নার্ভের সমস্যা কি? নার্ভের সমস্যা কেন হয়? নার্ভের ব্যথা দূর করার সহজ উপায়। Nerve Pain: Cause, Symptoms and Treatment:
নার্ভের ব্যথা বা নিউরোপ্যাথিক ব্যথা হালকা বা গুরুতর হতে পারে। ব্যথা হয়, আবার নিজে নিজে সেরে যায়। তবে এটা দীর্ঘস্থায়ীও হতে পারে। স্নায়ু বা নার্ভের ক্ষতি হলে বা আঘাত লাগলে নিউরোপ্যাথিক ব্যথা হতে পারে। নার্ভের ব্যথায় তীক্ষ্ণ জ্বালা পোড়ার অনুভূতি হয় ও ঝিনঝিন করতে পারে। এই প্রতিবেদনে নার্ভের ব্যথার কারণ, রোগ লক্ষণ ও চিকিৎসা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
নার্ভের ব্যথা কি? What is nerve pain?
স্নায়ুতন্ত্রে কোন ত্রুটি থাকলে বা কোন ক্ষতি হলে স্নায়ুর ব্যথা অর্থাৎ নিউরোপ্যাথিক ব্যথা হতে পারে। মেরুদণ্ড এবং মস্তিষ্ক সহ স্নায়ুতন্ত্রের বিভিন্ন স্থানে ব্যথা হতে পারে। পেরিফেরাল স্নায়ু অর্থাৎ আমাদের শরীরের বিভিন্ন অংশ যেমন অঙ্গ, হাত, পা, আঙুল ইত্যাদি স্থানে ছড়িয়ে থাকা স্নায়ুতে ব্যথা হতে পারে।
ক্ষতিগ্রস্ত স্নায়ুতন্ত্র আমাদের মস্তিষ্কে অবস্থিত ব্যথা অনুভূতি কেন্দ্রে ভুল সংকেত পাঠায়, ফলে নার্ভের ব্যথা হয়। ক্ষতিগ্রস্ত স্নায়ুর কার্যকারিতা পরিবর্তিত হয়ে যাওয়ার কারণে এমন হয়। নার্ভের এই ধরনের ক্ষতিকে নিউরোপ্যাথি বলা হয়। (Neuropathy)
নার্ভের ব্যথার কারণ: Cause of neuropathic pain?
বিভিন্ন কারণে নার্ভের ব্যথা বা নিউরোপ্যাথিক ব্যথা হতে পারে। বেশ কিছু রোগ যেমন ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, মাল্টিপল ক্লোরোসিস, পারকিনসন্স ডিজিজ, গিলান বারি সিনড্রোম, অটোইমিউন রোগ ইত্যাদিতে নার্ভের ব্যথা হতে পারে। ডায়াবেটিসের রোগীদের ক্ষেত্রে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে ব্যথা, জ্বালা পোড়া এবং হুল ফোটানোর মত অনুভূতি ও অসারতা দেখা যেতে পারে।
দীর্ঘমেয়াদে অ্যালকোহল পান করলে নার্ভের ক্ষতি হয় ও নিউরোপ্যাথিক ব্যথা সহ বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। ক্যান্সারের চিকিৎসা করার সময় কেমোথেরাপি বা রেডিয়েশনের ফলে নার্ভের ক্ষতি হয় ও নার্ভের ব্যথা হতে পারে।
টিস্যু, পেশি বা জয়েন্টে আঘাত লাগলে নিউরোপ্যাথিক ব্যথা হতে পারে। এছাড়া পিঠ, নিতম্ব, পা ইত্যাদি স্থানে আঘাত লাগলে এই ব্যথা হতে পারে। মেরুদণ্ডে আঘাত লাগলে, ডিস্ক সরে গেলে এবং স্পাইনাল কর্ডে চাপ লাগলে নিউরোপ্যাথিক ব্যথা হয়।
দেহে বিশেষ কয়েকটি জীবাণুর সংক্রমণ হলে যেমন চিকেন পক্সের ভাইরাস, এইচ আই ভি বা সিফিলিসের জীবাণুর সংক্রমণ হলে নার্ভের ব্যথা হতে পারে। কোন অঙ্গ অপারেশন করে বাদ দেওয়ার পর অঙ্গচ্ছেদের কাছাকাছি থাকা স্নায়ুগুলি মস্তিষ্কে ভুল সংকেত পাঠায়। এক্ষেত্রে মস্তিষ্ক ভুল করে ভাবে যে, ওই অঙ্গে ব্যথা হচ্ছে; একে ফ্যান্টম লিম্ব সিনড্রোম বলে। এছাড়া দেহে ভিটামিন বি-এর অভাব হলে, থাইরয়েডের সমস্যা হলে, মেরুদণ্ডে আরথ্রাইটিস হলে নিউরোপ্যাথিক ব্যথা হতে পারে।
নার্ভের ব্যথার লক্ষণ: Symptoms of neuropathic pain:
