যোনিতে কৃমি ও পোকার আক্রমণ: রোগ লক্ষণ, কারণ ও চিকিৎসা। Worms and Insect Invasion in Vagina: Symptoms, Causes and Treatment.
মহিলাদের যৌনাঙ্গ অর্থাৎ যোনিতে ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক বা প্রোটোজোয়ার সংক্রমণ সাধারণ বিষয়। কিন্তু অনেক সময় যোনিতে কৃমি বা পোকার আক্রমণ হতে পারে। বিশেষ করে গ্রীষ্ম প্রধান অঞ্চলে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। তবে এই বিষয় নিয়ে তেমন কোন আলোচনা শুনতে পাওয়া যায় না। এই প্রতিবেদনে, যোনিতে কৃমি ও পোকার আক্রমণ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
যোনিতে দীর্ঘমেয়াদি রোগ ব্যাধির চিকিৎসা করার সময় ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, প্রোটোজোয়া ইত্যাদির সংক্রমণের কথা চিন্তা করা হলেও, কৃমি বা পোকার সংক্রমণের কথা মাথায় আসে না। যোনিতে কৃমি ও পোকার আক্রমণের সম্ভাবনা অস্বাভাবিকভাবে উপেক্ষা করা হয়। আর এর ফলে রোগীর স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটতে থাকে।
যোনিতে কৃমি ও পোকার আক্রমণের লক্ষণ: Symptoms of Worm and Insect Invasion in Vagina:
সাধারণভাবে যোনিতে কৃমি বা পোকার আক্রমণ হওয়ার কথা নয়। তবে পেটের মধ্যে কৃমির সংক্রমণ হলে অনেক সময় পেটের কৃমি যোনিতে প্রবেশ করে বসবাস করতে শুরু করে। পেটে বিভিন্ন ধরনের কৃমির সংক্রমণ হতে পারে। পেটে কৃমির সংক্রমণ হলে পেট ব্যথা, পেটে অস্বস্তি, ঝিমঝিম ভাব, বমি বমি ভাব, ক্লান্তি, রক্তাল্পতা, অ্যালার্জি, ওজন কমে যাওয়া ইত্যাদির রোগ লক্ষণ দেখা যায়।
যোনিতে কৃমি বা পোকার সংক্রমণ হলে যৌনাঙ্গের ত্বকের গঠনের পরিবর্তন ঘটে ও প্রদাহ সৃষ্টি হতে পারে। যোনির ত্বকে বসবাস করার ফলে ও ডিম পাড়ার কারণে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা উদ্দীপিত হয় ও অ্যালার্জির সমস্যার সৃষ্টি করে। পরজীবী পোকা বা কৃমির দেহ নিঃসৃত বিষাক্ত পদার্থের কারণে এই সমস্যা তৈরি হয়। আমাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা পোকা ও কৃমির বিরুদ্ধে লড়াই করে প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করে।
কৃমি বা পোকার আক্রমণের সাথে সাথে ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাকের সংক্রমণও হতে পারে। সেক্ষেত্রে আরও কিছু উপসর্গ যেমন যোনিতে চুলকানি, স্রাব, যোনি লাল হয়ে যাওয়া ইত্যাদি রোগ লক্ষণ দেখা যায়। দীর্ঘদিন ধরে যোনিতে কৃমি বা পোকা বসবাস করলে সমস্যার জটিলতা আরও বৃদ্ধি পায়। এছাড়া পিরিয়ডের আগে থুতনিতে ও গালের নিচের অংশে ব্রণ ফুসকুড়ি ইত্যাদি হতে পারে, অতিরিক্ত মানসিক চাপের সমস্যাও দেখা যেতে পারে।
