Healthy Lifestyle স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রাখাদ্য ও পানীয় Food & Drinksল্যাব টেস্ট Lab Test

ভিটামিন বি 12 পরীক্ষা: Vitamin B12 Test:

আমাদের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে ভিটামিন বি 12 ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। পর্যাপ্ত পরিমাণে লোহিত রক্ত কণিকা উৎপাদন করতে এবং ব্রেন ও স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকলাপ স্বাভাবিক রাখতে ভিটামিন বি 12 খুব প্রয়োজন।

যারা সুষম খাদ্য গ্রহণ করে, তাদের সাধারণত ভিটামিন বি 12 এর অভাব ঘটে না। কিন্তু যারা সুষম খাদ্য গ্রহণ করেন না, তাদের ক্ষেত্রে ভিটামিন বি 12 পরীক্ষা করে দেহে ভিটামিনের অভাব আছে কিনা সেটা জেনে নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।

আপনার ডাক্তারবাবু বিভিন্ন কারণে ভিটামিন বি 12 পরীক্ষা করতে বলতে পারেন। হাত-পা ঝিনঝিন করলে,  সঙ্গে কাঁটা ফোটার মতো অনুভূতি হলে, শরীরের ভারসাম্য রক্ষা করতে সমস্যা হলে, বুক ধরফর করলে, কোন কিছু মনে রাখতে সমস্যা হলে, হজমে সমস্যা হলে, শরীর দুর্বল হয়ে পড়লে, এই টেস্ট করা প্রয়োজন।

দেহে পারনিসিয়াস অ্যানিমিয়ার কোন লক্ষণ দেখা গেলে এই টেস্ট করা প্রয়োজন। আমাদের পৌষ্টিকতন্ত্র ভিটামিন বি 12 শোষণ করতে না পারলে এই ধরনের অ্যানিমিয়া দেখা যায়। 30 বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তিদের এই ধরনের সমস্যা দেখা যায়। পারনিসিয়াস অ্যানিমিয়ার লক্ষণ যেমন ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, হজমে সমস্যা, দেহের ত্বক ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া, জিভ, মাড়ি রক্তিম হয়ে যাওয়া ইত্যাদি। এই লক্ষণগুলি দেখা গেলে ভিটামিন বি 12 অবশ্যই পরীক্ষা করা প্রয়োজন।

আমাদের দেহ স্বাভাবিকভাবে ভিটামিন বি 12 উৎপাদন করতে পারে না। একারণে খাদ্যের মাধ্যমে আমরা ভিটামিন বি 12 গ্রহণ করি। মাছ, মাংস ও দুগ্ধজাত পদার্থে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি 12 থাকে।

বয়স্ক ব্যক্তিদের, শিশুদের, যারা কেবলমাত্র নিরামিষ খান তাদের, যাদের ডায়াবেটিস আছে, যাদের গ্যাস্ট্রিক বাইপাস সার্জারি হয়েছে, সেই সকল ব্যক্তিদের এই পরীক্ষা করা উচিত।

সদ্য যারা মা হয়েছেন, যে সকল মায়েদের স্তনপানকারী শিশু আছে তাদের অবশ্যই ভিটামিন বি 12 পরীক্ষা করা প্রয়োজন। কারণ মায়ের দেহে ভিটামিন বি 12 এর অভাব ঘটলে, শিশুর দেহও অভাব ঘটবে এবং মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের বৃদ্ধি বাধা প্রাপ্ত হবে।

কিছু ওষুধ যেমন ক্লোরামফেনিকল, প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর, কিছু অ্যান্টাসিড যেমন Pepcid, Zantac ইত্যাদি ওষুধ শরীরে ভিটামিন বি 12 এর মাত্রা কে প্রভাবিত করে। তাই দীর্ঘদিন এই জাতীয় ওষুধ গ্রহণ করলে ভিটামিন বি 12 পরীক্ষা করা প্রয়োজন।

রক্তের মধ্যে ভিটামিন বি 12 এর মাত্রা পরীক্ষা করলে, শরীরে ভিটামিন বি 12 এর পরিমাণ সম্পর্কে ভাল ধারণা পাওয়া যায়। পরীক্ষার আগে 6 থেকে 8 ঘন্টা কোন খাদ্য গ্রহণ করা উচিত নয়। চা কফিও পান করা চলে না। পর্যাপ্ত পরিমাণ জল অবশ্যই পান করা করা উচিত।

হাতের শিরা থেকে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করার জন্য প্রথমে অ্যান্টিসেপটিক লোশন দিয়ে জীবাণুমুক্ত করা হয়। এরপর বাহুতে একটি রাবার ব্যান্ড বেঁধে, সিরিঞ্জের সাহায্যে শিরা থেকে রক্ত সংগ্রহ করা হয়। পরিমিত পরিমাণ রক্ত সংগ্রহ করার পর সূচ বিদ্ধ করা স্থানে একটি আঠাযুক্ত ব্যান্ডেজ লাগিয়ে দেওয়া হয়, ফলে রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়। সংগ্রহ করা রক্তে ভিটামিন বি 12 এর মাত্রা পরীক্ষা করা হয়।

এই পদ্ধতিতে ল্যাবরেটরি অথবা বাড়িতেও পরীক্ষা করা সম্ভব। নমুনা হিসেবে মূত্র ব্যবহার করা হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মূত্রের মধ্যে এম এম এ অর্থাৎ মিথাইলমেলোনিক অ্যাসিড সনাক্তকরণের মাধ্যমে, শরীরে ভিটামিন বি 12 এর পরিমাণ সম্পর্কে ধারণা লাভ করা হয়। শরীরে ভিটামিন বি 12 এর অভাব হলে মূত্রে এম এম এ বা মিথাইলমেলোনিক অ্যাসিড এর পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।

শরীরে ভিটামিন বি 12 এর মাত্রা বেশি হলে বা কম হলে বুঝতে হবে যে, দেহে সমস্যা আছে। অ্যানিমিয়া হলে, দেহে পরজীবী অর্থাৎ প্যারাসাইট বসবাস করলে, ভিটামিন বি 12 এর মাত্রা কম হতে পারে। থাইরয়েড গ্রন্থি অতিসক্রিয় হলেও দেহে ভিটামিন বি 12 এর মাত্রা কম হয়।

দেহে ভিটামিন বি 12 এর মাত্রা বেশি হতে পারে, লিভারের রোগে, ডায়াবেটিস অর্থাৎ সুগার হলে, কিডনি বা বৃক্কের কার্যকারিতা এবং হ্রাস পেলে এবং কিছু বিশেষ ধরনের লিউকেমিয়া রোগে।

দেহে কোন সমস্যা না থাকলেও ভিটামিন বি 12 এর মাত্রা কম বা বেশি হতে পারে।

দেহে ভিটামিন বি 12 এর মাত্রা 150 পিকোগ্রাম/ মিলিলিটার (picogram/ml) এর কম হলে ভিটামিন কম আছে বলে মনে করা হয়।

ভিটামিন বি 12 এর মাত্রা 200 পিকোগ্রাম/ মিলিলিটার (picogram/ml) থেকে 600 পিকোগ্রাম/ মিলিলিটার (picogram/ml) এর মধ্যে হলে ভিটামিন স্বাভাবিক মাত্রায় আছে বলে মনে করা হয়।

ভিটামিন বি টুয়েলভ এর মাত্রা 800 পিকোগ্রাম/ মিলিলিটার (picogram/ml) এর বেশি হলে দেহে ভিটামিন বি 12 বেশি আছে বলে মনে করা হয়।

মূত্রের মধ্যে এম এম এ অর্থাৎ মিথাইলমেলোনিক অ্যাসিড এর মাত্রা 3.8 মিলিকুলম্ব (millicoulomb) এর কম থাকা উচিত। এর বেশি হলে বুঝতে হবে যে দেহে ভিটামিন বি 12 এর অভাব আছে।