হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি করার উপায়। How to increase Haemoglobin?
আমরা বেঁচে থাকার জন্য অক্সিজেন গ্রহণ করি। রক্তের মধ্যে থাকা লোহিত রক্ত কণিকা এই অক্সিজেন কে সারা দেহে পরিবহন করে। লোহিত রক্ত কণিকার প্রধান উপাদান হল হিমোগ্লোবিন। কার্বন-ডাই-অক্সাইড পরিবহনেও হিমোগ্লোবিনের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। হিমোগ্লোবিনের অভাবে আমাদের দেহে বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হয়।
এই প্রতিবেদনে আলোচনা করা হল, হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি করার উপায় সম্পর্কে। হিমোগ্লোবিনের নরমাল লেভেল সম্পর্কেও জেনে নেব।
আয়রন বা লৌহ যুক্ত খাদ্য গ্রহণ: Intake of iron rich foods:
যে সকল ব্যক্তি হিমোগ্লোবিনের অভাবে ভুগছেন, তাদের খাদ্যে আয়রন যুক্ত খাদ্যের মাত্রা বৃদ্ধি করলে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি পায়। হিমোগ্লোবিনের একটি প্রধান উপাদান হল আয়রন। এই কারণে আয়রন যুক্ত খাদ্যে উপস্থিত আয়রন, হিমোগ্লোবিনের উৎপাদনে সাহায্য করে। ফলে লোহিত রক্ত কণিকার পরিমাণও বৃদ্ধি পায়।
মাছ ও মাংস, সয়াবিন, ডিম, শুকনো ফল যেমন খেজুর, ডুমুর ইত্যাদি, ব্রকলি, সবুজ পাতাযুক্ত শাকসবজি যেমন বাঁধাকপি, বিভিন্ন প্রকার শাক, বিনস যেমন শিম, বরবটি এবং বাদামে প্রচুর পরিমাণ আয়রন থাকে। পিনাট বাটার অর্থাৎ বাদাম থেকে উৎপাদিত মাখনেও পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন থাকে।
ফলেট অর্থাৎ প্রাকৃতিক ভাবে উপলব্ধ ভিটামিন B 9 গ্রহণ: Intake of folate i.e. naturally available vitamin B9:
ফলেট হচ্ছে ভিটামিন B 9 প্রাকৃতিক রূপ। এই ফলেট হিমোগ্লোবিন উৎপাদনের জন্য অতি আবশ্যক। হিম অর্থাৎ হিমোগ্লোবিনের যে অংশটি অক্সিজেন পরিবহনে প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করে, সেই হিম উৎপাদনে ফলেট সাহায্য করে। কোন ব্যক্তির দেহে ফলেট এর অভাব ঘটলে লোহিত রক্ত কণিকার উৎপাদন ব্যাহত হয় এবং ফলেটের অভাবজনিত অ্যানিমিয়া দেখা দেয়। হিমোগ্লোবিনের পরিমাণও কম হয়।
যে খাদ্যগুলি গ্রহণ করলে ফলেট এর পরিমাণ বৃদ্ধি করতে পারি সেগুলি হল;
রেড মিট, পালং জাতীয় শাক, ধান থেকে উৎপন্ন হওয়া খাদ্য সামগ্রী, বাদাম, মটর ডাল, লেটুশ শাক ইত্যাদি।
ফলেট এবং মধ্যে ফলিক অ্যাসিডের মধ্যে সামান্য পার্থক্য আছে। ফলেট ভিটামিন B 9 এর প্রাকৃতিক রূপ, কিন্তু ফলিক অ্যাসিড ভিটামিন B 9 এর কৃত্রিম রূপ। আমরা ভিটামিন B 9 এর অভাব পূরণ করতে কৃত্রিমভাবে উৎপন্ন ফলিক অ্যাসিড গ্রহণ করে থাকি। তবে সকল সময়, প্রাকৃতিক-ভাবে উপলব্ধ ফলেট গ্রহণ করা বেশি ভাল। এর কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই।
আয়রনের শোষণ বৃদ্ধি করা: Increase absorption of iron:
খাদ্যে আয়রন গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ। তবে পৌষ্টিকতন্ত্র, খাদ্যে উপস্থিত আয়রন শোষণ করতে পারছে কিনা সেটা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন C যুক্ত খাদ্য যেমন লেবু জাতীয় ফল, স্ট্রবেরি, স্যালাডে ব্যবহার করা হয় এমন শাকসবজি পৌষ্টিকতন্ত্রে আয়রন শোষণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। কৃত্রিমভাবে উৎপন্ন ভিটামিন C যুক্ত খাদ্য বা ওষুধ খেলেও আয়রন শোষণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ভিটামিন A এবং বিটা ক্যারোটিন আয়রনের শোষণ ও আয়রনের ব্যবহার বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। একারণে ভিটামিন A ও বিটা ক্যারোটিন গ্রহণ করলে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি পায়।
মাছ, প্রাণীর যকৃত, স্কোয়াস, মিষ্টি আলু, বাঁধাকপি ইত্যাদির মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন A পাওয়া যায়। এছাড়া স্বর্ণ নামক ধান অর্থাৎ গোল্ডেন রাইস থেকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন A পাওয়া যায়।
যে সকল খাদ্যের মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণ বিটা ক্যারোটিন পাওয়া যায় সেগুলি হল গাজর, মিষ্টি আলু স্কোয়াস, টমেটো, ক্যাপসিকাম, আম ইত্যাদি।
ওষুধ হিসেবে ভিটামিন A গ্রহণ করলেও আয়রন শোষণ বৃদ্ধি পায় ও শরীরে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। তবে অতিরিক্ত ভিটামিন A গ্রহণ করলে বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।
পরিপূরক আয়রন গ্রহণ: Iron Supplemental Intake:
শরীরের হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ অত্যধিক কমে গেলে, পরিপূরক আয়রন গ্রহণ করার প্রয়োজন হয়। চিকিৎসকেরা, শারীরিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে আয়রনের ডোজ ঠিক করেন। অতিরিক্ত আয়রন গ্রহণ মোটেই ভাল নয়। প্রয়োজন অতিরিক্ত আয়রন গ্রহণ করলে বিভিন্ন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সহ লিভারের রোগ হতে পারে। অতিরিক্ত আয়রন গ্রহণ করলে কোষ্ঠকাঠিন্য, ঝিমঝিম ভাব, বমি বমি ভাব ইত্যাদি দেখা যায়।
আপনার ডাক্তার আপনাকে দীর্ঘদিন ধরে আয়রনের ট্যাবলেট খেতে দিতে পারেন। এর ফলে শরীরে অভাব দূর হয় এবং হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।