অ্যামাজন থেকে কিনুনhttps://amzn.to/3CfRyc8 V18 Vaginal Hygiene Wash for Women – Feminine Intimate Care with Strawberry Scent – Lactic Acid, Odor Control, & pH Balance – Gentle Daily Wash for Vagina, Genital Dryness, & Itching Relief, 100ml
যোনিতে কৃমির আক্রমণ: Worm Invasion in the vagina:
যোনিতে সবথেকে বেশি যে কৃমির সংক্রমণ দেখা যায় সেটি হল কুচো কৃমি অর্থাৎ এন্টারোবিয়াস ভার্মিকুলারিস (Enterobius Vermicularis)। এই কৃমি সাধারণত অন্ত্রে বসবাস করে এবং রাত্রে মলদ্বার দিয়ে বাইরে এসে পায়ুর ত্বকে ডিম পাড়ে। অনেক সময় এই কৃমি যোনিতে প্রবেশ করে। এই কৃমির আক্রমণ সনাক্ত করার জন্য মলের RE টেস্ট বা টেপ টেস্ট করতে হয়। এছাড়া যোনির ত্বকে কৃমি দেখা যেতে পারে।
অ্যাসকারিস লুম্র্রিকয়ডিস (Ascaris Lumbricoides) নামক কৃমিও যোনিতে সংক্রমণ ঘটাতে পারে। এই কৃমি আকারে কুচো কৃমির চেয়ে বেশ বড়। যোনির ত্বকের নমুনা মাইক্রোস্কোপে পরীক্ষা করলে এই কৃমির ডিম দেখা যেতে পারে। অনেক সময় যোনিতে বড় কৃমি দেখা যেতে পারে। সংক্রমণের তীব্রতা বেশি হলে কৃমি জরায়ু পর্যন্ত পৌঁছে যেতে পারে ও সার্ভিক্যাল অ্যাসকারিয়েসিস রোগ সৃষ্টি করতে পারে। এই কৃমির সংক্রমণ সনাক্ত করার জন্য যোনি পরীক্ষা করতে হয় ও যোনির ত্বকের স্মেয়ার পরীক্ষা করার প্রয়োজন হয়।
আফ্রিকা মহাদেশের গ্রামীণ মহিলাদের যোনিতে সিস্টোসোমা হেমাটোবিয়াম (Schistosoma haematobium) নামক কৃমির সংক্রমণ দেখা যায়। তবে আমাদের দেশে এই কৃমির সংক্রমণ দেখা যায়না বললেই চলে।
যোনিতে কৃমির আক্রমণের চিকিৎসা: Treatment of Vaginal Worm Invasion
পেটের কৃমির চিকিৎসা মতো একই রকম ভাবে যোনির কৃমির চিকিৎসা করা হয়। সাধারণত অ্যালবেন্ডাজোল, মেবেন্ডাজোল, পাইরেন্টাল পামওয়েট (pyrantel pamoate), প্রেজিকুয়ানটেল (Praziquantel) ইত্যাদি ঔষধ ব্যবহার করে চিকিৎসা করা হয়। পরিবারের সকল সদস্যকে একসাথে ওষুধ সেবন করতে হবে। 14 দিন পর আবার একবার ওষুধ খেতে হবে। এই নিয়ম মানলে তবে কৃমি দূর হবে। ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
যোনিতে পোকার আক্রমণ: Insect Invasion in the vagina
কখনো কখনো যোনিতে পোকামাকড় প্রবেশ করে কামড়াতে পারে। যেহেতু যোনির আশপাশ বেশিভাগ সময় আর্দ্র থাকে তাই পিউবিক এলাকা থেকে পোকামাকড় যোনিতে প্রবেশ করতে পারে। যোনির মধ্যে পোকা কামড় দিলে অত্যধিক জ্বালাপোড়া করে। সাধারণত ছারপোকা, মাইট, মাকড়সা, উকুন ও অন্যান্য পোকামাকড় যোনিতে প্রবেশ করতে পারে।
পিউবিক অঞ্চলে উকুন থাকা খুব সাধারণ একটা সমস্যা। এই উকুনগুলি অনেকটা মাথার উকুনের মতো তবে আকারে একটু ছোট হয়। যৌনাঙ্গের লোম, বগলের লোম, গোঁফ দাড়ি, চোখের পাতা ইত্যাদি স্থানে এই উকুন বসবাস করে। এই উকুন মানুষের রক্ত খায় ও তীব্র চুলকানি সৃষ্টি করে।
