Healthy Lifestyle স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রাখাদ্য ও পানীয় Food & Drinks

কখন মুড়ি খাওয়া বিপদজনক? মুড়ি কাদের ক্ষেত্রে সুপারফুড? Health Benefits & Side Effect of Puffed Rice:

মুড়ি একটি হালকা মুচমুচে খাবার যা আমরা প্রায় সকলেই পছন্দ করি। খুব সহজে মুড়িকে মুখরোচক করে তোলা যায়, তাই আমাদের দেশে মুড়ি খুব জনপ্রিয় একটি খাবার। সকালে হালকা প্রাতরাশ বা বিকেলের জলখাবার হিসাবে মুড়ি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।

কখন মুড়ি খাওয়া বিপদজনক এবং মুড়ি কাদের ক্ষেত্রে সুপারফুড, ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে এই প্রতিবেদনে।

মুড়ি যা অনেক সময় মুড়মুড় নামেও পরিচিত, এটি চাল থেকে বিশেষভাবে প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে তৈরি করা হয়। ভুট্টাকে গরম করে যেমন পপকর্ন পাওয়া যায়, তেমনি চালকে গরম করে ফুলিয়ে মুড়ি পাওয়া যায়।

মুড়ির মধ্যে বেশ কিছু উপকারী পুষ্টি উপাদান আছে। প্রচুর পরিমাণ কার্বোহাইড্রেট ও অল্প পরিমাণ প্রোটিন, ফ্যাট ইত্যাদি পুষ্টি উপাদান আছে মুড়ির মধ্যে। এছাড়া মুড়িতে আছে ফাইবার, ভিটামিন বি, ভিটামিন এ ও বেশ কিছু খনিজ উপাদান যেমন ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, সোডিয়াম ইত্যাদি।

মুড়ির বেশ কিছু উপকারিতা থাকা সত্ত্বেও অনেক সময় মুড়ি খাওয়া বিপদজনক হতে পারে।

মুড়ির গ্লাইসেমিক ইনডেক্স বেশি অর্থাৎ মুড়ি খেলে খুব তাড়াতাড়ি রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি পায়। আর একারণে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে মুড়ি খাওয়া বিপদজনক হতে পারে। বেশি পরিমাণ মুড়ি খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা উচ্চ হারে বেড়ে যেতে পারে, ফলে ডায়াবেটিসের রোগীদের ক্ষতি হতে পারে।

মুড়িকে বেশি পরিমাণ ফোলানোর জন্য মুড়ির সাথে অতিরিক্ত লবণ অর্থাৎ সোডিয়াম ক্লোরাইড মেশানো হয়। আমাদের শরীর এই অতিরিক্ত লবণকে কিডনির মাধ্যমে শরীরের বাইরে নির্গত করে। কিডনি অসুস্থ হলে মুড়ি খাওয়া বিপদজনক হতে পারে। এক্ষেত্রে শরীরে অতিরিক্ত সোডিয়াম জমা হয়ে আমাদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে।

উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য মুড়ি একেবারেই স্বাস্থ্যকর খাদ্য নয়। মুড়িতে অতিরিক্ত লবণ থাকার কারণে মুড়ি খেলে দেহে জলের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় ও রক্তচাপ বেড়ে যায়। সুস্থ ব্যক্তিরা অতিরিক্ত সোডিয়াম গ্রহণ করলেও ধীরে ধীরে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা শুরু হতে পারে। তাই উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের মুড়ি কম খাওয়া উচিত।

মুড়ির মধ্যে বেশ কিছু পুষ্টি উপাদানের যথেষ্ট অভাব আছে। মুড়িতে প্রচুর পরিমাণ কার্বোহাইড্রেট আছে কিন্তু প্রোটিন, ফ্যাট ও ভিটামিন ইত্যাদির পরিমাণ বেশ কম থাকে। একারণে প্রধান খাদ্য হিসেবে মুড়ি খেলে দেহে পুষ্টির ঘাটতি দেখা দিতে পারে। মুড়িকে শুধুমাত্র সাধারণ একটা স্ন্যাক্স হিসাবে খেতে হবে ও মুড়ির পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি করার জন্য মুড়িতে ডাল, বাদাম, নারকেল, শাকসবজি ইত্যাদি যোগ করতে হবে।

