যাদি হলে।
পায়খানা হওয়ার ওষুধ বেশি পরিমাণে খেলে, অতিরিক্ত ঘাম হলে, ফলিক অ্যাসিডের অভাব হলে পটাশিয়ামের মাত্রা কম হতে পারে।
কিছু ওষুধ যেমন স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ, কিছু অ্যান্টিবায়োটিক, কিছু অ্যাণ্টিফাঙ্গাল ওষুধ খেলে এবং প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ বেশি খেলে রক্তে পটাশিয়ামের মাত্রা কম হতে পারে।
ডায়াবেটিসের রোগীদের ইনসুলিন গ্রহণ করার পর পটাশিয়ামের মাত্রা কমে যায়। যে সকল ব্যক্তি কিডনি রোগে ভুগছেন, যাদের দেহে অ্যালডোস্টেরণ নামক হরমোন বেশি ক্ষরিত হয় বা কুশিং বর্ণিত রোগ আছে, তাদের রক্তে পটাশিয়ামের মাত্রা কম হয়।
পটাসিয়ামের উচ্চ মাত্রা বা হাইপারক্যালেমিয়া:
রক্তে পটাসিয়ামের মাত্রা 7.0 মিলি মোল/লিটার বা তার বেশি হলে সেটা জীবন হানিকর হতে পারে। রক্তে পটাসিয়ামের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকার বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। তাছাড়া বিভিন্ন শারীরিক পরিস্থিতির অনুসারে ফলাফল আলাদা হতে পারে।
পটাশিয়াম যুক্ত খাদ্য খুব বেশি পরিমাণ গ্রহণ করলে রক্তে পটাশিয়ামের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। পটাসিয়াম যুক্ত সম্পূরক খাদ্য গ্রহণ করলে বা পটাশিয়াম যুক্ত ওষুধ গ্রহণ করলে পটাশিয়ামের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। এছাড়া আরও কিছু ওষুধ যেমন ননস্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ওষুধ, বিটা-ব্লকার, এ সি ই এনজাইম ইনহিবিটরস, এনজিওটেনসিন 2, রিসেপ্টর ব্লকার, এবং মূত্র বৃদ্ধি করে এমন ওষুধ গ্রহণ করলে দেহে পটাশিয়ামের পরিমাণ বেশি হয়।
রক্ত গ্রহণ করলে, গুরুতর আঘাত পেলে বা পুড়ে যাওয়ার কারণে লোহিত রক্ত কণিকা ধ্বংস হলে,টিস্যুতে আঘাত লাগলে, পেশির ক্ষতি হলে রক্তে পটাশিয়ামের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। দেহে সংক্রমণ হলে, টাইপ 1 ডায়াবেটিস হলে, দেহে জলের অভাব হলে, অ্যাসিডোসিস হলে অর্থাৎ ফুসফুস যখন শরীরে উৎপন্ন কার্বন ডাই অক্সাইড সম্পূর্ণ ভাবে শরীর থেকে বহিষ্কার করতে পারে না, ফলে দেহ তরলগুলি খুব অ্যাসিডিক হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে পটাশিয়ামের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। কিডনি ফেলিওর হলে, অ্যাডিসনের রোগ (যখন অ্যাড্রিনাল গ্রন্থিগুলি পর্যাপ্ত হরমোন তৈরি করতে পারে না) ইত্যাদি ক্ষেত্রেও পটাশিয়াম বেড়ে যায়।