Healthy Lifestyle স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রাখাদ্য ও পানীয় Food & Drinks

ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং: ওজন কমানোর সহজ উপায়। Intermittent Fasting: Easy way to lose weight.

ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং অর্থাৎ বিরতিহীন উপবাস সাম্প্রতিককালে খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে সেলিব্রেটিরা তাদের ওজন কমানোর ব্যাপারে এই পদ্ধতিটির গুরুত্ব উল্লেখ করছেন। ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং কী, ওজন কমানোর জন্য ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং কতটা নিরাপদ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হল এই প্রতিবেদনে। ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং কিভাবে করবেন, সেটা নিয়েও আলোচনা করা হল।

ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং হল আপনার প্রতিদিনের খাওয়াকে একটি নির্দিষ্ট এবং পূর্বনির্ধারিত সময়ের মধ্যে আবদ্ধ করা। আপনি কী খাচ্ছেন তার থেকে আপনি কখন খাচ্ছেন সেটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। খাওয়া ও না খাওয়ার সময়ের পর্যায়ক্রম মেনে চলাটা এখানে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ কিছু সময় টানা কোন খাদ্য গ্রহণ না করে উপবাস করতে হবে এবং তারপর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পরিমিত খাদ্য গ্রহণ করতে হবে।

বিভিন্ন ধরনের ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং পদ্ধতি আছে। তবে সর্বাপেক্ষা প্রচলিত পদ্ধতি হল 5 অনুপাত 2 খাদ্যাভ্যাস এবং 16 অনুপাত 8 খাদ্যাভ্যাস। তবে বর্তমানে 16 অনুপাত 8 খাদ্যাভ্যাস বেশি জনপ্রিয়।

5 অনুপাত 2 ফাস্টিং এর ধারণাটি হল; সপ্তাহের পাঁচ দিন ক্যালোরির কথা না ভেবে সাধারণভাবে খাবার গ্রহণ করা। এবার পরের দুই দিন মহিলারা 500 ক্যালোরি খাদ্য গ্রহণ করবেন এবং পুরুষেরা 600 ক্যালোরি খাদ্য গ্রহণ করবেন। সপ্তাহের যেকোন দুইদিন কম ক্যালরি গ্রহণ করে এই উপবাস করা হয়।

16 অনুপাত 8 ফাস্টিং পদ্ধতিতে 16 ঘণ্টা উপবাস করা হয় এবং পরবর্তী 8 ঘণ্টার মধ্যে বিভিন্ন সময় খাদ্য গ্রহণ করা হয়। 8 ঘণ্টা সময়ের মধ্যে একটি জলখাবার ও দুটি মিল অর্থাৎ সম্পূর্ণ খাবার গ্রহণ করা যেতে পারে। সাধারণত সন্ধ্যা 6টা বা 7টা সময় রাতের খাবার খেয়ে নেওয়ার পর পরবর্তী 16 ঘণ্টা উপবাস করতে হয়। তবে এই সময়ের মধ্যে পর্যাপ্ত জল পান করতে হয়। সারারাত অনাহারে কাটার পর সকাল 10টা বা 11টা সময় ব্রেকফাস্ট বা জলখাবার গ্রহণ করতে হয়। বেলা 1টা বা 2টো সময় দুপুরের খাবার গ্রহণ করতে হয়।

খাদ্য গ্রহণ করার সময় খাবারের পরিমাণ ও গুণগত মানের দিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন। ওজন কমাতে চাইলে কোনভাবেই অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ করা চলবে না। এছাড়া চিনিযুক্ত পানীয় অবশ্যই পরিত্যাগ করতে হবে। তবে চিনি বিহীন চা, কফি ইত্যাদি পান করা যেতে পারে। দুপুর ও রাত্রের খাবার পুষ্টিকর হওয়া প্রয়োজন। খাদ্যে পর্যাপ্ত খনিজ উপাদান ও ভিটামিন থাকা দরকার। পছন্দের খাবার অবশ্যই গ্রহণ করা যেতে পারে, তবে সেটা যেন অতিরিক্ত ক্যালরি-যুক্ত না হয়।

ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং থেকে সর্বাধিক উপকার পাওয়ার জন্য কী কী খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ করবেন সেটা গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্য ভালো রেখে ওজন কমানোর জন্য পুষ্টি সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করা জরুরী। বিভিন্ন ধরনের খাদ্যের মধ্যে ভারসাম্য রাখা দরকার।

সকালের জলখাবারে রুটি, বার্লি, ওটস, ব্রাউন ব্রেড ইত্যাদির সাথে ফল গ্রহণ করা যেতে পারে। এছাড়া সকালে চিনি ছাড়া চা বা কফি গ্রহণ করা যেতে পারে। ফলের মধ্যে আপেল, কলা, বেরি জাতীয় ফল, নাশপাতি ইত্যাদি গ্রহণ করতে হবে। দুপুর ও রাত্রের খাবারের রুটি, ভাত, ওটস ইত্যাদি গ্রহণ করতে হবে; এর সাথে পর্যাপ্ত পরিমাণ শাকসবজি গ্রহণ করা দরকার। সবুজ, সাদা ও রঙিন এই তিন রং-এর শাকসবজির যেমন ব্রকলি, পালং শাক, ফুলকপি, গাজর, শসা, বিট, মুলা, লাল শাক ইত্যাদি গ্রহণ করা যেতে পারে। স্থানীয় শাকসবজি ও ফল গ্রহণ করা বেশি ভালো। তবে রাত্রের খাবারে স্যালাড ও ফল গ্রহণ করা উচিত নয়। এছাড়া প্রোটিনের উৎস হিসাবে মাছ, মাংস, ডিম, দুধ ইত্যাদি গ্রহণ করতে হবে।

প্যাকেটজাত খাদ্য, চিপস, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, তরল মিষ্টি পানীয়, আইসক্রিম ইত্যাদি কম গ্রহণ করা উচিত। এগুলি ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং এর মূল উদ্দেশ্যকে ব্যাহত করতে পারে।

সামগ্রিকভাবে ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং এর বিষয়ে গবেষণালব্ধ তথ্য এখনো সীমিত। বিভিন্ন প্রাণী ও মানুষের উপর গবেষণা করে জানা গিয়েছে যে, ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং আমাদের স্বাস্থ্যের উপর বেশ কিছু ভালো প্রভাব ফেলতে পারে। ওজন কমাতে সর্বাপেক্ষা ভালো কাজ করতে পারে এই ধরনের উপবাস। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং রক্তে কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কমাতে পারে ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং। বিশেষ করে খারাপ কোলেস্টেরল LDL এর মাত্রা কমিয়ে কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি কমায়। এছাড়া রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে, প্রদাহ দূর করতে এবং হাঁপানির সমস্যা কমাতে সাহায্য করতে পারে এই ধরনের উপবাস। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং অ্যালজাইমার রোগ ও স্ট্রোকের সম্ভাবনা কমায়। লিভারের কার্যকারিতার উন্নতি ঘটাতে ও নন অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভারের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে এই ধরনের উপবাস।

দীর্ঘ সময় না খাওয়ার কারণে বেশ কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে। মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব, অনিদ্রা, দুর্বলতা, বদমেজাজ, বিরক্তি ইত্যাদি সমস্যা দেখা যেতে পারে। কিছু ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে মাসলের পরিমাণ হাস পায়। অনেকে আবার ফাস্টিংয়ের পর অতিরিক্ত খাবার খেয়ে ফেলে। সেক্ষেত্রে উপবাস করে তেমন কোন লাভ হয় না। বয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং এর ফলে অত্যধিক ওজন কমে যেতে পারে এবং হার দুর্বল হয়ে পড়তে পারে। এছাড়া রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ব্যাহত হতে পারে।

সমস্যা বেশি হলে ফাস্টিং বন্ধ করতে হবে। এই পদ্ধতি সবার জন্য নয়। ফাস্টিং শুরু করার প্রথম 10 দিন খুব বেশি খিদে পায়। তারপর ধীরে ধীরে শরীর নতুন ব্যবস্থার সাথে মানিয়ে নেয়।

এই ধরনের উপবাস শুরু করার ক্ষেত্রে কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করা দরকার। যদি আপনি ওজন কমাতে চান, তাহলে কতটা ওজন কমাবেন সেটা বিবেচনা করুন। উপবাস থেকে কী কী উপকারিতা পেতে চান সেটা ভেবে নিয়ে কোন ধরনের নিয়ম মেনে ফাস্টিং করবেন সেটা ঠিক করুন। ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং এর বিভিন্ন পদ্ধতির মধ্যে একটি নির্বাচন করুন। উপবাসের সময় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে এটা সম্পর্কে সচেতন থাকুন। কোন কোন দিন কাজের চাপ কম থাকে, সামনে কোন অনুষ্ঠান আছে কিনা ইত্যাদি বিষয় খেয়াল রাখুন। এবার কী কী খাবার গ্রহণ করবেন তার একটি তালিকা তৈরি করুন। প্রয়োজনের ডায়াটেশিয়ানের পরামর্শ নিন। এবার মনের জোর বাড়িয়ে ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং শুরু করুন।

Mayo Clinic, Health Line, Johns Hopkins Medicine, WebMD,