মুড়িতে সোডিয়ামের পরিমাণ বেশি থাকার কারণে বেশি মুড়ি খেলে রক্তচাপ বৃদ্ধি পায় ও হার্টের রোগের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। হার্টের স্বাস্থ্য স্বাভাবিক রাখতে সোডিয়াম ও পটাশিয়ামের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ, তাই হার্টের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে মুড়ি কম খেতে হবে বা কম লবনযুক্ত মুড়ি খেতে হবে। এছাড়া দেহে সোডিয়ামের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে ধমনী শক্ত হয়ে অ্যাথেরোক্লেরোসিস হতে পারে, ফলে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে। অতিরিক্ত সোডিয়ামের কারণে অনিয়মিত হৃৎস্পন্দনের সমস্যা অ্যারিদমিয়া হতে পারে।

সাধারণত ভাত বা মুড়ি থেকে অ্যালার্জি হয় না। তবে বেশ কিছু ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে মুড়ি থেকে অ্যালার্জির সমস্যা দেখা যেতে পারে।  মুড়ি থেকে অ্যালার্জি হলে মুড়ি খাওয়া বন্ধ করতে হবে।

কোষ্ঠকাঠিন্যের রোগীদের জন্য মুড়ি খাওয়া বেশ উপকারী। মুড়ির মধ্যে ফাইবার থাকার কারণে মুড়ি হজমে সাহায্য করে ও মলের মধ্যে শ্লেষ্মা এবং অতিরিক্ত চর্বি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর ফলে অন্ত্রের মধ্যে খাদ্য মসৃণ ভাবে চলাচল করতে পারে ও অন্ত্রের দেওয়ালে মল লেগে থাকে না।

হজমের সমস্যা দূর করতে মুড়ির ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। মুড়ি একটি শক্তিশালী হজম উদ্দীপক হিসাবে পরিচিত। জলখাবারে মুড়ি গ্রহণ করলে হজমে সাহায্যকারী পৌষ্টিক রসের উৎপাদন বৃদ্ধি পায় ও হজমের প্রক্রিয়া সহজ হয়। বদহজম ,পেট ব্যথা, পেট ফাঁপা, অ্যাসিডিটি, গ্যাস, ডায়রিয়া ইত্যাদি সমস্যায় মুড়ি খেলে সমস্যার জটিলতা কমে।

খনিজ উপাদানগুলি আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। মুড়ি খেলে পর্যাপ্ত পরিমাণ খনিজ উপাদান পাওয়া যায় ফলে সংক্রমণ, জ্বর, সর্দি,কাশি, গলা-ব্যথা ইত্যাদি রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য মুড়ি ভালো না হলেও নিম্ন রক্ত চাপের রোগীদের জন্য মুড়ি অবশ্যই খুব উপকারী। মুড়ির মধ্যে প্রচুর খনিজ উপাদান থাকার কারণে মুড়ি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কম লবনযুক্ত মুড়ি খেলে উচ্চ রক্তচাপের রোগীদেরও তেমন কোনো সমস্যা হয় না।

যারা ওজন কমানোর চেষ্টা করছেন তারা খাদ্য তালিকায় মুড়ি যোগ করতে পারেন। যেহেতু মুড়িতে তুলনামূলকভাবে কম পরিমাণ ক্যালরি ও বেশি পরিমাণ ফাইবার থাকে, তাই মুড়ি খেলে ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং অতিরিক্ত খেয়ে ফেলার সমস্যা হয়না। হালকা হওয়ার কারণে ও অতিরিক্ত ক্যালরি যোগ না করার কারণে, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে মুড়ি অনবদ্য।

মুড়ির মধ্যে ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম, আয়রন, ভিটামিন ডি ইত্যাদি পুষ্টি উপাদান থাকার কারণে মুড়ি হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এই পুষ্টি উপাদানগুলি হাড়ের কোষগুলির বৃদ্ধি ও পুনর্জন্মে সহায়তা করে, ফলে হাড় ও দাঁত শক্তিশালী হয়। প্রতিদিনের ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণে মুড়ি উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারে।

মুড়ির মধ্যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকার কারণে মুড়ি আমাদের ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পারে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফ্রি রাডিকেলের বিরুদ্ধে কাজ করে ও ত্বকের বার্ধক্য রোধ করে। এর ফলে ত্বকে বলি রেখা কমে, ব্রণ ও একজিমার সমস্যা কমে এবং ত্বক তরুণ ও উজ্জ্বল দেখায়।

Lybrate.com, Healthline, Livfit.today, National Institute of Health etc.