স্ক্যাবিস বা খোস পাঁচড়া কারণ, রোগ লক্ষণ এবং চিকিৎসা: Scabies: Cause, Symptoms and Treatment:
স্ক্যাবিস বা খোস পাঁচড়া কারণ, রোগ লক্ষণ এবং চিকিৎসা: Scabies: Cause, Symptoms and Treatment:
Sarcoptes scabiei (সারকপটিস স্কেবিআই) নামক মাইটির আক্রমণে স্ক্যাবিস বা খোস পাঁচড়া রোগ হয়। এই ক্ষুদ্র মাইট অর্থাৎ আট পা যুক্ত পোকার আক্রমণে ত্বকে রাস অর্থাৎ ফুসকুড়ি বেরোয় এবং ভীষণ চুলকায়।
এই প্রতিবেদনে স্ক্যাবিস বা খোস পাঁচড়া কারণ, রোগ লক্ষণ ও চিকিৎসা নিয়ে আলোচনা করা হল।
স্ক্যাবিস বা খোস পাঁচড়া কী? What is Scabies?
Sarcoptes scabiei (সারকপটিস স্কেবিআই) নামক বাগ বা পোকা আমাদের ত্বকের নিচে গর্ত করে, সুরঙ্গ তৈরি করে বসবাস করে। এই পরজীবীগুলি কে খালি চোখে দেখা যায় না। কিন্তু মানুষের ত্বক কে এরা প্রজনন ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহার করে। এই মাইটগুলি ত্বকের নিচে প্রবেশ করে ডিম পাড়ে। এর ফলে ত্বকের তীব্র চুলকানি হয় ও ছোট ছোট লাল দাগ দেখা যায়। চুলকানি সাধারণত রাতে বৃদ্ধি পায়। স্ক্যাবিস সহজেই এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তিতে ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে যারা খুব কাছাকাছি থাকেন তাদের মধ্যে এই রোগ সহজে ছড়িয়ে পড়ে। পরিবারের একজনের স্ক্যাবিস হলে, পরিবারের সকলেই আক্রান্ত হয়ে পড়েন। এক্ষেত্রে সকলের একসাথে চিকিৎসা করার প্রয়োজন হয়। শিশু ও বয়স্কদের উপর এই মাইটির আক্রমণের প্রবণতা বেশি।
স্ক্যাবিস একটি বিশ্বব্যাপী সমস্যা। তবে এটা প্রধানত গ্রীষ্ম প্রধান অঞ্চলে বেশি দেখা যায়। এছাড়া ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলে স্ক্যাবিসের সংক্রমণ বেশি হয়।
স্ক্যাবিস বা খোস পাঁচড়ার লক্ষণ: What are the Symptoms of Scabies?
স্ক্যাবিসে আক্রান্ত হওয়ার চার থেকে ছয় সপ্তাহ পর রোগ লক্ষণগুলি দেখা যায়। আক্রান্ত স্থানে লাল লাল দাগ ও ফুসকুড়ি দেখা যায়। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ধীরে ধীরে সারা দেহে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ে।
স্ক্যাবিসের অন্যান্য লক্ষণ ও উপসর্গগুলি হল:-
ত্বকে তীব্র চুলকানি যা রাতে আরও বৃদ্ধি পায় এবং ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়। ত্বকে আঁচড় দেওয়ার কারণে ব্যাকটেরিয়ার ইনফেকশন হতে পারে। পরবর্তীকালে ত্বকের রং কালচে হয়ে যায় ও ত্বকে ক্ষতের সৃষ্টি হয়।
দেহের যে কোন অংশের ত্বকে এই সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। তবে কিছু কিছু অংশে সংক্রমণের প্রভাব বেশি দেখা যায়।
হাতে, বিশেষত নখের চারপাশে ও আঙ্গুলের ফাঁকে সংক্রমণ বেশি হয়। বগল, কনুই, কব্জি, স্তন বৃন্ত, কুঁচকি ইত্যাদি স্থানে মাইটির আক্রমণ বেশি হয়। এছাড়া কোমর, নিতম্ব, লিঙ্গ ইত্যাদি স্থানেও সংক্রমণ বেশি হতে পারে।
স্ক্যাবিস রোগ নির্ণয়: Scabies Diagnosis:
