রক্তের ভিটামিন ডি পরীক্ষা ও স্বাভাবিক মাত্রা: Vitamin D Blood Test & Normal Range
রক্তের ভিটামিন ডি পরীক্ষা ও স্বাভাবিক মাত্রা: Vitamin D Blood Test & Normal Range
আমাদের দাঁত ও হাড়ের সঠিক বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য ভিটামিন ডি একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। রক্তের মধ্যে প্রধানত দুটি রূপে ভিটামিন ডি পেতে পারি। ভিটামিন ডি এর কার্যকরী রূপের নাম 1, 25 ডিহাইড্রোক্সিভিটামিন ডি (1, 25 dihydroxyvitamin D)। এটি নিষ্ক্রিয় 25 হাইড্রোক্সিভিটামিন ডি (hydroxyvitamin D) থেকে উৎপন্ন হয়। শরীরে কতটা ভিটামিন ডি আছে, সেটা সম্পর্কে ধারনা পেতে, নিষ্ক্রিয় অবস্থায় থাকা ভিটামিন ডি, 25 হাইড্রোক্সিভিটামিন ডি পরিমাপ করা হয়।
আমাদের ত্বক সূর্যালোকের সাহায্যে ভিটামিন ডি উৎপন্ন করে। এছাড়া চর্বিযুক্ত মাছ, মাংস ও দুধ থেকে এবং বাঁধাকপি জাতীয় সবজি থেকে ভিটামিন ডি আমাদের শরীরে প্রবেশ করে।
ভিটামিন ডি এর প্রধান কাজ, আমাদের রক্তে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও ম্যাগনেসিয়ামের পরিমাণ স্বাভাবিক রাখা। এছাড়া ভিটামিন ডি আমাদের হাড়ের ও দাঁতের বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন ডি আমাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখতে প্রয়োজনীয়।
রক্ত ভিটামিন ডি পরীক্ষা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হল এই প্রতিবেদনে।
কখন ভিটামিন ডি পরীক্ষা করা হয়? When to get tested Vitamin D?
ভিটামিন ডি এর অভাবজনিত কোন লক্ষণ দেখা গেলে 25 হাইড্রোক্সিভিটামিন ডি (hydroxyvitamin D) অর্থাৎ নিষ্ক্রিয় অবস্থায় থাকা ভিটামিন ডি পরীক্ষা করা হয়। যেমন শিশুদের রিকেট রোগ দেখা গেলে এবং বড়দের অস্টিওম্যালেসিয়া (Osteomalacia) রোগের কোন লক্ষণ দেখা গেলে এই টেস্ট করা প্রয়োজন।
যে সকল ব্যক্তিদের ভিটামিন ডি এর অভাব হওয়ার সম্ভাবনা আছে তাদের ভিটামিন ডি টেস্ট করা দরকার। যারা সূর্যালোকে কম থাকেন, যাদের ওজন বেশি, তাদেরও ভিটামিন টি টেস্ট করা উচিত।
যে সকল ব্যক্তি পুষ্টির অভাবে ভুগছেন, যাদের পৌষ্টিক নালিতে অপারেশন হয়েছে এবং যে সকল ব্যক্তি বার্ধক্য জনিত সমস্যায় ভুগছেন, তাদের এই টেস্ট করা উচিত। যে সকল ব্যক্তিদের গায়ের রং ঘন কালো, তাদেরও ভিটামিন ডি টেস্ট করা উচিত। এছাড়া অস্টিওপোরেসিস রোগের চিকিৎসা করার সময় মাঝেমাঝে ভিটামিন ডি টেস্ট করা প্রয়োজন।
নিষ্ক্রিয় 25 হাইড্রক্সিভিটামিন ডি, বৃক্ক ও যকৃত দ্বারা সক্রিয় অবস্থায় রূপান্তরিত হয়। একারণে সক্রিয় ভিটামিন ডি অর্থাৎ 1, 25 ডিহাইড্রোক্সিভিটামিন ডি (1, 25 dihydroxyvitamin D) কে পরিমাপ করার প্রয়োজন হতে পারে। কিডনি ও লিভারের রোগ শনাক্ত করার জন্য এবং রক্তে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ স্বাভাবিক অপেক্ষা বেশি থাকলে সক্রিয় ভিটামিন ডি পরীক্ষা করে কারণ অনুসন্ধান করতে হয়।
ভিটামিন ডি পরীক্ষার জন্য রক্তের নমুনা সংগ্রহ: How is the blood sample collected for Vitamin D Test?
সাধারণত হাতের শিরা থেকে রক্ত সংগ্রহ করা হয়। রক্ত সংগ্রহ করার আগে তেমন কোন প্রস্তুতির প্রয়োজন হয় না। খালি পেটে বা খাদ্য গ্রহণ করেও রক্ত পরীক্ষা করা যেতে পারে। রক্ত সংগ্রহ করার সময় তেমন কোন বিপদের সম্ভাবনা নেই। সূচ বিদ্ধ করা স্থানে সামান্য ব্যথা হতে পারে।
শিশুদের ক্ষেত্রে আঙুল বা পায়ের গোড়ালিতে সূচ বিদ্ধ করে রক্ত সংগ্রহ করা যেতে পারে। তবে হাতের শিরা থেকে রক্ত গ্রহণ করলে পর্যাপ্ত পরিমাণে রক্ত সংগ্রহ করা সহজ হয়।
রক্তের মধ্যে নিষ্ক্রিয় ভিটামিন ডি এর স্বাভাবিক মাত্রা: Normal Level of Vitamin D (25-hydroxyvitamin D) in Blood:
অভাব আছে: <30 ন্যানোমোলস/লিটার (12 ন্যানোগ্রাম/মিলিলিটার)
সম্ভাব্য ঘাটতি: 30 ন্যানোমোলস/লিটার থেকে 50 ন্যানোমোলস/লিটার (12 ন্যানোগ্রাম/মিলিলিটার থেকে 20 ন্যানোগ্রাম/মিলিলিটার)
স্বাভাবিক: 50 ন্যানোমোলস/লিটার থেকে 125 ন্যানোমোলস/লিটার (20 ন্যানোগ্রাম/মিলিলিটার থেকে 50 ন্যানোগ্রাম/মিলিলিটার)
উচ্চ মাত্র: >125 ন্যানোমোলস/লিটার (50 ন্যানোগ্রাম/মিলিলিটার)
পরীক্ষার ফলাফলের ব্যাখ্যা: What does the test result mean?
রক্তে ভিটামিন ডি পরীক্ষার ফলাফল বয়স ও লিঙ্গ অনুসারে সামান্য পরিবর্তনশীল। ল্যাবরেটরি অনুসারেও ও পরীক্ষা পদ্ধতি অনুসারে পরীক্ষার ফলাফলের পরিবর্তন ঘটতে পারে। ল্যাবরেটরি রিপোর্টে উল্লেখ করা নরমাল লেভেল মেনে চলা সবথেকে ভালো।
রক্তে ভিটামিন ডি এর পরিমাণ কম থাকলে, ভিটামিন ডি এর অভাবজনিত বিভিন্ন সমস্যা দেখা যেতে পারে। ভিটামিন ডি এর অভাবে হাড়ে ব্যথা, জয়েন্টে ব্যথা, মাসলে ব্যথা ইত্যাদি হতে পারে। হাড়ের ঘনত্ব কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আপনার ডাক্তার আপনাকে হাড়ের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার জন্য এক্স-রে বা সি টি স্ক্যান করার কথা বলতে পারেন।
ভিটামিন ডি এর অভাবে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়। এর ফলে রোগ জীবাণুর দ্বারা সহজেই আক্রান্ত হতে পারি। ক্ষতস্থান সেরে উঠতে সময় লাগতে পারে, মানসিক সমস্যা ও টেনশন বৃদ্ধি পেতে পারে। এছাড়া অকালে চুল পড়া, সহজেই ক্লান্ত হয়ে পড়া ইত্যাদি, ভিটামিন ডি এর অভাবে ঘটতে পারে।
ভিটামিন ডি এর মাত্রা বেশি হতে পারে ভিটামিন ডি যুক্ত ওষুধ বেশি গ্রহণ করলে। কৃত্রিমভাবে তৈরি হেলথ ড্রিংকস পান করার ফলেও ভিটামিন ডি এর পরিমাণ শরীরে বৃদ্ধি পায়। অতিরিক্ত ভিটামিন ডি আমাদের লিভার অর্থাৎ যকৃত এবং কিডনি অর্থাৎ বৃক্কের ক্ষতি করতে পারে।
তবে খেয়াল রাখতে হবে যে, ভিটামিন ডি যুক্ত খাদ্য অতিরিক্ত গ্রহণ করলেও বা অতিরিক্ত সময় সূর্যের আলোতে থাকলেও ভিটামিন ডি এর পরিমাণ কখনই অত্যধিক বৃদ্ধি পায় না। অর্থাৎ কোন সমস্যা হয় না। তাই সাবধান থাকতে হয় ভিটামিন ট্যাবলেট ও ভিটামিন ডি যুক্ত সম্পূরক খাদ্য থেকে।
মন্তব্য
দেহে ভিটামিন ডি এর অভাবজনিত কোন রোগ লক্ষণ দেখা গেলে অবশ্যই ভিটামিন ডি টেস্ট করুন এবং ডাক্তারের পরামর্শ নিন। ভিটামিন ডি এর অভাব থাকলে, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করাতে হবে এবং জীবন যাত্রার মান উন্নত করতে হবে।