TORCH টেস্ট: উদ্দেশ্য, পদ্ধতি এবং ফলাফল। TORCH Test: Purpose, Procedure and Result.
গর্ভবতী মহিলাদের দেহে সংক্রমণ ঘটাতে পারে এমন বেশ কয়েকটি জীবাণুর সংক্রমণ একসাথে শনাক্ত করার পরীক্ষা হল TORCH। এই পরীক্ষার সাহায্যে টক্সোপ্লাজমোসিস (Toxoplasmosis) ও অন্যান্য কয়েকটি জীবাণু যেমন HIV, হেপাটাইটিস ভাইরাস (Hepatitis Virus), ভেরিসেলা (Varicella), পারভোভাইরাস (Parvovirus) ইত্যাদির সংক্রমণ সনাক্ত করা হয়। এছাড়া এর সাথে রুবেলা (Rubella), সাইটোমেগালো ভাইরাস (Cytomegalovirus) হারপিস সিমপ্লেক্স (Herpes Simplex), সিফিলিস (Syphilis) ইত্যাদি জীবাণুর সংক্রমণ হয়েছে কিনা পরীক্ষা করা হয়। এই প্রতিবেদনে TORCH টেস্ট সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
TORCH সংক্রমণ কি? What is TORCH infection?
TORCH হল বেশ কয়েকটি রোগের একটি গ্রুপ বা দল, যা গর্ভস্থ শিশু বা নবজাতক শিশুকে আক্রমণ করতে পারে। মায়ের দেহে TORCH এর জীবাণু উপস্থিত থাকলে গর্ভাবস্থায় বা প্রসবের সময় বা জন্মের পর শিশুকে আক্রমণ করতে পারে।
শিশুদের দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকার কারণে TORCH সংক্রমণ শিশুর দেহে জটিল সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। এমনকি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে যেমন হাত-পা ইত্যাদির গঠনে বাধা দিতে পারে ও শিশুর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। শিশু কতটা অসুস্থ হবে সেটা সংক্রমণের ধরন ও সংক্রমিত হওয়ার সময়ের উপর নির্ভর করে। সাধারণত গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে সংক্রমণ হলে ফলাফল বেশি খারাপ হয়। সমস্যার জটিলতা কমাতে দ্রুত চিকিৎসার প্রয়োজন হয়।
TORCH সংক্রমণের লক্ষণ ও উপসর্গ: Signs and Symptoms of TORCH infection:
TORCH এর অন্তর্গত কোন রোগের জীবাণুর আক্রমণ করেছে তার উপর রোগ লক্ষণ নির্ভর করে। TORCH সংক্রমণ হলে মোটামুটি যে সকল লক্ষণ দেখা যায় সেগুলি হল; জ্বর, অলসতা, খাওয়ানোর সমস্যা, জন্ডিস ইত্যাদি। এছাড়া প্রসবের সময় বাচ্চার ওজন কম হওয়া, কানে শোনার সমস্যা, ত্বকে লাল বা নীল ছোপছোপ দাগ, চোখে ছানি, লিভারের সমস্যা ইত্যাদি দেখা যেতে পারে। দুই বছর বয়সের পর TORCH এর সংক্রমণ হলে দৃষ্টি কম হওয়া, কানের সমস্যা, শেখার অক্ষমতা, খিঁচুনি ইত্যাদি উপসর্গ দেখা যেতে পারে।
কখন TORCH টেস্ট করা হয়? When is the TORCH test requested?
গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে দেহে TORCH রোগের জীবাণুর সংক্রমণ হয়েছে বলে সন্দেহ হলে এই টেস্ট করতে বলা হয়। গর্ভাবস্থার প্রথম ছয় সপ্তাহের মধ্যে রুবেলা সংক্রমণ হলে গর্ভস্থ শিশুর বড় বিপদ হতে পারে। তাই গর্ভবতী মহিলাদের দেহে রুবেলার কোন উপসর্গ ও ফুসকুড়ি দেখা গেলে এই টেস্ট করা প্রয়োজন। টক্সোপ্লাজমা বা সাইটোমেগালো ভাইরাসের সংক্রমণ হলে ফ্লু-এর মত উপসর্গ থাকতে পারে। এই উপসর্গ অন্যান্য ফ্লু-এর মতই হয়। এক্ষেত্রেও TORCH টেস্ট করা দরকার।
নবজাতক শিশুদের দেহে TORCH এর অন্তর্গত কোন রোগের লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা গেলে অবশ্যই এই টেস্ট করতে হবে। নবজাতকদের ওজন কম হলে, মাথার আকার ছোট হলে, বধিরতা, মানসিক প্রতিবন্ধকতা ইত্যাদি দেখা গেলে TORCH টেস্ট করতে হবে। এছাড়া খিঁচুনি, হার্টের ত্রুটি,চোখে ছানি পড়া, লিভারের রোগ ইত্যাদি দেখা গেলেও এই টেস্ট করা উচিত।
TORCH পরীক্ষার প্রস্তুতি: Preparation of TORCH Test:
এই টেস্ট করার জন্য বিশেষ কোন প্রস্তুতির প্রয়োজন হয় না। যেকোন সময় রক্তের নমুনা দেওয়া যেতে পারে। তবে খালি পেটে টেস্ট করা বেশি ভাল। TORCH রোগের কোন উপসর্গ থাকলে অবশ্যই আপনার চিকিৎসাকে জানান। কী কী ওষুধ সেবন করছেন সেটা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দিন। আপনার চিকিৎসক বিশেষ কোন ওষুধ বন্ধ করার কথা বলতে পারেন।
TORCH পরীক্ষার জন্য রক্তের নমুনা সংগ্রহ: Collection of blood sample for TORCH Test:
সাধারণত অল্প পরিমাণ রক্তের নমুনা ব্যবহার করে এই টেস্ট করা হয়। হাতের শিরা থেকে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। বাহু-তো একটি রাবার ব্যান্ড বাধা হয় এবং সিরিঞ্জের সাহায্যে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। রক্ত সংগ্রহ করার সময় তেমন কোন বিপদের সম্ভাবনা নেই। সুচ বিদ্ধ করার স্থানে সামান্য ব্যথা হতে পারে বা ত্বকের নিচে রক্ত জমে হেমাটোমা হতে পারে। রক্ত সংগ্রহের পর ক্ষত স্থানে একটি ব্যান্ডেজ লাগিয়ে দেওয়া হয়।
TORCH পরীক্ষার ফলাফলের ব্যাখ্যা: What does the TORCH Test Result mean?
এই টেস্ট করে এই মুহূর্তে দেহে TORCH এর অন্তর্গত কোন জীবাণুর সংক্রমণ আছে কিনা সেটা জানা যায়। TORCH রোগের অন্তর্গত কোন জীবাণুর বিরুদ্ধে দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠেছে কিনা সেটাও বোঝা যায়। TORCH পরীক্ষার ফলাফল পজিটিভ বা নেগেটিভ হিসাবে প্রকাশ করা হয়।
TORCH পরীক্ষার ফলাফল নেগেটিভ হলে বলা যায় যে, দেহে TORCH এর অন্তর্গত কোন জীবাণুর সংক্রমণ বর্তমানে নেই বা পূর্বে কোন সংক্রমণ হয়নি।
গর্ভবতী মহিলাদের দেহে IgM ও IgG অ্যান্টিবডি উপস্থিত থাকলে বুঝতে হবে যে, দেহে TORCH রোগের সংক্রমণ ঘটেছে এবং রোগের মাত্রা তীব্র। শুধুমাত্র IgM উপস্থিত থাকলে রোগ সবেমাত্র আক্রমণ করেছে বলা যায়। IgG পজিটিভ হলে বুঝতে হবে যে, দেহে বেশ কিছু সময় আগে জীবাণুর সংক্রমণ হয়েছে কিন্তু এখন রোগের তীব্রতা কমেছে। এছাড়া ভ্যাকসিন নিলে IgM ও IgG পজিটিভ হতে পারে।
নবজাতকদের ক্ষেত্রে IgM পজেটিভ মানে দেহ সংক্রমণ শুরু হয়েছে। যেহেতু IgM প্লাসেন্টা অতিক্রম করে সন্তানের দেহে আসতে পারেনা তাই, সন্তানের দেহে এটি সক্রিয় সংক্রমণ। তবে সন্তানের দেহে শুধুমাত্র IgG উপস্থিত থাকলে বুঝতে হবে যে, IgG অ্যান্টিবডি মায়ের দেহ থেকে সন্তানের দেহে পরিবাহিত হয়েছে। শিশুর মধ্যে এটি সক্রিয় সংক্রমণ নয়।