দীর্ঘস্থায়ী চুলকানির সমস্যা থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। বুক ও যৌনাঙ্গের আশেপাশে স্ক্যাবিস ফুসকুড়ি ও লাল দাগ দেখে এই রোগ নির্ণয় করা যায়। এছাড়া প্রয়োজনে স্ক্যালপেলের সাহায্যে ত্বক চেঁছে নিয়ে মাইক্রোস্কোপের নিচে পর্যবেক্ষণ করে এই রোগ নিশ্চিতভাবে নির্ণয় করা যায়। এছাড়া ত্বকের বায়পসি ও ইঙ্ক টেস্ট করে রোগ নির্ণয় করা যেতে পারে।
স্ক্যাবিসের চিকিৎসা: Scabies Treatment:
স্ক্যাবিসের চিকিৎসা করার জন্য সাধারণত ক্রিম, লোশন ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। ক্রিম বা লোশন সরাসরি ত্বকে প্রয়োগ করতে হয়। এছাড়া অনেক সময় ওষুধ খেতে হতে পারে।
স্ক্যাবিসের চিকিৎসায় ক্রিম ও লোশন: Oinment, Creams and Lotion for Scabies:
স্ক্যাবিসের চিকিৎসা করার জন্য সাধারণত রাত্রে গলার নীচে সারা দেহে, দেহে মলম বা ক্রিম মাখতে হয়। রাত্রে মাইটগুলি সবচেয়ে বেশি সক্রিয় থাকে। তাই রাত্রে ওষুধ প্রয়োগ করলে ভাল কাজ হয়। পরের দিন সকালে ওষুধ ধুয়ে ফেলা যেতে পারে। সংক্রমণের তীব্রতা বেশি হলে দিনে ও রাতে দু বার ক্রিম বা লোশন মাখতে হবে। যে সকল ওষুধ ব্যবহার করা হয় সেগুলি হল:-
5% পারমেথ্রিন ক্রীম।
25% বেনজাইল বেনজোযেেট লোশন।
10% ক্রোটামিটন ক্রীম।
1% লিণ্ডেন লোশন।
ইত্যাদি।
স্ক্যাবিসের চুলকানি থেকে মুক্তি পেতে আরও কিছু ওষুধের প্রয়োজন হতে পারে। অ্যালার্জি দূর করার জন্য অ্যাণ্টিহিস্টামাইন (Antihistamines) জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা হয়। এছাড়া স্ক্যাবিসের চুলকানি থেকে ব্যাকটেরিয়ার ইনফেকশন হলে অ্যাণ্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়।
স্ক্যাবিসের ঘরোয়া চিকিৎসা: Natural Treatment for Scabies:
কিছু ঘরোয়া চিকিৎসায় স্ক্যাবিসের সমস্যা কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকে। টি অয়েল, অ্যালোভেরা, ক্যাপসাইসিন ক্রিম, লবঙ্গ তেল, নিম, সাবান ইত্যাদি ব্যবহার করলে বেশ ভাল উপকার পাওয়া যায়।
স্ক্যাবিস রোগ প্রতিরোধ: Scabies Prevention:
অন্য ব্যক্তিদের মধ্যে স্ক্যাবিস ছড়ানো প্রতিরোধ করার জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। ত্বকে আঁচড় দিলে স্ক্যাবিসের সংক্রমণ শরীরের অন্যান্য অংশে সহজে ছড়িয়ে পড়ে। তাই ত্বকে আঁচড় না দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। স্ক্যাবিস মানুষের শরীরের বাইরে প্রায় একদিন বেঁচে থাকতে পারে, তাই বিছানার চাদর ও কাপড় থেকে স্ক্যাবিস ছড়িয়ে পড়তে পারে। একারণে আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহার করা পোশাক, গামছা, বিছানা ইত্যাদি ব্যবহার করা উচিত নয়। সর্বদা ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখতে হবে এবং বিছানার চাদর, পোশাক গরম জল ও ডিটারজেন্ট দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। পরিবারের একজন আক্রান্ত হলে অন্যদেরও চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। চিকিৎসা শুরুর 24 ঘণ্টা পর্যন্ত আক্রান্ত ব্যক্তির বাড়িতেই থাকা উচিত, বাইরে যাওয়া উচিত নয়।