Healthy Lifestyle স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রাখাদ্য ও পানীয় Food & Drinks

কোলেস্টেরল কম করতে কি খাবেন? কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ: Foods That Lower Cholesterol

হার্টের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে এবং সার্বিকভাবে সুস্থ থাকতে কোন ধরনের খাদ্য গ্রহণ করছেন সেটা গুরুত্বপূর্ণ। বেশ কিছু খাবার আমাদের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দিতে পারে, ফলে হার্টের রোগের ঝুঁকি কমে। একারণে সুস্থ থাকতে ও হার্ট ভাল রাখতে স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ করতে হবে।

কোলেস্টেরল কম করতে কী খাওয়া উচিত সেটা নিয়ে আলোচনা করা হল এই প্রতিবেদনে।

বেশ কিছু খাদ্য রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় এইসব খাবার অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করতে হবে।

ডাল জাতীয় খাদ্য, বিশেষ করে মটরশুঁটি, মটর এবং মসুর ডাল কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, মটরশুঁটি খেলে উল্লেখযোগ্য-ভাবে খারাপ কোলেস্টেরল LDL এর মাত্রা কমে। এছাড়া ডাল শস্য ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, প্রদাহ ইত্যাদি সমস্যা নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে। একারণে ডাল জাতীয় খাদ্য অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে।

বাদামের মধ্যে থাকে স্বাস্থ্যকর চর্বি, ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, বাদাম বেশি খেলে হার্টের রোগের সম্ভাবনা কমে।

আখরোট হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য বিশেষভাবে উপকারী। কারণ আখরোটে থাকে ওমেগা 3 ফ্যাট আলফা লিনোলিক অ্যাসিড।

আমন্ডের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে মনো এবং পলি আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড, ফাইবার এবং ভিটামিন E ইত্যাদি থাকে। একারণে আমন্ড, হার্টের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে খুব ভাল কাজ করে। গবেষণায় জানা গিয়েছে যে আমন্ড খারাপ কোলেস্টেরল LDL এর পরিমাণ কমায় এবং ভাল কোলেস্টেরল HDL এর পরিমাণ বাড়ায়।

চর্বিযুক্ত মাছ যেমন ইলিশ, ভোলা, রুই, ভেটকি, পাবদা ইত্যাদি মাছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা 3 ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। ওমেগা 3 ফ্যাটি অ্যাসিড, খারাপ কোলেস্টেরল LDL এর মাত্রা কমায় ও ভাল কোলেস্টেরল HDL এর মাত্রা বাড়ায়। গবেষণায় জানা গিয়েছে যে, চর্বিযুক্ত মাছ গ্রহণ করলে উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট ও ধমনীর রোগ, ইত্যাদি কমে। তবে ভাজা  মাছের পরিবর্তে সিদ্ধ মাছ খাওয়া বেশি ভাল।

পরিশোধিত শস্যের বদলে গোটা শস্যে ভিটামিন, খনিজ উপাদান, উদ্ভিদ যৌগ ও ফাইবার বেশি থাকে। হার্টের স্বাস্থ্য সহ সার্বিকভাবে ভাল থাকতে গোটা শস্য গ্রহণ করতে হবে। গবেষণা দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে, প্রতিদিন তিনবার আস্ত শস্য জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করলে হৃদরোগ ও স্ট্রোকের সম্ভাবনা যথেষ্ট কমে। সকল প্রকার শস্যই, হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়। তবে ওটস এবং বার্লি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বার্লি ও ওটসের মধ্যে বিটা-গ্লুকান থাকে, যা খারাপ কোলেস্টেরল LDL কমাতে সাহায্য করে। বিটা-গ্লুকান এক ধরনের দ্রবণীয় ফাইবার, যা অন্ত্রের পরিবেশ ভাল রাখে এবং মলের মধ্য দিয়ে কোলেস্টেরল ও পিত্ত নিষ্কাশনে সাহায্য করে।

