রক্ত পরীক্ষা Blood Test

প্লেটলেট কাউণ্ট বা অণুচক্রিকার সংখ্যা গণনা। Platelet Count Test

প্লেটলেট কাউণ্ট বা অণুচক্রিকার সংখ্যা গণনা। Platelet count blood test

প্লেটলেট গণনা কি? What is the platelet count?

মানুষের রক্তের মধ্যে তিন ধরনের রক্ত কণিকা থাকে। রোহিত রক্ত কণিকা শ্বেত রক্ত কণিকা এবং অণুচক্রিকা অর্থাৎ প্লেটলেট। এটি সর্বাপেক্ষা ছোট আকারে রক্ত কণিকা। সাধারণ অবস্থায় এই রক্তকণিকা নিষ্ক্রিয় অবস্থায় রক্তবাহ অর্থাৎ শিরা ও ধমনীর মধ্যে প্রবাহিত হয়। কিন্তু শরীরের কোন স্থানে আঘাত পেলে বা কেটে গেলে কেটে গিয়ে রক্তপাত হতে শুরু করলে প্লেটলেট নামক রক্তকণিকা নিষ্ক্রিয় থেকে সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং রক্ত তঞ্চন ঘটিয়ে অর্থাৎ রক্তকে জমাট বাঁধিয়ে রক্তপাত বন্ধ করে।

প্লেটলেট কাউণ্ট হল একটি সাধারণ রক্ত পরীক্ষা যার সাহায্যে রক্তে কতগুলি প্লেটলেট রয়েছে, সেটা পরিমাপ করা হয়। অস্থি মজ্জা থেকে রক্ত কণিকা তৈরি হয়। প্লেটলেটগুলি বা থ্রোম্বোসাইটগুলি হ’ল ক্ষুদ্র রক্তকণিকা যা অস্থি মজ্জার (মেগাক্যারিওসাইটস) কোষ থেকে সৃষ্টি হয়। কোন কারণে শরীরের কোন অংশ কেটে গেলে বা রক্ত নালীর ক্ষতি হলে প্লেটলেটগুলি রক্ত জমাট বাঁধিয়ে রক্তের পিণ্ড তৈরি করে। এক ফোঁটা রক্তে কয়েক হাজার প্লেটলেট থাকে।

রক্তের টোটাল কাউণ্ট নামক পরীক্ষার মধ্যে, শ্বেত রক্তকণিকা, লোহিত রক্তকণিকা এবং অণুচক্রিকা বা প্লেটলেটের সংখ্যা গণনা করা হয়। রক্তের টোটাল কাউণ্ট নামক পরীক্ষার একটি অংশ হল প্লেটলেট কাউণ্ট বা অণুচক্রিকার সংখ্যা গণনা।

প্লেটলেট পরীক্ষার উদ্দেশ্য। Purpose of the Platelet Count test.

প্লেটলেট গণনা করার উদ্দেশ্য হ’ল রক্তের জমাট বাঁধার ক্ষমতার মূল্যায়ন করা। প্লেটলেট গণনা পরীক্ষাটি টোটাল কাউণ্ট পরীক্ষার অন্তর্ভুক্ত হলেও, এই পরীক্ষাটি আলাদা ভাবে নিজেই করা যায়।

দেহের সাধারণ স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার সময়ও এই পরীক্ষাটি করা হতে পারে। প্লেটলেট গণনা করার নির্দেশ দেওয়া হয়,প্লেটলেটের সংখ্যা কম বা বেশি মনে হলে বা প্লেটলেট কম বা বেশি থাকার কোন রোগ লক্ষণ দেখা গেলে, অস্ত্রোপচারের আগে রক্তপাতের সম্ভাবনা কতটা সেটা বিচার করতে, রক্ত পাতলা করার ওষুধ খেলে বা কেমোথেরাপি নিলে,অতিরিক্ত রক্তপাত হলে বা রক্ত জমাট বাঁধার কারণ খুঁজতে। রক্ত জমাট বাঁধার কারণ সনাক্ত হলে, তার চিকিৎসা করার সময় রোগীর রোগ কতটা উপশম হয়েছে সেটা সম্পর্কে ধারণা পেতেও এই টেস্ট করা হয়।

রক্তে প্লেটলেট এর স্বাভাবিক সংখ্যা। What is the normal platelet count range chart?

 

প্রতি মাইক্রো লিটার রক্তে প্লেটলেট বা অণুচক্রিকার স্বাভাবিক সংখ্যা হল, 1 লক্ষ 50 হাজার থেকে 4 লক্ষ 50 হাজার পর্যন্ত। প্লেটলেটের সংখ্যা, স্বাভাবিকের থেকে বেশি থাকলে, থ্রমবোসাইটোসিস বলা হয় এবং স্বাভাবিকের থেকে কম থাকলে থ্রমবোসাইটোপেনিয়া বলা হয়।

প্লেটলেট গণনা করার আদর্শ পদ্ধতি। Standard method of platelet count.

প্লেটলেট গণনা করার জন্য বর্তমানে সেল কাউন্টার নামক আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করা হয়। এছাড়া হিমোসাইটোমিটার নামক একটি কাঁচ নির্মিত যন্ত্রের সাহায্যে প্লেটলেটের সংখ্যা নিখুঁতভাবে গণনা করা সম্ভব। কিন্তু এই পদ্ধতি একটু সময় সাপেক্ষ। রক্তের সাধারণ স্মেয়ার থেকে ডিফারেন্সাল কাউন্ট পরীক্ষা করার সাথে সাথে প্লেটলেটে পরিমাণ সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা পাওয়া যায়।

প্লেটলেট কাউন্ট করার জন্য রক্তের নমুনা সংগ্রহ। Collection of blood sample for Platelet Count.

সাধারণত হাতের শিরা থেকে রক্ত সংগ্রহ করা হয়। বাহুতে একটি রাবার ব্যান্ড বাধা হয় এবং সিরিঞ্জের সাহায্যে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। আঙ্গুলে সূচ বিদ্ধ করে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা উচিত নয়। রক্ত সংগ্রহ করার দু’ঘণ্টার মধ্যে অবশ্যই প্লেটলেট কাউন্ট পরীক্ষাটি সম্পন্ন করতে হবে। এছাড়া রক্ত যাতে জমাট বেঁধে না যায়, তার জন্য রক্ত তঞ্চন রোধী পদার্থ ব্যবহার করতে হবে

প্লেটলেট গণনার প্রস্তুতি। How to prepare for a platelet count?

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্লেটলেট গণনার জন্য তেমন কোন প্রস্তুত নেওয়ার দরকার হয় না। কিছু ক্ষেত্রে, পরীক্ষার আগে উপবাস করতে হয়। খাদ্য বা কোন বিশেষ পানীয় গ্রহণ করা চলে না। তবে জল খাওয়া যেতে পারে। আপনার ডাক্তার বিশেষ কিছু ওষুধ বন্ধ করতে বলতে পারেন। কী কী ওষুধ সেবন করছেন, সেটা আপনার ডাক্তার এবং প্যাথলজি ল্যাবরেটরিতে অবশ্যই জানান।

পরীক্ষার ফলাফলের ব্যাখ্যা। What do Platelet Count results mean?

প্রাথমিকভাবে রক্তের মধ্যে অস্বাভাবিক কোষ থাকলে প্লেটলেটের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। এছাড়া ধারাবাহিক অসুস্থতা থাকলে, অ্যানিমিয়া হলে, দেহের মধ্যে কোন ইনফেকশন বা প্রদাহ হলে, কোন অঙ্গ ফুলে ওঠা অর্থাৎ ইনফ্লামেশন ইত্যাদি হলে এবং ক্যান্সার হলে প্লেটলেটের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।


পেট্রলেটের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণেও কিছু রোগের সৃষ্টি হতে পারে। হাত ও পায়ের রক্ত নালীর মধ্যে রক্ত জমাট বেঁধে যেতে পারে। এর ফলে হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোক হতে পারে।


প্লেটলেট এর সংখ্যা কমে যেতে পারার পারে বিভিন্ন কারণে থাকে। যেমন বেশ কিছু ওষুধ প্লেটলেটের সংখ্যা কমিয়ে দিতে পারে। এছাড়া বংশগতভাবেও কোন কোন ব্যক্তির প্লেটলেট কম থাকে। লিম্ফোমা, লিউকেমিয়া ইত্যাদি ধরনের ক্যান্সারেও প্লেটের সংখ্যা কবে যেতে পারে। কেমোথেরাপি নিলে বৃক্ক অর্থাৎ কিডনিতে ইনফেকশন হলে, অতিরিক্ত মদ্যপান করলে প্লেটের পরিমাণ কমে যায়। কিছু ভাইরাল ইনফেকশন, যেমন ডেঙ্গুতে প্লেটলেট এর সংখ্যা খুব কমে যায়। এছাড়া বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ এবং সাপের বিষ রক্তের প্লেটলেট ধ্বংস করে।


প্লেটলেটের সংখ্যা কমে গেল বেশ কিছু জটিল সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। যেমন ব্রাশ করার সময় মাড়ি থেকে বা দাঁতের গোড়া থেকে রক্তপাত হতে পারে, নাকের মধ্য দিয়ে রক্তপাত হতে পারে বা খাদ্যনালীর মধ্যেও রক্তপাত হতে পারে। প্লেটলেটের সংখ্যা মাত্রাতিরিক্ত কমে গেলে প্রাণহানির সম্ভাবনা থাকে।


মন্তব্য। Remarks


রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়ার পর অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। রিপোর্ট 100% সঠিক নাও হতে পারে। কারণ পরীক্ষা করার সময় যান্ত্রিক ত্রুটি থাকে। রোগীর শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে, অন্যান্য পরীক্ষাগুলির সাথে রক্ত পরীক্ষার রিপোর্টের সঠিক মেলবন্ধন করা প্রয়োজন।