একটি বিশেষ ধরনের মাইট আছে যা আমাদের দেহে চুলকানি রোগ সৃষ্টি করে। এটি সাধারণত স্কেবিস নামে পরিচিত। এই মাইট গুলি যোনির ভালভা, যোনিপথ, ক্লিটোরিস ইত্যাদি স্থানে ক্ষত সৃষ্টি করতে পারে, ফলে চুলকানি হয়। অনেক সময় ফুসকুড়ি সৃষ্টি হয়, লাল হয়ে যায়, জ্বালা ও ব্যথা হয়।
ট্রাইকোমোনাস ভ্যাজাইনেলিস নামক পরজীবী যোনিতে সংক্রমণ ঘটাতে পারে। এই পরজীবী গুলি খালি চোখে দেখা যায় না। মহিলাদের যোনিপথ, জরায়ু মুখ এবং মূত্রনালিতে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ঘটে। পুরুষদের লিঙ্গেও সংক্রমণ হতে পারে। এই পরজীবীর সংক্রমণ হলে যোনিতে চুলকানি, জ্বালা, দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব, যোনিপথে তীব্র মাছের গন্ধ ইত্যাদি রোগ লক্ষণ দেখা যায়।
যোনিতে মইয়েসিস (Myiasis) অর্থাৎ মাছির সংক্রমণ হতে পারে। এই ধরনের সংক্রমণ খুব বিরল অর্থাৎ খুব কম ক্ষেত্রে দেখা যায়। এক্ষেত্রে যোনির মধ্যে মাছি প্রচুর পরিমাণ ডিম পাড়ে এবং ডিম থেকে উৎপন্ন লার্ভা যোনি থেকে পুষ্টি সংগ্রহ করে। মূত্রনালি, যোনি গহ্বর, ক্লিটোরিস, জরায়ু, যোনি-দ্বার ইত্যাদি স্থানে সংক্রমণ ঘটে। যোনিতে কোনো ক্ষত থাকলে এই রোগে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
যোনিতে পোকার আক্রমণের চিকিৎসা: Treatment of Vaginal Insect Invasion
স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা হল এই ধরনের সমস্যা দূর করার প্রধান উপায়। পরিষ্কার বস্ত্র ও অন্তর্বাস পরিধান করা উচিত। নিয়মিত জল দিয়ে বা ভি ওয়াস দিয়ে যোনি পরিষ্কার করতে হবে। বাড়ির পরিবেশ স্বাস্থ্যকর রাখা উচিত। যোনিতে পোকামাকড় প্রবেশ করলে সরাসরি হাত দিয়ে বাইরে বের করতে হবে। পোকাতে কামড় দিলে অ্যান্টিবায়োটিক ক্রিম ব্যবহার করা দরকার। প্রয়োজনে অ্যান্টি অ্যালার্জিক ওষুধ সেবন করতে হবে।
উকুনের সমস্যা দূর করার জন্য বিশেষ ধরনের উকুন মারা শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে। স্কেবিসের সংক্রমণ হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে ত্বকে ওষুধ লাগাতে হবে। ট্রাইকোমোনাস নামক পরজীবীর সংক্রমণ দূর করার জন্য পরজীবী ধ্বংসকারী ওষুধ সেবন করতে হবে। মইয়েসিস অর্থাৎ মাছের সংক্রমণ হলে চিমটি ব্যবহার করে মাছির লার্ভা দূর করতে হবে এবং তার সাথে অ্যান্টি প্যারাসাইটিক ও অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ ব্যবহার করতে হবে। প্রয়োজনে ক্ষতস্থান অস্ত্রোপচার করে পরিষ্কার করতে হবে।
তথ্যসূত্র:
MedicineNet, JsciMed Central, National Institute of Health, Unlimit Health, Science Direct, Lippincott, etc.