নিউরোপ্যাথিক ব্যথার এক বা একাধিক বিভিন্ন প্রকার উপসর্গ থাকতে পারে। আপাত কোন কারণ ছাড়াও ব্যথা হতে পারে। জ্বালাপোড়া, বিদ্যুতের শকের মত ব্যথা, ঝিনঝিন করা, পিন ফোটানোর মত ব্যথা, অসারতা ইত্যাদি অনুভূতি হয়। ত্বকে ঠাণ্ডা স্পর্শ দিলে, চাপ দিলে বা ত্বকে হাত বোলালে ব্যথার অনুভূতি হতে পারে। ত্বকে গরম কিছু স্পর্শ করলে বা পিন ফোটালে অত্যধিক ব্যথার অনুভূতি হওয়া নার্ভের ব্যথার লক্ষণ। এছাড়া অনেক সময় অপ্রত্যাশিত, অদ্ভুত, বেদনাদায়ক অনুভূতি হওয়া নিউরোপ্যাথিক ব্যথার লক্ষণ। ঘুমের সমস্যা হলে, অত্যধিক মানসিক চাপ অনুভব করলে, সব সময় বিরক্তি দেখা গেলে নার্ভের স্বাস্থ্য কেমন আছে সেটা দেখা প্রয়োজন।
নার্ভের ব্যথা নির্ণয়: Diagnosing neuropathic pain:
নিউরোপ্যাথিক ব্যথা নির্ণয় করার জন্য প্রথমে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। আপনার চিকিৎসক রোগের ইতিহাস সম্পর্কে জানবেন এবং কিছু শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবেন। কী রকম ব্যথা, কখন ব্যথা হয়, ব্যথার তীব্রতা কেমন ইত্যাদি সম্পর্কে প্রশ্ন করবেন। এছাড়া আপনার চিকিৎসক আপনার জীবনযাত্রা, কী কী রোগে ভুগছেন, কী কী ওষুধ সেবন করেন ইত্যাদি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করবেন। এছাড়া প্রয়োজনে রক্ত ও নার্ভ পরীক্ষার পরামর্শ দিতে পারেন।
নার্ভের ব্যথার চিকিৎসা: Neuropathic pain treatment:
কী কারণে নার্ভের ব্যথা হচ্ছে তার উপর চিকিৎসা নির্ভর করে। চিকিৎসা করার সময় ব্যথা উপশম করার চেষ্টা করা হয়। নার্ভের কার্যকারিতার উন্নতি ঘটানো হয় ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করার চেষ্টা করা হয়।
নার্ভের ব্যথা কমানোর জন্য প্যারাসিটামল ও আইব্রুপ্রোফেন জাতীয় ব্যথার ওষুধ ব্যবহার করা হয়। এর সাথে অ্যান্টিসিজার (Antiseizure) জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা হয়। যদিও এই ওষুধ কিভাবে নার্ভের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে সেটা এখনো সম্পূর্ণ পরিষ্কার নয়। উদ্বেগ ও বিষণ্ণতা নিউরোপ্যাথিক ব্যথা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে, তাই মানসিক চাপ কমানোর ওষুধ ব্যবহার করা হয়।
লাইডোকেইন (Lidocaine) বা ক্যাপসাইসিন (Capsaicin) নার্ভের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। ক্রিম বা লোশন হিসেবে এই ওষুধগুলি প্রভাবিত স্থানে প্রয়োগ করা হয়। নার্ভ ব্লক করার ইনজেকশন ব্যবহার করে অস্থায়ীভাবে কিছু সময়ের জন্য ব্যথা কমানো যেতে পারে। ফিজিক্যাল থেরাপি নার্ভের ব্যথা ও অস্বস্তি দূর করতে সাহায্য করে। বিভিন্ন প্রকার ম্যাসেজ ও ব্যায়ামের সাহায্যে ফিজিক্যাল থেরাপি করা হয়।
কিছু ক্ষেত্রে অস্ত্র প্রচারের সাহায্যে নিউরোপ্যাথিক ব্যথা দূর করা হয়। একজন সার্জেন নির্দিষ্ট কোন স্নায়ুকে অস্ত্রোপচারের সাহায্যে ঠিক করেন বা অপসারণ করেন। এছাড়া মনোবিদের কাছে কাউনসিলিং করলেও উপকার হতে পারে। মানসিক চাপ মোকাবেলা করতে পারলে নার্ভের ব্যথা নিয়ন্ত্রণে থাকে।
আগে আলোচ্য চিকিৎসায় কাজ না হলে আপনার চিকিৎসক মেরুদণ্ড, পেরিফেরাল স্নায়ু ও মস্তিষ্কে উদ্দীপনা দিয়ে চিকিৎসা করার কথা বলতে পারেন।
তথ্যসূত্র: