Healthy Lifestyle স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রারূপ চর্চা Beauty Tips

পিরিয়ড ক্লিয়ার হয় না কেন? Less Bleeding in Period:

দেহের ওজনের পরিবর্তন, ব্যায়াম, মানসিক চাপ ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে মাসিক ঋতুস্রাব বা পিরিয়ড প্রভাবিত হয়। স্বাভাবিকের চেয়ে কম ঋতুস্রাব হওয়া অর্থাৎ পিরিয়ড ক্লিয়ার না হওয়া তেমন কোন জটিল সমস্যা নয়। মাসিক ঋতুস্রাবের সময় রক্তপাত অল্প কম বা বেশি হওয়ার একদম স্বাভাবিক। এই প্রতিবেদনে, পিরিয়ড ক্লিয়ার না হওয়ার লক্ষণ, কারণ ও চিকিৎসা নিয়ে আলোচনা করা হল।

প্রতি পিরিয়ডের প্রায় দুই থেকে তিন টেবিল চামচ পরিমাণ রক্ত নিঃসৃত হয়। ব্যক্তি বিশেষে রক্তের পরিমাণ কম বা বেশি হতে পারে। কতগুলি স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার হচ্ছে সেটা খেয়াল রাখলে ঋতুস্রাবের পরিমাণ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। মাসিক পিরিয়ডের সময় স্বাভাবিকের চেয়ে কম পরিমাণ স্যানিটারি ন্যাপকিনের প্রয়োজন হলে, ঋতুস্রাব কম হচ্ছে বলা যেতে পারে। প্রথম দুইদিন রক্ত কম নিঃসৃত হলে বুঝতে হবে যে ঋতুস্রাব কম হচ্ছে। ফোঁটা ফোটা রক্তপাত হওয়া পিরিয়ড ক্লিয়ার না হওয়ার অন্যতম লক্ষণ। এছাড়া পিরিয়ড ক্লিয়ার না হলে, বেশ কিছু প্রিমেনস্ট্রুয়াল সিনড্রোম দেখা যায় যেমন, পিঠে ব্যথা, মেজাজ পরিবর্তন, জরায়ুর খিচুনি ইত্যাদি।

সাধারণত গর্ভধারণ করলে মাসিক ঋতুস্রাব সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু বেশ কিছু ক্ষেত্রে গর্ভধারণ করার পরও অল্প পরিমাণ রক্তপাত হতে পারে। এটা আসলে ইমপ্লান্টেশন অর্থাৎ জরায়ুর মধ্যে ভ্রূণ স্থাপিত হওয়ার কারণে হওয়া রক্তপাত। এই রক্তপাত সাধারণত দুই তিন দিন বা তার কম সময় ধরে থাকে। অনেকে গর্ভ রোপনের রক্তপাতকে হালকা ঋতুস্রাব করে ভুল করে।

একই ব্যক্তির বিভিন্ন বয়সে ঋতুস্রাবের পরিমাণ আলাদা হতে পারে। যখন প্রথম মাসিক শুরু হয়, তখন রক্তপাত কম হয়, শুধুমাত্র দাগ দেখা যেতে পারে। আবার 20 থেকে 30 বছর বয়সে পিরিয়ড স্বাভাবিক ও নিয়মিত হয়। 30 থেকে 40 বছর বয়সে পিরিয়ডের দিন কমে যায় কিন্তু রক্তপাত বেশি হতে পারে। মেনোপজ অর্থাৎ মাসিক স্থায়ীভাবে বন্ধ হওয়ার আগে ঋতুস্রাব কমে যায় ও অনিয়মিত হয়ে পড়ে।

শরীরের ওজন ও শরীরে উপস্থিত চর্বির পরিমাণ, ঋতুস্রাবকে প্রভাবিত করে। যাদের ওজন কম বা যারা দ্রুত ওজন কমিয়ে ফেলেছেন, তাদের রক্তস্রাবের পরিমাণ কম হয়। শরীরের চর্বির পরিমাণ খুব কমে যাওয়ার কারণে এমন হতে পারে। অত্যধিক ব্যায়াম করলেও, পিরিয়ড কম হতে পারে বা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

সন্তান জন্মের পর থেকে, সন্তানকে টানা বুকের দুধ খাওয়ালে মাসিক ঋতুস্রাব বন্ধ থাকে। দুধ উৎপাদনে সাহায্যকারী হরমোন ডিম্ব-স্ফোটনে বাধা দেয়, ফলে পিরিয়ড বন্ধ হয়ে থাকে। তবে এটা বেশিদিন স্থায়ী হয় না, তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে পিরিয়ড শুরু হয়ে যেতে পারে।

অতিরিক্ত চিন্তা, মানসিক চাপ, ঋতুস্রাব নিয়ন্ত্রণকারী হরমোন গুলির উপর প্রভাব ফেলে। এর ফলে পিরিয়ডের সময় রক্তস্রাব কম হতে পারে। মানসিক চাপ কমে গেলে পিরিয়ড আবার স্বাভাবিক হয়ে যায়।

জন্ম নিয়ন্ত্রণের পিল খেলেও পিরিয়ডের উপর প্রভাব পড়ে। ডিম্ব উৎপাদন না হলে জরায়ুতে পুরু আস্তরণ তৈরি হয় না, ফলে হালকা পিরিয়ড হতে পারে। পিরিয়ডের সময় অত্যধিক রক্তস্রাব হলে, রক্তস্রাব কমানোর জন্য অনেক সময় জন্মনিয়ন্ত্রণের পিল খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

হাইপার থাইরয়েডিজম অর্থাৎ থাইরয়েডের গ্রন্থি অতি সক্রিয় হলে, বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি হয়। এক্ষেত্রে পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যেতে পারে বা রক্তস্রাবের পরিমাণ কমে যেতে পারে। পিরিয়ড নিয়ন্ত্রণে থাইরয়েড গ্রন্থি ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।

পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম হল একটি হরমোন জনিত সমস্যা, যা মহিলাদের মধ্যে দেখা যায়। ডিম্বাশয় দ্বারা পুরুষ হরমোনের উৎপাদন বেশি হলে প্রজনন হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়, ফলে এই সিনড্রোম দেখা যায়। পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম হলে ব্রণ, তৈলাক্ত ত্বক, ওজন বৃদ্ধি, শরীরে অতিরিক্ত লোম, চুল পাতলা হওয়া ইত্যাদি সমস্যার সাথে পিরিয়ডের সমস্যাও হতে পারে।

হালকা ঋতুস্রাব হলে অর্থাৎ রক্তস্রাব কম হলে প্রথমে কয়েক মাস, মাসিক চক্রটিকে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। যদি কোন অপ্রত্যাশিত পরিবর্তন দেখা যায়, সেক্ষেত্রে অবশ্যই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। কেন ঋতুস্রাব কম হচ্ছে সেটা জানার জন্য বেশ কিছু পরীক্ষার করার প্রয়োজন হতে পারে।

ঋতুস্রাব স্বাভাবিক রাখতে বেশ কয়েকটি বিষয়ের দিকে নজর দিতে হবে। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা খুব গুরুত্বপূর্ণ। পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করলে পিরিয়ড স্বাভাবিক রাখা যায়। ইটিং ডিজঅর্ডার থাকলে একজন থেরাপিস্টের পরামর্শ নিতে হবে। এছাড়া পিরিয়ড স্বাভাবিক রাখতে মানসিক চিন্তা কমাতে হবে। ব্যায়াম, প্রাণায়াম, ধ্যান ইত্যাদি আমাদের মানসিক চিন্তা কমায়। মন ভাল রাখতে হাসতে হবে। এর সাথে প্রয়োজন পর্যাপ্ত ঘুম। পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম থাকলে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিতে হবে। এক্ষেত্রে আপনার ডাক্তার জন্মনিয়ন্ত্রণের পিল বা প্রজেস্টেরণ থেরাপির পরামর্শ দিতে পারেন। থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে অবশ্যই চিকিৎসা করাতে হবে। মানসিক চাপ কমাতে আন্টি অ্যাংজাইটির ওষুধ খেতে হতে পারে। সার্ভিক্যাল স্টেনোসিস নামক রোগ থেকে কম ঋতুস্রাবের সমস্যা হলে, অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে।