Healthy Lifestyle স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রাসংবাদ News

মেমরি ট্রিকস: মনে রাখার সহজ উপায়। Memory Tricks: Easy way to memorise anything.

আমাদের মস্তিষ্কের মেমোরি অর্থাৎ স্মৃতিশক্তি সীমাহীন বলা যেতে পারে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মেমরি প্রায় 25 লক্ষ জিগাবাইট। এত বিশাল পরিমাণ তথ্য ধারণ করার ক্ষমতা দেখে অবাক হতে হয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও আমরা অনেক কিছুই মনে রাখতে পারি না। বিশেষ করে বইয়ের পড়া আমরা খুব সহজেই ভুলে যায়। বিজ্ঞানী ফ্রয়েড বলেছেন যে, আমরা মনে রাখতে চাই না তাই ভুলে যায়। কিন্তু বাস্তব অভিজ্ঞতা অন্য কথা বলছে; আমরা মনে রাখতে চাওয়া সত্ত্বেও ভুলে যায়। বিজ্ঞানী ফ্রয়েড আসলে চেতন মনের কথা বলেননি। তিনি বলেছেন, আমাদের অবচেতন মন যা মনে রাখতে চাইবে তা মনে থাকবে এবং যা ভুলে যেতে চাইবে সেটা ভুলে যাব।

সৌভাগ্যক্রমে এমন কিছু বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি আছে যার সাহায্যে আমরা আমাদের স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে পারি। মেমোরি ট্রিকস; মনে রাখার সহজ উপায় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে এই প্রতিবেদনে।

মেমরি ট্রিকস ব্যবহার করার বেশ কিছু সুবিধা আছে। পড়াশুনা করার জন্য বা কর্মক্ষেত্রে মেমরি ট্রিকসগুলি ব্যবহার করলে প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় তথ্যগুলি আরও ভালোভাবে মনে রাখা যায়। এর ফলে কাজের সময় ভুল কম হয় এবং আমাদের কাজ করার দক্ষতা বৃদ্ধি পায়। মেমোরি অর্থাৎ স্মরণ ক্ষমতা ভালো থাকলে আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ে এবং মানসিক চাপ কমে। এর ফলে আমাদের স্নায়ুতন্ত্র শান্ত থাকে এবং আমরা যে কোন চ্যালেঞ্জ কে গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত থাকতে পারি। আমরা যারা পড়াশোনা, সেলস বা ব্যবসার সাথে যুক্ত, তাদের ক্ষেত্রে ভালো মেমোরি অতিরিক্ত বেশ কিছু সুবিধা প্রদান করে। সামনের ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে যত বেশি তথ্য আমরা মনে রাখতে পারি তত সহজে সেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পর্ক তৈরি করতে পারি।

মেমরি বৃদ্ধি করার ট্রিকসগুলি ব্যবহার করার আগে মেমরি বা স্মৃতি কিভাবে কাজ করে সেটা বুঝে নেওয়া দরকার। নিউরোলজিস্টদের মতে আমাদের স্মৃতি হল অতীতে ঘটে যাওয়া ঘটনার রেকর্ড। হাভার্ড ইউনিভার্সিটি থেকে প্রকাশিত জার্নালে বলা হয়েছে যে, মেমোরি  হল প্রধানত এনকোডিং, স্টোরেজ এবং পুনরুদ্ধার এই তিনটি প্রক্রিয়ার সম্মিলিত রূপ। এনকোর্ডিং বলতে বোঝায় আমরা কিভাবে কোন কিছু শিখি বা বুঝি। যদি এই শেখা বা বোঝার সাথে আবেগকে যুক্ত করা যায় বা শেখাটা অর্থপূর্ণ বলে মনে হয়, সেক্ষেত্রে এটা মনে রাখা বেশি সহজ হয়।

স্টোরেজ বলতে আমাদের মস্তিষ্ক কতটা তথ্য কোথায় এবং কতক্ষণ সংরক্ষণ করে রাখতে পারে সেটা বোঝায়। আমাদের দুই ধরনের মেমোরি স্টোর আছে; স্বল্প মেয়াদি মেমোরি এবং দীর্ঘমেয়াদি মেমরি। স্বল্প মেয়াদি মেমরি 15 থেকে 20 সেকেন্ড স্থায়ী হয় এবং দীর্ঘমেয়াদি মেমরি কয়েক মিনিট থেকে সারা জীবনব্যাপী স্থায়ী হতে পারে। আমাদের মস্তিষ্ক সকল তথ্য প্রাথমিকভাবে, স্বল্প মেয়াদি মেমোরি হিসাবে অস্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করে। এরপর এই সকল তথ্যের মধ্যে প্রয়োজনীয় তথ্যগুলি দীর্ঘমেয়াদী মেমরিতে স্থানান্তরিত হয়।

মেমোরি পুনরুদ্ধার হল মস্তিষ্কে সংরক্ষিত তথ্যের ভাণ্ডার থেকে নির্দিষ্ট কোন তথ্যকে খুঁজে বের করার প্রক্রিয়া। এটি স্মৃতি বা মনে রাখা প্রক্রিয়ার চূড়ান্ত পর্যায়ে।

মনে রাখার প্রক্রিয়াকে সবল করার জন্য বেশ কিছু কৌশল আমরা অবলম্বন করতে পারি। মনে রাখার বিজ্ঞানসম্মত কৌশলগুলি নিয়ে আলোচনা করা হল।

আমাদের মস্তিষ্ক স্বাভাবিকভাবেই কানে শোনা তথ্যের চেয়ে চোখে দেখা তথ্যগুলি বেশি ভালোভাবে মনে রাখে। এছাড়া আমরা কোন কিছু শেখার সময়, যত বেশি জ্ঞানেন্দ্রিয়কে ব্যবহার করি তত বেশি মনে থাকে। রেডিওতে কোন ঘটনা শুনলে যতটা মনে থাকে তার থেকে বেশি মনে থাকে টিভি বা মোবাইলে সেই ঘটনাটিকে দেখলে।

কোন কিছু মনে রাখার জন্য এই বিষয়টা আমরা কাজে লাগাতে পারি। ধরা যাক সকাল 10টা সময় কোন ব্যক্তিকে ফোনে কথা বলতে হবে। এটা মনে রাখার জন্য আমরা মনে মনে একটা অ্যালার্ম ঘড়ির কল্পনা করব যার মাথায় 10 AM লেখা আছে। এর সাথে আরও মনে করব যে, ঘড়িটিতে ফ্ল্যাশ লাইট জ্বলছে ও অ্যালার্ম বাজছে। এই কাল্পনিক ছবিটিতে মনঃসংযোগ করতে পারলে খুব সহজেই ফোন করার কথা মনে পড়বে।

খুব বেশি পরিমাণ তথ্য বা ঘটনা একসাথে মনে রাখা বেশ কষ্টকর। এক্ষেত্রে ঘটনাগুলিকে টুকরো করে, ছোট ছোট ঘটনা বা তথ্যে রূপান্তরিত করলে মনে রাখা সহজ হয়। এই প্রক্রিয়ার তিনটি রূপ আছে; দলবদ্ধ করা, নিদর্শন খোঁজা এবং অর্থ অনুসারে সাজিয়ে নেওয়া।

উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, কোন একটি দীর্ঘ নম্বর মনে রাখা বেশ জটিল। এক্ষেত্রে নম্বরগুলিকে কয়েকটি অংশে ভাগ করে সহজে মনে রাখা যায়।

কোন বাক্য বা বাক্যাংশ মনে রাখার অন্যতম কৌশল হল শব্দগুলিকে ছন্দবদ্ধ করে মনে করা বা শেখা। ছন্দের এই জটিল ধারাবাহিকতা, মনে রাখাকে সহজ করে তোলে।

কোন তথ্য, ঘটনা, সূত্র ইত্যাদি মনে রাখার জন্য মজাদার, অদ্ভুত গান বা কবিতা তৈরি করলে মনে রাখা সহজ হতে পারে। মুদির দোকানের লিস্ট বা স্কুলের কোন কাজ মনে রাখার জন্য ছোট জিংগেলও তৈরি করা যেতে পারে। এটা মনে রাখার একটা দারুণ উপায়।

দৈনিক একটি নির্দিষ্ট রুটিন মেনে চললে মনে করা সহজ হয়। বিশেষ করে যাদের ভুলে যাওয়ার সমস্যা আছে, তাদের ক্ষেত্রে এটা খুব ভালো কাজ করে।

উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, আমাদের অনেকের চাবি ভুল জায়গায় রাখার ভয়ানক অভ্যাস থাকে। প্রয়োজনের সময় চাবি খুঁজে পাওয়া যায় না। এক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট স্থানে চাবি রাখার অভ্যাস করলে আমরা সেটা মনে রাখতে পারি।

এটি একটি প্রাচীন কৌশল যেখানে স্মৃতিশক্তি বাড়াতে পরিচিত স্থানের ছবি মনে মনে ব্যবহার করা হয়। বিশেষ করে স্মৃতি প্রতিযোগিতায় ও মানসিক কার্যকলাপে এর গুরুত্ব প্রমাণিত। এটি ব্যবহার করার জন্য একটি পরিচিত অবস্থান যেমন আমাদের বাড়ির বিভিন্ন স্থান কল্পনা করে, সেখানে যা মনে রাখতে চাই সেটা রাখতে হবে।

উদাহরণস্বরূপ বিছানায় একটি বিশেষ বই এবং রান্নাঘরে একটি বিশেষ ফল রাখার কল্পনা করা হল। এবার তথ্যটি স্মরণ করার সময় ওই পরিচিত স্থানটি পর্যায়ক্রমে মনে করলে সম্পূর্ণ তথ্যটি মনে পড়ে যাবে।

নামের সাথে ব্যক্তিত্ব বা চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য যোগ করা একটি ব্যবহারিক ও কার্যকরী মেমরি টেকনিক। এটি অ্যাসোসিয়েটিভ মেমরি নীতিকে কাজে লাগায়। এক্ষেত্রে পরিচিত ধারণার সাথে নতুন তথ্যকে যুক্ত করা হয়, ফলে তথ্যটি সহজে সংরক্ষিত হয়।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে, যদি রাহুল বলে কোন এক ব্যক্তির সাথে দেখা করতে হয়, তাহলে তার নামের সাথে বিশেষ বৈশিষ্ট্য যুক্ত করতে হবে। যেমন সাহসী রাহুল বা অন্য কোন ব্যক্তিত্বসূচক কথা যোগ করলে খুব ভালো মনে পড়বে।

পুনরাবৃত্তি করে মনে রাখা হল একটি সহজ কৌশল। নাম, তারিখ, তথ্য, যত বেশিবার পুনরাবৃত্তি করা হয় তত ভালো মনে থাকে। একটি কবিতা বা গদ্য বারবার পড়লে, হাইলাইট করলে বা লিখলে অবশ্যই মনে থাকবে।

কোন ব্যক্তির সাথে প্রথম দেখা করার সময় তার নাম মনে রাখতে হলে বেশ কয়েকবার নামের উপর ফোকাস করতে হবে। কথোপকথনের সময় সরাসরি তার নাম ধরে সম্বোধন করলে, পরবর্তীকালে ওই ব্যক্তির কথা মনে থাকে।

Memorize Academy, Zapier.com, University of North Carolina, Magnetic Memory Method,