কোলেস্টেরল কমাতে এবং হার্টের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে ফল একটি দারুণ খাবার। ফলের মধ্যে থাকে ভিটামিন, খনিজ উপাদান, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং দ্রবণীয় ফাইবার। আপেল, আম, পেয়ারা, লেবু, আঙ্গুর, জাম, কুল, স্ট্রবেরি ইত্যাদি ফলে পেকটিন, অ্যান্থোসায়ানিন দ্রবনীয় ফাইবার ইত্যাদি থাকে। এই উপাদানগুলি লিভারে কোলেস্টেরল তৈরির পরিমাণ কমায়। গবেষণা দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে বেড়ি জাতীয় ফল খারাপ কোলেস্টেরল LDL এর মাত্রা হ্রাস করে এবং ভাল কোলেস্টেরল HDL এর মাত্রা বৃদ্ধি করে। 

শাকসবজি, কোলেস্টেরল কমাতে এবং হার্ট ও রক্তনালীর স্বাস্থ্য ভাল রাখতে খুব উপকারী। শাকসবজির মধ্যে থাকে পর্যাপ্ত পরিমাণ পুষ্টি উপাদান, ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। বিশ্বস্ত গবেষণার জানা গিয়েছে যে, প্রতিদিন তিনবার শাকসবজি ও ফল খেলে ট্রাইগ্লিসারাইড এর মাত্রা কমে। এছাড়া রক্তচাপ ও কোলেস্টেরলের মাত্রাও কমে। তাই খাদ্য তালিকায় পর্যাপ্ত পরিমাণ শাকসবজি যোগ করতে হবে।

রসুনে অ্যালিসিন সহ বিভিন্ন শক্তিশালী উদ্ভিজ্জ যৌগ আছে। গবেষকরা খুঁজে পেয়েছেন যে, রসুন কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানোর জন্য খাদ্যে যথেষ্ট পরিমাণ রসুন ব্যবহার করতে হবে।

চায়ে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পলিফেনাল, যা কোলেস্টেরল হাস করে এবং দেহে প্রদাহের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এছাড়া চায়ে থাকে ক্যাটেচিন, যা খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় ও ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। স্বাস্থ্য ভাল রাখতে অবশ্যই প্রতিদিন 2 থেকে 3 কাপ চা পান করা উচিত।

সয়াবিন হল প্রোটিন সমৃদ্ধ একপ্রকার ডাল জাতীয় খাদ্য। গবেষণা দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে, সয়াবিন গ্রহণ করলে খারাপ কোলেস্টেরল LDL এর মাত্রা কমে। সয়াবিন, খণ্ড বা গুঁড়ো আকারে পাওয়া যায়। এছাড়া সয়া দুধ এবং সয়াবিনের তেল গ্রহণ করা যেতে পারে। খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে এবং হার্টের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে খাদ্য তালিকায় অবশ্যই সয়াবিন যোগ করতে হবে।

শুনতে কিছুটা অদ্ভুত মনে হলেও, ডায়েটে একটু ডার্ক চকলেট এবং কোকো যোগ করলে হার্ট ভাল থাকে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, ডার্ক চকলেট এবং কোকোতে উপস্থিত ফ্ল্যাভনয়েড আমাদের হার্টের রোগের ঝুঁকি কমায়। ডার্ক চকলেট ও কোকো কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইড ইত্যাদির মাত্রা উল্লেখযোগ্য ভাবে কমায়। এছাড়া রক্তচাপ কমাতেও সাহায্য করে ডার্ক চকলেট। তবে অত্যধিক পরিমাণ ডার্ক চকলেট খাওয়া চলবে না, কারণ চকলেটে প্রচুর পরিমাণে চিনি থাকে।

কোলেস্টেরলের সমস্যা থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলতে হবে এবং নিয়মিত লিপিড প্রোফাইল টেস্ট করতে হবে। কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রতিদিন মাঝারি মাত্রার শারীরিক কসরত করা দরকার। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ বন্ধ করা বা শুরু করা উচিত নয়।