ভিটামিন A-র অভাবজনিত লক্ষণ: Vitamin A Deficiency Syndrome:
আমাদের খাদ্য তালিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল ভিটামিন। ভিটামিন হল এমন এক পুষ্টি উপাদান যা খুব অল্প পরিমাণে গ্রহণ করা হয় ও আমরা সামগ্রিকভাবে সুস্থ থাকি। ভিটামিন A হল একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন। এটি আমাদের চোখ, দৃষ্টিশক্তি ও ত্বকের স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য বিশেষভাবে প্রয়োজনীয়। আমাদের দেহে ভিটামিন A তৈরি হয় না তাই খাদ্য থেকে এই ভিটামিন গ্রহণ করতে হয়। দেহে ভিটামিন A-র অভাব হলে বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। এই প্রতিবেদনে ভিটামিন A-র অভাবজনিত লক্ষণ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
ভিটামিন A-র অভাবজনিত লক্ষণ: Vitamin A Deficiency Syndrome:
শুষ্ক ত্বক: Dry Skin
ত্বকের কোষ তৈরি ও মেরামতের জন্য ভিটামিন A খুব গুরুত্বপূর্ণ। ত্বকের প্রদাহ দূর করতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে ভিটামিন A। দেহে ভিটামিন A-র অভাব হলে একজিমা ও অন্যান্য ত্বকের রোগ হতে পারে। ভিটামিন A-র অভাবে টোড স্কিন রোগ হয় অর্থাৎ ত্বকে ফুসকুড়ি সৃষ্টি হয়ে ব্যাঙের চামড়ার মত খসখসে হয়ে যায়। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে পর্যাপ্ত ভিটামিন A গ্রহণ করলে ত্বকের সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়, বিশেষ করে একজিমার সমস্যা কমে।
রাতকানা রোগ: Night Blindness:
দেহে ভিটামিন A-র গুরুতর অভাব হলে রাতকানা রোগ হতে পারে। বেশ কিছু সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে, উন্নয়নশীল দেশগুলিতে রাতকানা রোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। একারণে আমাদের দেশে শিশু ও মহিলাদের নিয়মিত ভিটামিন A-র ওষুধ খাওয়ানো হয়। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, পর্যাপ্ত ভিটামিন A গ্রহণ করলে রাতকানা রোগ কমে, অর্থাৎ অন্ধকারে দেখার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
শুষ্ক চোখ: Dry Eyes:
বিভিন্ন কারণে ড্রাই আই-এর সমস্যা হতে পারে। তবে ভিটামিন এ-র অভাবে হলেও ড্রাই আইজ অর্থাৎ শুষ্ক চোখের সমস্যা হতে পারে। ভিটামিন A-র চরম অভাব হলে কর্নিয়া নষ্ট হয়ে যেতে পারে। চোখের মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণ অশ্রু উৎপাদিত না হলে শুষ্ক চোখের সমস্যা হয়। অশ্রু তৈরি করতে ভিটামিন A উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। ভারত, আফ্রিকা ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় বসবাসকারী শিশুদের মধ্যে ভিটামিন A-র অভাবজনিত শুষ্ক চোখের সমস্যা বেশি দেখা যায়। ভিটামিন A যুক্ত সম্পূরক খাদ্য গ্রহণ করলে এই সমস্যা কমে ও চোখের স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়।
বৃদ্ধিতে বাধা: Delayed Growth:
সে সকল শিশু পর্যাপ্ত ভিটামিন A পায় না, তাদের বৃদ্ধি ব্যাহত হতে পারে। মানবদেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য ভিটামিন A-র ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের সাথে ভিটামিন A সম্পূরক গ্রহণ করলে বৃদ্ধির হার বৃদ্ধি পায়। শিশুদের উচ্চতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও ভিটামিন A-র ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। ইন্দোনেশিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার শিশুদের উপর করা গবেষণা থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে, শিশুদের বৃদ্ধির জন্য ভিটামিন A অপরিহার্য।
বন্ধ্যত্ব ও গর্ভধারণে সমস্যা: Infertility and Trouble Conceiving:
মহিলা ও পুরুষ, উভয়ের প্রজননের জন্য ভিটামিন A প্রয়োজনীয়। গর্ভধারণে সমস্যা হলে ভিটামিন A-র অভাব আছে কিনা দেখা প্রয়োজন, কারণ ভিটামিন A-র অভাবে বন্ধ্যত্বের সমস্যা হতে পারে। এছাড়া ভ্রূণের সঠিক বৃদ্ধির জন্য ভিটামিন A-র ভূমিকা উল্লেখযোগ্য বলে প্রমাণিত হয়েছে। পুরুষদের দেহে ভিটামিন A অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবে কাজ করে ও বন্ধ্যত্বের সমস্যা কমায়। এছাড়া ভিটামিন A-র সাথে গর্ভপাতেরও সম্পর্ক আছে। বারবার গর্ভপাত হলে অবশ্যই রক্তে ভিটামিন A-র মাত্রা পরীক্ষা করা প্রয়োজন।
ক্ষত নিরাময় দেরি: Poor Wound Healing:
আঘাত লাগলে বা অস্ত্রোপচারের পর ক্ষতস্থানগুলি স্বাভাবিকভাবে সেরে ওঠার কথা। কিন্তু সেরে উঠতে দেরি হলে দেহে ভিটামিন A-র অভাব আছে কিনা দেখা দরকার। ভিটামিন A কোলাজেন তৈরিতে সাহায্য করে, এই কোলাজেন পেশি ও ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে ও ক্ষয় পূরণ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন A গ্রহণ করলে কোলাজেনের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। তাই ক্ষত নিরাময়ে সাহায্য করতে ভিটামিন A গ্রহণ করা দরকার।
গলা ও বুকে সংক্রমণ: Throat and Chest Infection:
গলা ও বুকে জীবাণু সংক্রমণ হলে দেহে ভিটামিন A-র অভাব আছে কিনা দেখা দরকার। ভিটামিন A সম্পূরক খাদ্য গ্রহণ করলে শ্বাসনালীর সংক্রমণ কমে। ফুসফুসের সংক্রমণ দূর করতে ভিটামিন A-র ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। গবেষণায় জানা গিয়েছে যে, ভিটামিন A-র অভাব হলে গলা ও ফুসফুসে জীবাণু সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে।
ব্রণ: Acne:
ভিটামিন A ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে সাহায্য করে ও প্রদাহের বিরুদ্ধে লড়াই করে। তাই ব্রণ প্রতিরোধ করতে ও ব্রণ দূর করতে ভিটামিন A উল্লেখযোগ্য। একাধিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে ভিটামিন A-র অভাবে ব্রণের সমস্যা বাড়ে। গবেষণায় এটাও প্রমাণিত হয়েছে যে, ভিটামিন A সম্পূরক গ্রহণ করলে ব্রণ-র চিকিৎসায় ভালো ফল পাওয়া যায়। বর্তমানে ভিটামিন A দ্বারা ব্রণ-র চিকিৎসা করা বেশ জনপ্রিয় একটি পদ্ধতি।
ভিটামিন A-র অভাব নির্ণয়: Diagnosis of Vitamin A Deficiency:
প্রাথমিকভাবে রোগ লক্ষণ দেখে ভিটামিন এ-র অভাব আছে কিনা সেটা সম্পর্কে ধারণা লাভ করা হয়। ভিটামিন এ-র অভাবজনিত কোন লক্ষণ দেখা গেলে রক্তে ভিটামিন এর মাত্রা পরীক্ষা করা দরকার। সাধারণত হাতের শিরা থেকে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয় ও ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করা হয়। ভিটামিন এ, ফ্যাট অর্থাৎ চর্বিতে দ্রবীভূত ভিটামিন এবং শরীরে প্রচুর পরিমাণে জমা থাকে। একারণে দেহে তীব্র-মাত্রায় ভিটামিন এ-র ঘাটতি হলে তবে রক্ত পরীক্ষা করে বোঝা যায়।
রক্তে ভিটামিন A-র স্বাভাবিক মাত্রা: Normal Level of Vitamin A in Blood:
0.30 থেকে 1.20 মিলিগ্রাম/লিটার।
তথ্যসূত্র: References:
Cleveland Clinic, Healthline.com, WebMd.com, Metropolis Healthcare e.t.c.