উইডাল বা ভিডাল টেস্ট: টাইফয়েড জ্বর পরীক্ষা: Widal Test: Typhoid Fever Test:
উইডাল বা ভিডাল টেস্ট: টাইফয়েড জ্বর পরীক্ষা: Widal Test: Typhoid Fever Test:
জ্বর কোন রোগ নয়, রোগের উপসর্গ। জ্বরের কারণ টাইফয়েড কিনা জানতে এবং টাইফয়েড জ্বর হলে রক্ত পরীক্ষা করার জন্য কী নিয়ম মেনে চলা প্রয়োজন, সেটাই হল এই প্রতিবেদনের আলোচনার বিষয়। এছাড়া টাইফয়েড জ্বর পরীক্ষার রিপোর্ট নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
টাইফয়েড জ্বর পরীক্ষা করতে উইডাল নামক টেস্ট, ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশে সর্বাধিক প্রচলিত। এই পরীক্ষার সাহায্যে সহজে, কম খরচে, তাড়াতাড়ি, জ্বরের কারণ টাইফয়েড ইনফেকশন কিনা সেটা জানা যায়। এই পরীক্ষাটি খুব বেশি নির্ভরযোগ্য না হলেও, প্রাথমিক ধারণা পেতে এটি খুব কার্যকরী। অবশ্য দেহে জর না থাকলেও এই পরীক্ষা পজিটিভ হতে পারে।
এন্টেরিক ফিভার (Enteric Fever) অর্থাৎ টাইফয়েড জ্বর, সালমোনিলা টাইফি এবং সালমানেলা প্যারাটাইফি (Salmonella typhi & Salmonella paratyphi) নামক ব্যাকটেরিয়া আক্রমণে ঘটে। সাধারণত খাদ্য ও পানীয়র মাধ্যমে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ে।
প্রচণ্ড জ্বর, ক্লান্তি, মাথা ব্যথা, পেট ব্যথা, ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য, ওজন কমে যাওয়া, শরীরের ফুসকুড়ি বের হওয়া ইত্যাদি এই রোগের লক্ষণ। এই রোগ যত তাড়াতাড়ি ধরা যায় ততই ভালো। কারণ এই রোগে তাড়াতাড়ি চিকিৎসা শুরু না করলে জটিল সমস্যার সৃষ্টি হয়। পৌষ্টিকতন্ত্রের মধ্যে রক্তপাত হতে পারে, এমনকি পৌষ্টিকতন্ত্রে ছিদ্র হয়ে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
টাইফয়েড জ্বর সনাক্তকারী বিভিন্ন প্রকার পরীক্ষা পদ্ধতি: Various test methods for detecting typhoid fever:
ব্লাড কালচার নামক পরীক্ষা করলে, এই রোগ জীবাণুর আক্রমণ, প্রথম সপ্তাহের মধ্যে রোগ সনাক্ত করা সম্ভব। উইডাল টেস্ট করে রোগ শনাক্ত করা যায় এক সপ্তাহের পর থেকে। ব্লাড কালচার ও মূত্র কালচার করে জীবাণু শনাক্ত করা সম্ভব যথাক্রমে তৃতীয় ও চতুর্থ সপ্তাহে। অর্থাৎ সব থেকে সহজে ও কম খরচে এই রোগ সনাক্ত করা সম্ভব উইডাল বা ভিডাল টেস্ট দ্বারা। যদিও ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন, উইডাল টেস্ট অপেক্ষা ব্লাড কালচার পরীক্ষাকে বেশি গুরুত্ব দেয়। ব্যবহারিক ক্ষেত্রে উইডাল টেস্ট বেশি সুবিধাজনক। বর্তমানে টাইফি-ডট নামক পরীক্ষা বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে।
কখন উইডাল টেস্ট করা হয়? When is the Widal test done?
সাধারণত টাইফয়েড জ্বর পরীক্ষা করার জন্য টেস্ট করা হয়। জ্বরের সাথে মাথা ব্যথা, কাশি, পেট ব্যথা ইত্যাদি দেখা গেলে এই টেস্ট করা প্রয়োজন। আপনার ডাক্তার ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা করে যদি দেখেন যে, স্প্লিন ও লিভার আকারে বৃদ্ধি পেয়েছে, পেট ফুলেছে এবং হার্ট-বিট একটু কম আছে, সে ক্ষেত্রে উইডাল টেস্ট করার পরামর্শ দিতে পারেন। রক্ত-বিহীন ডায়রিয়া হলে, সঙ্গে জ্বরের মাত্রা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেলে এই পরীক্ষা করা প্রয়োজন।
উইডাল টেস্টের প্রস্তুতি: Preparation before Widal Test:
সাধারণত কোন প্রস্তুতির প্রয়োজন নেই। খালি পেটে বা ভর্তি পেটে পরীক্ষা করা যেতে পারে। তবে জ্বর হওয়ার প্রথম সপ্তাহের মধ্যে টেস্ট করা চলবে না। জ্বর এক সপ্তাহের বেশি হলে, তবেই টেস্ট করতে হবে। তা না হলে টাইফয়েড ইনফেকশন থাকা সত্ত্বেও রিপোর্ট নেগেটিভ হবে।
কিভাবে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়? How is the blood sample collected for the Widal Test?
সাধারণত হাতের শিরা থেকে রক্ত সংগ্রহ করা হয়। শিশুদের ক্ষেত্রে আঙুলে সূচ-বিদ্ধ করে বা গোড়ালিতে সূচ-বিদ্ধ করে রক্ত সংগ্রহ করা যেতে পারে। এই টেস্ট করতে সামান্য বেশি রক্তের প্রয়োজন হয়। একারণে আঙুলে সুচ-বিদ্ধ করে রক্ত সংগ্রহ করা অসুবিধা জনক। হাতের শিরা থেকে রক্ত সংগ্রহ করা বেশি ভালো। শিশুদের ক্ষেত্রে প্রয়োজনে বাটার-ফ্লাই সূচ ব্যবহার করে রক্ত সংগ্রহ করতে হবে।
উইডাল পরীক্ষার পদ্ধতি: Performance technique of Widal Test:
টাইফয়েড জ্বর হয়, সালমানেলা টাইফি এবং সালমোনেলা প্যারাটাইফি নামক ব্যাকটেরিয়া আক্রমণে। মানবদেহে এই ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে দুই ধরনের অ্যান্টিবডি উৎপন্ন হয়। উইডাল টেস্টের সাহায্যে এই দুই ধরনের এন্টিবডির পরিমাণ পরীক্ষা করে টাইফয়েড হয়েছে কিনা সেটা জানা যায়।
উইডাল টেস্ট দুটি উপায়ে করা যায়। টেস্টটিউবের মধ্যে বা কাঁচের স্লাইডের উপর। বর্তমানে স্লাইড টেস্টটি সর্বাধিক প্রচলিত। এই পদ্ধতিতে খুব কম সময়ে টেস্ট রিপোর্ট দেওয়া সম্ভব হয়।
উইডাল টেস্টের ফলাফলের ব্যাখ্যা: Interpretation of Widal Test Result:
উইডাল টেস্টের সাহায্যে সাধারণত টাইফয়েড সৃষ্টিকারী জীবাণুর দ্বারা সৃষ্ট দুই ধরনের অ্যাণ্টিবডি শনাক্ত করা হয়। অ্যান্টিবডিগুলি হল O অ্যান্টিবডি এবং H অ্যান্টিবডি। এই পরীক্ষা করার সময়, কৃত্রিমভাবে তৈরি আন্টিজেনকে রিয়েজেন্ট হিসাবে ব্যবহার করা। এবার রোগীর রক্তের সিরাম কে তরল করে এই রিয়েজেন্টের সাথে মিশিয়ে টাইফয়েড অ্যান্টিবডি কতটা পরিমাণে আছে সেটা দেখা হয়।
উইডাল টেস্টের রিপোর্ট সাধারণ মানুষের পক্ষে বোঝা বেশ কঠিন। রোগীর রক্তের সিরামকে যথাক্রমে 20 গুন, 40 গুণ, 80 গুন 160 গুণ 320 গুণ 640 গুণ তরল করার পর, রিয়েজেন্ট মেশালে, রিয়েজেণ্ট জমাট বেঁধে গেলে টেস্ট পজিটিভ বলা হয়। এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল এই যে পজিটিভ মানে কিন্তু টাইফয়েড হয়েছে এটা বলা যাবে না।
সালমোনেলা টাইফি রিপোর্ট কার্ড: Salmonella typhi Report Card:
অ্যাণ্টিজেন | টাইটার 1:20 | টাইটার 1:40 | টাইটার 1:80 | টাইটার 1:160 | টাইটার 1:320 | টাইটার 1:640 | সিদ্ধান্ত |
---|---|---|---|---|---|---|---|
O অ্যাণ্টিজেন | -/+ | -/+ | -/+ | – | – | – | |
H অ্যাণ্টিজেন | -/+ | -/+ | – | – | – | – | |
টাইফয়েড হয়নি। | |||||||
O অ্যাণ্টিজেন | + | + | + | + | + | – | |
H অ্যাণ্টিজেন | + | + | + | + | – | – | |
টাইফয়েড হয়েছে। | |||||||
O অ্যাণ্টিজেন | + | + | + | – | – | – | |
H অ্যাণ্টিজেন | + | + | + | + | + | + | |
ইনফেকশন হয়েছিল, এখন ভাল হয়ে গিয়েছে বা টাইফয়েডের ভ্যাকসিন নিয়েছে। |
কয়েকদিন ব্যবধানে দ্বিতীয়বার টেস্ট করার পর যদি দেখা যায়, টাইটার চার গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে, সেক্ষেত্রে নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে, জ্বরের কারণ টাইফয়েড। উইডাল টেস্ট রিপোর্ট কার্ডে O আন্টিজেন 1:80 টাইটার পর্যন্ত পজিটিভ হলে এবং H অ্যাণ্টিজেন 1:160 পর্যন্ত পজিটিভ হলে, টাইফয়েড হয়েছে এটা বলা যায় না। কারণ ভারতীয় উপমহাদেশে টাইফয়েড জ্বরের প্রাদুর্ভাব থাকার কারণে প্রায় সকল সাধারণ ব্যক্তিদের দেহে প্রাকৃতিক ভাবেই কিছু পরিমাণ অ্যান্টিবডি উৎপাদিত হয়। তাই সালমোনেলা টাইফি ও সালমোনেলা প্যারাটাইফি পরীক্ষার প্রাথমিক পর্যায়ের টাইটার পজিটিভ হলেও সেটা স্বাভাবিক বলে মনে করা হয়।